পয়সার গরম তো জীবনে অনেক দেখলেন । কিন্ত বিদ্যার এমন গরম দেখেছেন না শুনেছেন কখনও ? সবটা শুনলে মাথা ঝিমঝিম করবে আপনার, হাত পাও অবশ হয়ে যেতে পারে বৈকি । এক জীবনে এত পড়াশোনা কোন রক্ত মাংসের মানুষ করতে পারেন ? না পড়লে বিশ্বাস হবে না ; তাও আবার সেই ভদ্রলোক যদি ভারতীয় হন !
ইনিই হলেন ভারতবর্ষের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি ; যাকে হয়ত আপনি, আমি চিনি না-
মারাঠি এই ভদ্রলোকের নাম শ্রীকান্ত জিচকার । তার পড়াশোনার জীবনটা একবার হাল্কা করে চোখ বুলিয়ে নিন শুধু । তাহলেই বুঝবেন, ভদ্রলোক কি কাণ্ডটাই না করেছেন !
- (১) জীবন শুরু 'M.B.B.S.' ও 'M.D.'- এ' দিয়ে ।
- (২) এরপর 'L.L.B.' করলেন । সাথে করলেন 'International Law'-এর উপর স্নাতকোত্তর ।
- (৩) এরপর 'Business Management'-এর উপর 'Diploma' ; সাথে 'M.B.A.' ।
- (৪) এরপর 'Journalism' নিয়ে স্নাতক ।
এতদূর পড়ার পর আপনার যখন মনে হচ্ছে, লোকটা পাগল নাকি ? তখন আপনাকে বলতেই হচ্ছে, এ তো সবে কলির সন্ধ্যে । এখনো গোটা রাত বাকি ।
এই ভদ্রলোকের শুধু স্নাতকোত্তর 'ডিগ্রী'ই আছে দশটা বিষয়ের উপর । স্নাতকোত্তরের বিষয়ের তালিকাটা একবার দেখুন-
- (১) 'Public Administration'
- (২) 'Sociology'
- (৩) 'Economics'
- (৪) 'Sanskrit' (ডি.লিট)
- (৫) 'History'
- (৬) 'English'
- (৭) 'Philosophy'
- (৮) 'Political Science'
- (৯) 'Encient India History', 'Culture' and 'Arciolog'
- (১০) 'Cytology'
উপরের যতগুলো বিষয় দেখছেন সব কটিতেই প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে স্নাতকোত্তর এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী তিনি । সব মিলিয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে ও প্রতি শীতেই উনি কোন না কোন স্নাতকোত্তরের বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন ।
মাথা ঝিমঝিম করছে তো আপনার ? তা মাথার আর দোষ কি বলুন ? তবে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার আগে একবারটি শুধু শুনে যান- এতসব পড়তে পড়তে ওনার যখন একঘেঁয়েমি লাগছিল তখন ঠিক করলেন, এবার একটু স্বাদ বদলানো যাক ।
স্বাদ বদলাতে আমি-আপনি বেড়াতে যাই আর উনি 'I.P.S.' পরীক্ষায় বসলেন এবং পাশ করলেন । সেটা ১৯৭৮ সাথে । কিন্তু পোষাল না চাকরীটা । ফলে সেটা ছেড়ে দিয়ে বসলেন 'I.A.S.' পরীক্ষায় । ১৯৮০ সালে উনি 'I.A.S.' হলেন ।
নটে গাছটা তাহলে মুড়োল শেষ অবধি ? আজ্ঞে না, মুড়োয় নি এখনো । চারমাসের মধ্যে 'I.A.S.'- এর চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের বিধান সভা ভোটে লড়বেন বলে । ১৯৮০ সালে উনি যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন ওনার বয়স সবে ২৫ বছর । উনি হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক ।
সবই হল যখন, তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকী থাকে কেন ? সেটাও হলেন এবং একটা কিংবা দু'টো দপ্তরের নয়, একেবারে ১৪ টা দপ্তরের । ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্যও নির্বাচিত হলেন ।
ওনার এই ‘সামান্য’ কয়েকটি গুণ ছাড়াও উনি-
- ■ অসাধারণ চিত্রশিল্পী ।
- ■ পেশাদার আলোকচিত্রকর ।
- ■ মঞ্চাভিনেতা ।
- ■ সখের বেতার চালক ।
এছাড়া উনি জ্যোতিষশাস্ত্রেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন । পরে উনি 'সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ' ও 'ইউনেস্কো'তে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে মাত্র ৫২,০০০ বই রয়েছে ওনার । ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ ওনাকে 'ভারতবর্ষের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি'র শিরোপা দিয়েছে । ১৯৮৩ সালে উনি ‘বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ’ হিসেবে নির্বাচিত হন ।
২০০৪ সালে এক পথ দুর্ঘটনায় ওনার মৃত্যু হয় । তখন বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর । তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে একটি জ্বলন্ত নক্ষত্র নিভে যায় । তিনি মৃত্যুর আগে এই শিক্ষা দিয়ে যান, 'যার যত জ্ঞান ; তার অহংকার তত কম' ।
তথ্য :-সংগৃহিত গুগল ও ইন্টারনেট ।
কোন মন্তব্য নেই:
Good books