২০২৩ সালে বিশ্বের কোথায় কি হয়েছে?

 

করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্বকে যে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল সেখান থেকে ফেরার কোনও রাস্তা দেখাতে পারেনি ২০২৩; বরং বিশ্বব্যাপী নতুন করে লড়াই-সংঘাত, গৃহযুদ্ধ, সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক সংকটসহ বড় বড় সব দুযোর্গ-দুর্বিপাকে মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।

ইউক্রেইনে গতছর শুরু হওয়া রাশিয়ার আগ্রাসন এবছর জুড়েও চলেছে। তার মধ্যেই বছরের শেষ দিকে এসে বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেড়েছে ইসরায়েল ও হামাসের লড়াই-সংঘাত।

বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনী এবং ইহুদি বসতিস্থপনকারীদের হামলা, আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হানাসহ আরও একাধিক কারণে ফিলিস্তিনিদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখন্ডে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

সেই হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় নির্মম হামলা শুরু করে। বিমান হামলার সঙ্গে শুরু হয় স্থল হামলাও। হামাস-পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, আড়াই মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকায় সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

গাজার ৬০ শতাংশ আবাসিক ইউনিটই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের কাছে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো না গেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।

গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন সংস্থা। গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘বিভীষিকাময়’ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। গাজা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে প্রতি মিনিটেই। সেখানকার মানবিক সংকট ছাপিয়ে গেছে ইউক্রেইন সংকটকেও।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

ইউক্রেইনের যুদ্ধে এবছর মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের হিসাবে, নিহত বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ যুদ্ধ বিশ্বে কেবল অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই ডেকে আনেনি, মানবিক সংকটও সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে বিশেষ করে এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোতে রাশিয়া ও ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে অনেক বেশি।

ইউক্রেইন যুদ্ধের ধকলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে বাজার হয়েছে অস্থির। সরবরাহ-চেইনে সংকট বাড়িয়েছে নিত্যপণ্যের ঘাটতি। এসবের সঙ্গে ডলারের সংকট অনেক দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। নাগরিকদের খাবার, ওষুধ, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বহু দেশকেই পড়তে হয়েছে নতুন জটিলতায়।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

গৃহযুদ্ধ:

বিদায়ী এ বছরে বিশ্বজুড়ে আরো কয়েকটি দেশে গৃহযুদ্ধ, লড়াই-সংঘাতের তীব্রতা বেড়ে মানবিক সংকট গভীর হয়েছে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ বছরই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার জান্তা সরকার।

চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্য এবং পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের সেনা ফাঁড়িগুলোতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোটের একের পর এক সমন্বিত হামলার মুখে পড়ে কোণঠাসা হচ্ছে সামরিক বাহিনী।

জাতিসংঘের হিসাবমতে, গত অক্টোবরের শেষ দিকে মিয়ানমারে তীব্র লড়াই শুরুর পর ৩ লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে। আর সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ। চীন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করলেও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট হামলা চালিয়ে যেতেই বদ্ধপরিকর রয়েছে।

ওদিকে, ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের কোনও সুরাহা এবছরও হয়নি; বরং নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভিনদেশে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা আরও বেড়েছে। এবছর রেহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢেউ বেশি দেখা গেছে ইন্দোনেশিয়ায়। গত নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পৌঁছেছে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার ১,২০০ রোহিঙ্গা।

উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে তা চলছে। সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং সহযোগী বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কমান্ডার মোহামেদ হামদান দাগালোর মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৫ এপ্রিল থেকে এ লড়াইয়ের সূত্রপাত। সহিংসতা আরো নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সুদানে সাত মাস ধরে চলা সংঘাতে অন্তত ৯ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অন্তত ৭০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুও হয়েছে। মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় এবং ভয়াবহ মানবাধিকার সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।

  1. নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সুদান: জাতিসংঘ

  2. সুদানের লড়াইরত পক্ষগুলো ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে সম্মত

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

সামরিক অভ্যুত্থান-রাজনৈতিক সংকট:

আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে এ বছর সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে বন্দি করে একদল সেনা সদস্য। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক কর্নেল অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তারা নাইজারের সংবিধান বিলুপ্ত ঘোষণা করছেন। সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল এবং দেশের সব সীমান্ত বন্ধের ঘোষণাও দেন তিনি।

নাইজারের জান্তা ক্ষমতা ছাড়তে অপরাগতা প্রকাশ করায়, দেশটিতে ১৫ দেশের জোট ইকোয়াসের সম্মিলিত সামরিক হামলার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে নাইজারে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে নাইজেরিয়া। ইকোয়াস কঠিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সংকটে পড়ে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে নাইজারের মানুষ।

আফ্রিকার আরেক দেশ গ্যাবনেও এবছর সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গো ওন্ডিম্বা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মাধ্যমে গ্যাবনে বঙ্গো পরিবারের টানা ৫৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে দেশটিকে ঘিরে জনগণের অসন্তোষ ছিল। বঙ্গো পরিবারের প্রতিও গ্যাবনের বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে তীব্র অসন্তোষ জন্ম নিয়েছিল।

আফ্রিকা মহাদেশের আরও কয়েকটি দেশ এবছর সশস্ত্র সংঘাত ও রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টে বোলসোনারো সমর্থকরা তাণ্ডব চালিয়েছে। মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে ডনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীদের নজিরবিহীন নৈরাজ্যের পুনর্মঞ্চায়ন ঘটে ব্রাজিলে।

দেশটির অতি- ডান সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর কট্টর সমর্থকরা তাণ্ডব চালায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস আর সুপ্রিম কোর্টের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। ২০২২ এর ৩০ অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থি লুলা ডি সিলভার জয়ের পর থেকেই দু’মাস ধরে টানটান উত্তেজনা চলছিল ব্রাজিলে; তারই বিস্ফোরণ ঘটে এদিন।

পরাজিত প্রার্থী জাইর বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। জাতীয় পতাকার রঙে হলুদ-সবুজ পোশাক পরিহিত বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মত সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করে, স্লোগান দেয়, আসবাবপত্র ভাঙে। অন্তত তিন হাজার মানুষ এই বিশৃঙ্খলায় অংশ নেয়। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন বোলসোনারো। সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তা তার সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভের ইন্ধন জুগিয়েছে।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত:

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের উৎস হয়ে থাকা নাগোরনো-কারাবাখের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবছর নিয়ে নিয়েছে আজারবাইজান। এতে প্রায় ৩০ বছর ধরে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা জাতিগত আর্মেনীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশ নিরাপত্তা শঙ্কায় প্রতিবেশী আর্মেনিয়ায় পালিয়ে গেছে। এই গণবাস্তুচ্যুতি পুরো অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় করে তোলার শঙ্কা বাড়ায়।

আর্মেনিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ আজারবাইজান বন্ধ করে রাখায় খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দেওয়ার অভিযোগ জাতিসংঘে তোলেন আর্মেনিয়ার বিশেষ প্রতিনিধি। নাগার্নো-কারাবাখে প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতিনিয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে বাকু বাধা দেওয়ায় সেখানকার সাধারণ মানুষ ও তাদের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপও কামনা করে আর্মেনিয়া।

বছরটিতে বিশ্বে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর

রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বৈঠক হলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। গাজা যুদ্ধ, ইউক্রেইন যুদ্ধ, সুদান

ও মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ চলতি বছর পেরিয়ে নতুন বছরেও গড়াবে- তেমন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

বন্যা-ঘূর্ণিঝড়:

লড়াই-সংঘাতের বাইরে এবছর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ আরও তীব্র ও প্রাণঘাতী হয়ে মানবিক সংকট গভীর করেছে। নতুন নতুন এলাকা অপ্রত্যাশিত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। এতে বহু মানুষের মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঝড়ে মালাউয়ি ও মোজাম্বিকে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের পর চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে শুধু লিবিয়ায় অন্তত ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ভারি বৃষ্টিপাতের চাপে দুটি বাঁধ ভেঙে যায়। এতে নেমে আসা পানির প্রবল তোড়ে দেশটির উপকূলীয় শহর দেরনার এক চতুথাংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি ও অ্যালাবামায় বেশ কয়েকটি টর্নেডোর তাণ্ডবে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। এর মধ্যে একটি টর্নেডোর আঘাতে মিসিসিপির রোলিং ফোক ও সিলভার সিটি শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত্যু হয় রাখাইনে আগে থেকেই শোচনীয় অবস্থায় থাকা বাসিন্দারা মোখার আঘাতে আরও চরম মানবিক সংকটে পড়ে।

ফেব্রুয়ারিতে ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির তাণ্ডবে আফ্রিকার দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। মে মাসে আফ্রিকার দেশ কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামগুলোতে ধারাবাহিক বন্যা ও ভূমিধসে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

তবে বছরশেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এবারের কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে কিছু আশার আলো দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমবারের মতো একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। তারা সর্বসম্মতভাবে চুক্তি সই করে। জলবায়ু সম্মেলনের ৩০ বছরের ইতিহাসে এটি এ ধরনের প্রথম চুক্তি।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

ভূমিকম্প:

বিশ্বে ঘন ঘন ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়েছে ২০২৩। এসব ভূমিকম্পে বহু মানুষের মৃত্যু হওয়াসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মানবিক বিপর্যয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সারা বিশ্বে ঘটা কয়েকটি মারাত্মক ভূমিকম্পের মধ্যে আছে- মরোক্কোয় গত ৮ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্প। দেশটির ভূমিকম্পের ইতিহাসে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম ছিল এটি। তিন হাজার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।

এছাড়া, ২১ শতকের পঞ্চম প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আফগানিস্তানে গত ৭ অক্টোবরের ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।

নভেম্বরে গত আট বছরের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে নেপালে মৃতের সংখ্যা ১৫৭ ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বরে চীনে ভূমিকম্পে ১৩১ জন নিহত হয়। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গানসু প্রদেশে ৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধসে পড়ে। ২০১৪ সালের পর থেকে চীনে এবারের ভূমিকম্পটিই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। 

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

শতাব্দীর প্রাণঘাতী দাবানল:

এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাবানলে হাওয়াই রাজ্যের মাউই দ্বীপে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় মাউই দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী শহর লাহাইনা।

শতাধিক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ দাবানলে ২২০০টিরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এগুলোর ৮৬ শতাংশই আবাসিক ছিল। মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

কানাডাতেও আরেক ভয়াবহ দাবানলে এবছর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড ইবি বলেন, “আমাদের প্রদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল মোকাবেলা করছি আমরা।” জলবায়ু পরিবর্তন কানাডার এই দাবানল পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যায়।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

আর্থিক বিপর্যয়ে বিশ্ব মন্দার শঙ্কা:

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবছর আর্থিক খাতও বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক দেউলিয়া হয়। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চূড়া থেকে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতন আর্থিক ও প্রযুক্তি খাতে চরম বিস্ময়ের জন্ম দেয়।

২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার বৃহত্তম ঘটনা। এতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ব্যবস্থার বিপর্যয় থেকে আরেকটি বিশ্ব মন্দার শঙ্কা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বাজারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাজারেও দেখা দেয় আন্দোলন।

 যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহৎ বিপর্যয়ের মধ্যে আরও একটি ব্যাংকের পতন ঘটে।

সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক ফার্স্ট ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে দুই মাসে এ নিয়ে

তৃতীয় ব্যাংকের পতন হয়। আর এতে ব্যাংক খাতের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে।

নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন; যে নির্বাচন প্রতিবারই থাকে বিশ্ববাসীর মনোযোগের কেন্দ্রে। তাই এবার বছর শেষের সময় থেকেই ২০২৪ সালের এই নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। আর তাতে আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

ফের দৃশ্যপটে ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাসী দেশটির অভ্যন্তরীন ও পররাষ্ট্রনীতির আরেক দফা গতি পরিবর্তনের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আগামী নির্বাচনে ট্রাম্প ফিরে আসতে পারেন এবং আরেক দফায় যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং বিশ্বরাজনীতিতে দেশটির ভূমিকা হুমকিতে পড়তে পারে বলে এর মিত্রদেশগুলোর মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার জন্য রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে থাকার সময়েই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে।

কিন্তু আইনি ঝামেলা দিন দিন বাড়তে থাকলেও ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেনি। অন্য সব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চেয়ে তিনি অনেক এগিয়ে। বরং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর যেন তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। সম্প্রতি কিছু জনমত জরিপে তাকে বতর্মান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়েও এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আবার কোনও জরিপে বাইডেনের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হাড্ডাহাড্ডি হওয়ারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

তবে বছরের শেষে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার জেরে কলোরাডোর সর্বোচ্চ আদালত আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করায় তার কলোরাডোর প্রাইমারি ভোটে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। এতে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন শেষ হতে চলেছে কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও এই রায় শুধু মাত্র আগামী বছর ৫ মার্চ কলোরাডোতে অনুষ্ঠেয় রিপাবলিকান প্রাইমারির জন্য প্রযোজ্য। তবে এটা নিশ্চিত যে, তা ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে।

ট্রাম্প অবশ্য হাল ছাড়েননি। বরং এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে তার ভাগ্য এখন ঝুলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের হাতে। সাবেক এ প্রেসিডেন্ট আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতি। যাদের মধ্যে তিন জনের নিয়োগ দিয়েছেন খোদ ট্রাম্প। সেখানে ৬-৩ এ রক্ষণশীলরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে রায় ট্রাম্পের পক্ষে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

  1. সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত

  2. আদালতে ট্রাম্প, নিজেকে নির্দোষ দাবি

  3. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ নিয়ে বিভক্ত মার্কিনিরা: জরিপ

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েও সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে পুতিন:

ট্রাম্পের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার মতো এবছর আরেকটি যুগান্তকরী ঘটনা ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)-র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি।

ইউক্রেইনে যুদ্ধাপরাধ এবং শিশুদের ইউক্রেইন থেকে অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুতিনকে দায়ী করে আইসিসি-র একজন বিচারক এই পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। পরাশক্তির দেশগুলোর সরকার প্রধানদের মধ্যে কোনও নেতাকে গ্রেপ্তার করতে আদালতের এমন আদেশ ছিল এবারই প্রথম।

যদিও পুতিনের জন্য সুবিধা হল, নিজ দেশে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় তাকে আইসিসি-র কাছে ক্রেমলিনের হস্তান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। যতদিন তিনি রাশিয়ায় থাকবেন, ততদিন গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নেই। রাশিয়ার বাইরে গেলে পুতিন আটক হতে পারেন। কিন্তু ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় তার চলাফেরা সীমিত হয়ে গেছে। তাই যে দেশ তাকে বিচারের আওতায় আনতে চায়, সেখানে পুতিনকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

তাছাড়া, তাকে বিচারের ক্ষেত্রে অন্তত দুটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রথমত, রাশিয়া আইসিসি-র এখতিয়ার বা কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। আইসিসি গঠনের চুক্তিতে রাশিয়া সই না করায় সংস্থাটির পরোয়ানায় রাশিয়া থেকে কাউকে প্রত্যর্পণের বাধ্যবাধকতাও দেশটির নেই। দ্বিতীয়ত, বিবাদী ছাড়া কাঠগড়ায় বিচার পরিচালনার বিষয়টি সবার অজানা না হলেও, এটি এখানে খাটে না। আইসিসি কারও অনুপস্থিতে বিচার করে না, তাই সেই পথটিও বন্ধ।

ওদিকে, ইউক্রেইনে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের মাথায় চেপেছে আইসিসি’র  গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, সেই যুদ্ধই চালিয়ে যাওয়ার জন্য বছর শেষে এসে তার পক্ষে পরিস্থিতি সুবিধাজনক করে দিয়েছে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ; যা গোটা বিশ্বের নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার দিকে।

ফিলিস্তিনের মানবিক সঙ্কটের প্রভাব যে পড়বে ইউক্রেইন যুদ্ধের ওপরে, বিশেষত পশ্চিমা সহায়তার ক্ষেত্রে, তা ভালই জানেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় চাপ বাড়বে ইউক্রেইনের উপরেই। যুদ্ধ যত দিন চলবে, তত দিন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মিত্রশক্তিগুলোর পূর্ণ মদদ পাবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

রাশিয়ার রণকৌশল হচ্ছে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ না ইউক্রেইন সমর্থন হারায়। আর সহায়তা পাওয়ার দিক থেকে ইউক্রেইনের জন্য নতুন বছর যে খুব আশাব্যঞ্জক হবে না- তেমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইসরায়েল এবং ইউক্রেইনকে আরও সাহায্য দেওয়ার আবেদন কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা নিজ দেশের সীমান্ত সুরক্ষার শর্তে এরই মধ্যে আটকে দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও একাধিক বছরের আর্থিক সাহায্যের সিদ্ধান্ত জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে হাঙ্গেরির বিরোধিতার কারণে। 

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

কোভিডের সমাপ্তি ঘোষণা:

কোভিড-১৯ আর ‘বিশ্ব জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা’ নয় বলে এবছরই মে মাসে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) । এ ঘোষণা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীর সমাপ্তি জানান দেওয়ার পথে ছিল বড় ধরনের এক পদক্ষেপ। ২০২০ সালে প্রথম কোভিডের জন্য ডব্লিউএইচও’-এর সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা জারির তিন বছর পর তা তুলে নেওয়ার এই ঘোষণা আসে।

ডব্লিউএইচও জানায়, গত কয়েক বছরে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে কোভিডে। বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করেছে, বহু মানব গোষ্ঠীকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে কোভিড। এখন থেকে কোভিড বিশ্ব স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থার অন্তর্ভুক্ত আর নয়। যদিও এই জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া মানেই ঝুঁকি কমে যাওয়া বা আশঙ্কা কমে যাওয়া নয় বলেও সতর্ক করেন তিনি।

বছরের শেষের দিকে এসে কোভিডের ওমিক্রন ধরনের নতুন এক উপধরন জেএন.১ এর প্রকোপ দেখা গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

জেএন.১ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। এছাড়া চীনে ৭ জন এই উপধরনে সংক্রমিত হয়েছে। ভারতের কেরালা রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে জেএন.১ সংক্রমণ এবং এতে মানুষের মৃত্যু হওয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, আপাতত এই উপধরনটি জনস্বাস্থ্যের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ বলেই প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোভিড প্রতিরোধে বর্তমানে যেসব টিকা চালু আছে সেটি দিয়েই এই উপধরনের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা মিলবে।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

ভারতের চাঁদ জয়, সংসদে বিরোধী এমপি বরখাস্তের হিড়িক:

চাঁদের রহস্যে ঘেরা দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে অগাস্টে পা রাখে ভারত। ২৩ অগাস্ট চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ইতিহাস গড়ে চন্দ্রযান-৩। বিশ্বের আর কোনও দেশ সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ভারতের কোটি কোটি মানুষের চোখ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই দক্ষিণ মেরুতে।

এই অভিযানে সফল হওয়ায় বিশ্বে চাঁদে পা রাখা চতুর্থ দেশ হয় ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন চাঁদে নামতে সফল হয়েছিল। ভারতের মহাকাশযান চাঁদে অবতরণের কয়েকদিন আগে ২০ অগাস্টে চাঁদের পৃষ্ঠে ধাক্কা খেয়ে রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ বিধ্বস্ত হয়।

রাশিয়ার মহাকাশযানেরও নামার কথা ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানোর একদিন আগেই বিধ্বস্ত হয় সেটি। এরপরই রাশিয়াকে টেক্কা দিয়ে চাঁদের মাটিতে সফল পদচারণা করে চমক দেখায় ভারত।

ডিসেম্বরে ভারতে তিনদফায় ১৪১ জন বিরোধী এমপি বরখাস্তের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে ভারতে একসঙ্গে এতজন সাংসদকে বরখাস্ত করার ঘটনা দেখা যায়নি।

ভারতের লোকসভায় দুই আগন্তুকের অনুপ্রবেশে নিরাপত্তা ভঙ্গের ঘটনা নিয়ে হট্টগোল করার জেরে পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্ন- দুই কক্ষ থেকে এই এমপি’রা বরখাস্ত হন। এতে পার্লামেন্ট প্রায় বিরোধীশূন্য হয়ে যায়। গণহারে এমন বরখাস্তের ঘটনায় চটে যান বিরোধীরা। সরকার সংসদকে এভাবে বিরোধীমুক্ত করতে চাইছে- যাতে বিতর্কিত সব বিল বিনা বাধায় কিংবা বিনা আলোচনায় পাস করানো যায় বলে অভিযোগ তোলেন তারা।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

ইমরান খানের জেল, রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা:

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তোষাখানা মামলায় ৫ অগাস্ট তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসলামাবাদের একটি আদালত। এ রায়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই লাহোর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তানের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তোষাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করে ইসলামাবাদ আদালত তাকে ৩ বছরের জেল দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে ।

চীনের প্রেসিডেন্ট পদে শি’র ঐতিহাসিক তৃতীয় মেয়াদ:

নজির ভেঙে এবছর টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শি জিনপিং। ১০ মার্চ চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শি সর্বসম্মতভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয়বারের মতো পুনর্নির্বাচিত হন।

পদটি অনেকটা আনুষ্ঠানিক হলেও ইতোমধ্যেই মাও জেদংয়ের পর চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শি। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সাধারণ সম্পাদক শি ২০১৩ সাল থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন আছেন। ফের পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ায় ২০২৮ সাল পর্যন্ত তার ক্ষমতায় থাকার পট প্রস্তুত হল।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

চীনকে টপকে ভারত সবচেয়ে জনবহুল দেশ:

এবছরের মাঝামাঝি সময়ে (এপ্রিল-মে) চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। জাতিসংঘ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ। বিপরীতে চীনের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ।

১৯৫০ সাল থেকে জাতিসংঘ সবচেয়ে জনবহুল দেশের তালিকা তৈরি করে আসেছে। সে তালিকায় এবারই প্রথম শীর্ষে উঠে এসেছে ভারত। আর ৩৪ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

চীনে গত বছরই জনসংখ্যার নিম্নমুখী হতে দেখা গিয়েছিল। এর আগের বছর ২০২১ সালে দেশটিতে তুলনামূলক জন্মহার কম ছিল।

মূলত ১৯৮০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকা চীনের এক সন্তান নীতির কারণে জনসংখ্যা কমতে শুরু করে, এর পাশাপাশি পড়াশোনার আকাশচুম্বি খরচও অনেক চীনা পরিবারকে এক সন্তানের বেশি না নিতে বাধ্য করেছে, এমনকী এ কারণে অনেকে কোনো সন্তানই নিচ্ছেন না।

চীনের স্থানীয় সরকারগুলো ২০২১ সাল থেকেই একের অধিক সন্তান নিতে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে; এগুলোর মধ্যে কর ছাড়, মাতৃত্বকালীন ছুটি দীর্ঘয়িত করা এবং ভর্তুকি মূল্যে বাড়ি দেওয়া অন্যতম। তারপরও দীর্ঘদিনের সেই ধারা এত তাড়াতাড়িই পরিবর্তিত হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে উত্তেজনা বছরশেষে প্রশমন:

বছরের শুরুর দিকে আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুন নিয়ে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সৃষ্ট উত্তেজনার পারদ বছর শেষে গলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র ওয়াশিংটন সফরের মধ্য দিয়ে।

৩ ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র জানয়েছিল, তারা কানাডা থেকে তাদের আকাশে ঢুকে পড়া একটি চীনা গোয়েন্দা বেলুন শনাক্ত করেছে। পরদিন জঙ্গি বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এর ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে অবস্থান করেছিল। বেলুনটিকে ধ্বংস করা নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষেট্রর বাদানুবাদে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ে।

পরে ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে করলে সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ কমার আশা জেগে ওঠে। সফরে শি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের বন্ধ হয়ে থাকা সামরিক যোগাযোগ ফের শুরু করাসহ বাড়তে থাকা জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়েও একমত হন তারা।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকি:

উত্তর কোরিয়া এবছর একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার সখ্যের জবাব ‘আরও আক্রমণাত্মক পাল্টা পদক্ষেপের মাধ্যমে’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। শত্রুর উস্কানির জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালানোরও হুমকি দিয়েছে দেশটি।

উত্তর কোরিয়া ডিসেম্বরে পঞ্চমবারের মতো আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। এর আগে বছরের শুরুর দিকে মার্চে একাধিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তারা। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের যৌথ সামরিক মহড়া চলার মধ্যে পিয়ংইয়ং ওই পরীক্ষা চালায়।

এরপর এপ্রিলে নতুন একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘হওয়াসং-১৮’ পরীক্ষা চালায় দেশটি; যেটি এটি এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রভান্ডারের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ক্ষেপণাস্ত্র। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের যৌথ সামরিক মহড়া ‘ফ্রিডম শিল্ড ২৩’ এর বিরোধিতায় এ মহড়ার আগে ও পরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে শক্তি প্রদর্শন করে উত্তর কোরিয়া।

ফের ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার পরই উত্তর কোরিয়া তাদের অত্যাধুনিক দীর্ঘ পাল্লার আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উত্তর আমেরিকা মহাদেশে আঘাত হানতে সক্ষম।

এই অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পরই শত্রুদের নতুন করে হুঁশিয়ার করে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেন, কোনও শত্রু পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে উস্কানি দিলে পিয়ংইয়ং এর জবাবে পারমাণবিক হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

চার্লসের রাজ্যাভিষেক:

সাত দশকের মধ্যে ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবছর মাথায় রাজমুকুট পরেছেন চার্লস। গত ৬ মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য কমনওয়েলথ ভুক্ত রাজ্যগুলোর রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লস ও রানি হিসেবে ক্যামেলিয়ার রাজ্যাভিষেক হয়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত হন বড় ছেলে চার্লস। এর আগে ৭০ বছর ধরে তিনি ব্রিটেনের রাজমুকুটের উত্তরাধিকারী হিসেবে জীবন কাটিয়েছেন। অবশেষে রাজ্যাভিষেকের সময় ৩৬০ বছরের পুরনো সেইন্ট এডওয়ার্ডের মুকুট মাথায় পরানো এবং চতুর্দশ শতাব্দীর রাজসিংহাসনে বসার মাধ্যমে ব্রিটেনের প্রবীণতম রাজা হন চার্লস।

রাজ্যাভিষেকের আয়োজন নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছিলেন, “অন্য কোনো দেশ এমন জমকালো প্রদর্শনী করতে পারেনি- রাজ শোভাযাত্রা, সমারোহ, আনুষ্ঠানিকতা ও স্ট্রিট পার্টি। এটি আমাদের ইতিহাসের, সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের এক গর্বিত প্রকাশ। আমাদের দেশের আধুনিক চরিত্রের এক প্রাণবন্ত প্রদর্শনী; একটি লালিত আচার-অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে একটি নতুন যুগের জন্ম হয়।”  

চার্লস ব্রিটেনের ৪০তম রাজা। সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজা চার্লস তার মা প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মত ব্যাপক প্রশংসিত না হলেও এখন পর্যন্ত তার প্রতি জনসমর্থন ইতিবাচকই বলা যায়।

***

হ্যারির স্মৃতিকথা:

১০ জানুয়ারি ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারির বহুল আলোচিত স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসে। এ বইয়ে রাজপরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ করে বহু বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন হ্যারি। তাকে বইটি লিখতে ‘সাহায্য করেছিলেন’ মার্কিন ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক জেআর মোররিঙ্গার। অর্থাৎ, তিনি ‘স্পেয়ার’ এর গোস্ট রাইটার।

বইটিতে দাবি করা হয়েছে, হ্যারি তার বাবাকে (রাজা তৃতীয় চার্লস) দ্বিতীয় বিয়ে না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার সময় হ্যারি ২৫ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করেন, প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে অবৈধ মাদক গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী মেগানের সঙ্গে বড় ভাইয়ের স্ত্রী ক্যাথেরিনের বনিবনা ছিল না।

প্রিন্স হ্যারি আরও জানিয়েছেন, তিনি তার নিজের পরিবারের কাছ থেকে নয় বিবিসি-র ওয়েবসাইট থেকেই প্রথম রানি এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন।

প্রিন্স হ্যারির ‘স্পেয়ার’: রাজপরিবারের রহস্যের পর্দা উন্মোচন

‘জঘন্য, ভয়ঙ্কর’ কাহিনিগুলো প্রাসাদ থেকেই ছড়িয়েছে: প্রিন্স হ্যারি

প্রিন্স হ্যারির ‘গোস্ট রাইটার’, কে এই মোররিঙ্গার?

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

নেটো সদস্য ফিনল্যান্ড;

গত ৪ এপ্রিল পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর ৩১তম সদস্য রাষ্ট্র হয় ফিনল্যান্ড। এতে রাশিয়ার সঙ্গে নেটো জোটের সীমান্ত আগের তুলনায় দ্বিগুণ বড় হয়। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া ফিনল্যান্ড ওই বছর মে মাসেই নেটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে।

রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেইনে অভিযান চালানোর পর ফিনল্যান্ড তাদের ‘নিরপেক্ষতা’ নীতি বদলে পশ্চিমাদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নেয়।

নেটোর অন্যতম নীতি হচ্ছে, সম্মিলিত প্রতিরক্ষা নীতি। এর অর্থ হচ্ছে, জোটের কোনও দেশের ওপর হামলা হলে তা জোটের সব দেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচিত হবে।

ফিনল্যান্ডের নেটোভুক্তিকে অনেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বড় কৌশলগত পরাজয় হিসাবে দেখছেন। নেটোতে থাকলে রুশ হামলার সম্ভাবনা কম, এ ধারণা থেকেই ফিনল্যান্ড এই জোটভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের। 

নেটোর ৩১তম সদস্য হচ্ছে ফিনল্যান্ড

ইসরায়েল-ওমান, সৌদি-ইরান সম্পর্ক; আরব লিগে সিরিয়া:

২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ওমান তাদের আকাশপথ ইসরায়েলের এয়ারলাইন্সের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ইসরায়েলি এয়ারলাইনসকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব। কিন্তু ওমানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ইসরায়েলি উড়োজাহাজগুলো এশিয়ার আকাশে উড়তে সবচেয়ে সহজ রুটটি ব্যবহার করতে পারেনি। অবশেষে এবছর ইসরায়েলের জন্য আকাশ উন্মুক্ত করেছে ওমান।

তাছাড়া, অগাস্টে ইসরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পরই বাহরাইন এবং ওমানও এ পথে হাঁটতে পারে বলে আভাস দেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী।

ওদিকে, চীনের মধ্যস্থতায় এবছর মার্চে বেইজিংয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকের পর ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধের অবসান ঘটিয়ে সম্পর্ক ফের শুরু করতে সম্মত হয়। ২০১৬ সালে সৌদি আরবে শিয়া সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে উত্তেজিত ইরানি জনতার হামলার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল।

অন্যদিকে, আরব লীগের নেতারা বছরের পর বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু এ বছর মে মাসে নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শত্রুতার পাতা উল্টিয়ে আসাদকে ফের নিজেদের মাঝে ফিরিয়ে এনেছেন তারা।

২০১১ সালের প্রথমদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নির্মম দমনপীড়ন ও পরবর্তীতে সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে আসাদ ও তার সরকারকে আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এক দশকেরও বেশি সময়ের বিচ্ছিন্নতার পর ফের আরব লিগে স্বাগত জানানো হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে।

বছরজুড়ে প্রযুক্তিবিশ্বে এআই:

বছরজুড়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে প্রযুক্তিবিশ্বে। আরও বেশ কিছু প্রযুক্তি, পণ্য ও ব্যক্তি আলোচনায় ছিল বছরজুড়ে। এআইভিত্তিক নানা সুবিধাও চালু হয়।

প্রযুক্তি খাতে জেনারেটিভ এইআই মডেলের ক্রমাগত উত্থান ঘটেছে। এই মডেলগুলো মেশিন পাঠ ও ভাষা প্রক্রিয়াকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। মডেলগুলো কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চিত্রনাট্য তৈরির পাশাপাশি ছবি, সঙ্গীত তৈরির পারদর্শিতাও দেখিয়েছে।

১৪ মার্চ ওপেনএআই কোম্পানি জিপিটি-ফোর চালু করে। এটি চ্যাটজিপিটি-র একটি বড় ধরনের ভাষা মডেল। এটি ছবিতে সাড়া দিতে পারে এবং ২৫ হাজার শব্দ প্রক্রিয়া করতে পারে।

তবে এআই নিয়ে সতর্কবার্তাও এসেছে। এই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশে ঠিকমতো নজর না দিলে এটি আর্থিক ব্যবস্থায় নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে --এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের একটি প্যানেল। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে, তার মধ্যে সাইবার ও এআই মডেলের নিরাপত্তা ঝুঁকির মতো বিষয়গুলো আছে বলে উল্লেখ করে তারা।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

বিশ্বজুড়ে নানা দুর্ঘটনা:

প্রতিবছরের মতো এবছরও নানা দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল টাইটান দুর্ঘটনা। গত ১৮ জুন পাঁচ আরোহী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযান টাইটান ‘ভয়ঙ্কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে’ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এতে পাঁচ আরোহীর সবার মৃত্যু হয়।

একশ বছরের বেশি সময় আগে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল পর্যটন সংস্থা ওশানগেইটের ডুবোযান টাইটান। এর পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় টাইটানের সঙ্গে পানির ওপরে থাকা নিয়ন্ত্রক জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তারপর থেকে চলছিল টাইটানের উদ্ধার অভিযান। উদ্ধারকারীদের আশা ছিল, হয়ত কোনো কারণে টাইটান পানির নিচে তলিয়ে গেছে, ভেসে উঠতে পারছেন না। যে কারণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা টাইটানের অবস্থান শনাক্ত করে সেটাকে তুলে আনতে চাইছিলেন।

তাদের ভয় ছিল, ডুবোযানে সংরক্ষিত অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে সেখানে থাকা পাঁচ আরোহী দম বন্ধ হয়ে মারা পড়তে পারেন। উদ্ধার অভিযানের মধ্যেই খবর আসে, আটলান্টিকের তলদেশে উদ্ধার অভিযানে পাঠানো রোবটযানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে অন্য কিছুর ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পেয়েছে, যেটি পরে টাইটানের বলে নিশ্চিত করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

অন্যান্য আরও দুর্ঘটনার মধ্যে আছে- ৩১ অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের একটি ভবনে আগুন লেগে ৭৭ জনের মৃত্যুর ঘটনা। পরিত্যক্ত এই ভবনটি নগরীর একটি অপরাধী দল দখল করে ফ্ল্যাটগুলো অবৈধ অভিবাসীদের কাছে ভাড়া দিয়েছিল।

২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রিসের থেসালিতে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫৭ জন নিহত হয়। এই দুর্ঘটনা গ্রিসের রেলওয়ের পরিস্থিতি ও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুরো দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের কারণ হয়।

১৯ এপ্রিল ইয়েমেনের রাজধানী সানায় রমজান মাসে এক ত্রাণ অনুষ্ঠানে ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে অন্তত ৯০ জন নিহত ও ৩২২ জন আহত হয়। ২ জুন ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দু’টি যাত্রীবাহী ও একটি মালগাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে অন্তত ২৯৬ জন নিহত হয়। আহত হয় ১২০০ জনেরও বেশি মানুষ।

১৩ জুন নাইজেরিয়ার কোয়ারা রাজ্যে নাইজার নদীতে বারযাত্রীবাহী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ১০৬ জনের মৃত্যু হয়। ১৪ জুন গ্রিসের উপকূলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু হয়, নিখোঁজ হয় আরও ৫০০ জন।

অ  গাস্টে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি উড়োজাহাজ তিয়েভের অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। সেই উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, সহপ্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি ইউতকিনসহ আরও ৮ জন। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে সবাই নিহত হন। যদিও এটি দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে সংশয় আছে।

কারণ, জুনে রাশিয়ায় ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বিদ্রোহ করে বসার পরই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন একে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলেছিলেন। সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়ে হওয়ার পর থেকে অনেকেই মনে করছিলেন, রুশ ভাড়াটে সেনা দল ওয়াগনারের প্রধান হয়ত নিজের নামে বিশেষ এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে ফেলেছেন।  

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

সন্ত্রাসী হামলা:

বিশ্বব্যাপী জঙ্গি ও আত্মঘাতী হামলার তীব্রতা কমে এলেও পাকিস্তানে এবছর বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৩০ জানুয়ারি- পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইনস এলাকার একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৮৭ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আরও ১৫০ জন আহত হয়। হতাহতদের অধিকাংশই পুলিশ সদস্য।

১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানের খাইবার পখতুনখাওয়া প্রদেশে দেরা ইসমাইল খান জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি চেকপোষ্টে জঙ্গি হামলায় সামরিক বাহিনীর ২৩ সেনা নিহত হয়। এ ঘটনায় গোলাগুলিতে ৬ জঙ্গিও নিহত হয়।

বরাবরের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এবছরও ঘটেছে বেশি কিছু গুলির ঘটনা। ৭ জানুয়ারি- যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি এলিমেন্টারি স্কুলে ৬ বছর বয়সী এক বালকের গুলিতে এক নারী শিক্ষক গুরুতর আহত হয়। ছয় বছর বয়সী ওই বালক কীভাবে বন্দুক যোগাড় করল তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ২১ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক বাড়িতে গুলিতে ছয় মাসের একটি শিশু ও ১৭ বছর বয়সী এক মা’সহ ছয়জন নিহত হয়।

একই মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে এক বলরুম ড্যান্স হলে গুলি করে ১০ জনকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া সন্দেহভাজন বন্দুকধারী আত্মহত্যা করেন। সন্দেহভাজন ছিলেন এশীয় বংশোদ্ভূত এক বৃদ্ধ। আরেক ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার হাফ মুন বে শহরের দু’টি এলাকায় নির্বিচার গুলিতে সাতজন নিহত হয়।

ওদিকে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে দুটি হামলার ঘটনায় সেনা ও বেসামরিকসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়।

বছরের শেষে এসে ডিসেম্বরে চেক প্রজতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বন্দুক হামলা হয় রাজধানী প্রাহারের চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি ভবনে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় ২৫ জন। বন্দুকধারী ওই ফ্যাকাল্টিরই ছাত্র ছিল। হামলার পর সে আত্মহত্যা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

  1. চেক প্রজাতন্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি, নিহত ১৫

  2. ‘গোটা ফ্যাকাল্টিই ছিল রক্তে মাখা’: প্রাহার হামলা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

হেনরি কিসিঞ্জারের মৃত্যু:

বিশ্ব এবছর হারিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ঊনিশশ সত্তরের দশকের স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম রূপকার হেনরি কিসিঞ্জারকে।

২৯ নভেম্বর তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। জার্মান বংশোদ্ভূত এই সাবেক কূটনীতিক তার কানেটিকাটের বাড়িতে মারা গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি খবরে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কিসিঞ্জার মার্কিন কূটনীতিতে রেখে গেছেন অমোচনীয় ছাপ, পরবর্তী জীবনে ক্ষমতার বাইরে থেকেও তিনি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।

চীন, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির সুরে এখনও কিসিঞ্জারের নীতি অনুরণিত হয়। বলা হয়, আনোয়ার সাদাত, মাও জে দং, রিচার্ড নিক্সন আর বাদশাহ ফয়সালের পররাষ্ট্রনীতিতেও তার প্রভাব ছিল। তুখোড় রাজনৈতিক মেধা আর কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য নিজের দেশে কিসিঞ্জার যতটা সমাদৃত, বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাতের ‘কারিগর’ হিসেবে ছিলেন ততটাই নিন্দিত। তিনি যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব সহসাই শেষ হবে না।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক নৃশংসতা দেখেও যে ভূমিকা কিসিঞ্জার নিয়েছিলেন, সেজন্য তিনি অনেকের ধিক্কারের পাত্র। ১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জারকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল, যা এ পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের একটি।

গত মে মাসে শতবর্ষ পূর্ণ করা কিসিঞ্জার শেষ দিনগুলোতেও ছিলেন দারুণ সক্রিয়। গত জুলাই মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আকস্মিক সফরে তিনি বেইজিংয়ে যান।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

যিশুর জন্মভূমি বেথেলহেমে আনন্দবিহীন বড়দিন:

যিশুখ্রিস্টের জন্মভূমি বেথেলহেম সাধারণত খ্রিস্টীয় বড়দিনের সময় সবচেয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু চলতি বছর যুদ্ধ ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি এ শহরটি থেকে পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের দূরে ঠেলে দিয়েছে; ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও স্যুভেনিরের দোকানগুলি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে ছিল। 

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা ভূখণ্ডে নির্মম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের, এর জেরে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েছে; এই পরিস্থিতিতে বেথেলহেমে কেউ যায়নি।

পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা সাধারনত এখানকার নেটিভিটি গির্জা দেখতে আসেন, যিশু যেখানে জন্মেছিলেন গির্জাটি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে বলে বিশ্বাস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের। গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবাই সেখানে হোটেলের বুকিং বাতিল করেছে। আসছে বছরের বুকিংও বাতিল হয়েছে। যেখানে বড়দিনের সময়ে ভিড় লেগেই থাকতো, লোকজন, হৈচৈ থাকত। এবার ছিল না তার কোনও কিছুই।

২০২৩: মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার বছর

সাগরপথে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলায় উত্তেজনা:

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠীর হামলা চলার মধ্যেই আবার ভারত মহাসাগরে ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় বছরের একেবারে শেষে এসে সাগরপথে উত্তেজনা বেড়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যও হচ্ছে বিঘ্নিত।

লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার হুমকি বেড়ে যেতে থাকার কারণে বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানি ওই রুটে তাদের জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে বিশ্ব বাজারে তেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা বেড়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে হুতিরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে। লোহিত সাগরে ইসরায়েল অভিমুখে যাওয়া কিংবা ইসরায়েলের পতাকাবাহী যে কোনও জাহাজকে হামলার নিশানা করার হুমকি দিয়েছে তারা।

তেল ও জ্বালানির চালান নিয়ে যাওয়ার জন্য লোহিত সাগর বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল পথ। কিন্তু এ পথে চলাচলকারী বিদেশি জাহাজগুলো হুতিদের রকেট এবং ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছে। লোহিত সাগরের নৌপথে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল সুরক্ষিত রাখতে একটি আন্তর্জাতিক নৌ টহল অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাহিনী হুতিদের ড্রোনগুলো ভূপাতিতও করছে।

২৩ ডিসেম্বরে লোহিত সাগরে ভারতীয় পতাকাবাহী একটি তেলের ট্যাঙ্কারে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। একইদিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, ইরান থেকে ছোড়া একটি ড্রোন ভারত মহাসাগরে রাসায়নিক একটি ট্যাংকারে আঘাত হেনেছে।

মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম আম্ব্রে বলছে, ভারত মহাসাগরে এমন হামলা এটিই প্রথম। যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করে জানায়, ‘কেম প্লুটো’ ট্যাংকারে আঘাত হানে ইরান থেকে ছোড়া ওয়ান-ওয়ে অ্যাটাক ড্রোন।

ইরান এই হামলার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ করা নিয়ে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েছে।

ইউক্রেইনে যুদ্ধ এখনও চলছে। গাজায় যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই- ফলে নতুন বছরে রক্তক্ষয় চলবে বলেই আশঙ্কা। ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে এরই মধ্যে বিশ্ব খাদের কিনারায় পৌঁছেছে। তার ওপর নতুন করে গাজায় যুদ্ধের প্রভাবে লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগর এমনকি লেবানন-সহ বিভিন্ন স্থানে যে বিশৃঙখল পরিস্থিতি ঘোঁট পাকিয়ে উঠছে তাতে আরেক মানবিক-অর্থনৈতিক সংকটময় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথেই পা বাড়াচ্ছে বিশ্ব।

 

 

 

২০২৩ সালে ঢালিউডের সালতামামি

২০২৩ সালে ঢালিউডের সালতামামি

 

 

 

 

২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছেন যে আলেমরা 


নিজের সমাজ-দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন এমন আলেমের সংখ্যা বেশ দীর্ঘ। তারা বেঁচে থাকার সময়ে তাদের শূন্যতা অনুভব হয় না খুব একটা। তবে তাদের বিদায়ে শূন্যতা তৈরি হয় ধীরেধীরে। যা সহসাই পূরণ হয় না। ২০৩০ সালের আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়া বরেণ্য আলেমদের তালিকা তুলে ধরা হলো এখানে-



 

 

পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানবী

বছরের শুরুর দিকেই ইন্তেকাল করেন হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর নাতি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানবী। তার ইন্তেকাল হয় ৮ জানুয়ারি (রোববার)।

মাওলানা এহতেরামুল হক থানভি মাওলানা এহতেশামুল থানভির বড় ছেলে। মাওলানা ইহতিশামুল হক থানভি হাকিমুল উম্মত খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর ভাতিজা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি জামিয়া এহতিশামিয়্যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিছু দিনের জন্য পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পিটিআই করাচির সাথে যুক্ত ছিলেন।

তার বাবা মাওলানা এহতেশামুল থানভি ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট করাচিতে আসেন।



 

সৌদি দায়ি শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ

সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামী দায়ি শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ ইন্তেকাল করেন ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার)।  শায়খ আবদুল্লাহ বানামাহ সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদ ও প্রোগ্রামে ইসলাম বিষয়ক আলোচনা করতেন। ৩০ বছর আগে দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও সব প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে ধৈর্য ও অবিচলতার প্রতীক ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে জায়গা করে নেন সবার মনে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শায়খ আবদুল্লাহর মৃত্যু-পূর্ব উপদেশ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তরুণদের উপদেশ দিয়ে ভিডিওতে তিনি সবাইকে নামাজ আদায়, বাবা-মায়ের আনুগত্য ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে তাওবার মাধ্যমে পাপ মুক্ত জীবন গড়ার আহ্বান জানান। তা ছাড়া আল্লাহর কাছে রমজান পর্যন্ত তার জীবন দীর্ঘ হওয়ার দোয়াও করেন।

 

শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই কারাতে ও কুংফুর প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল তার। ১৯৯৩ সালে একদিন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি গুরুতর আহত হন। সাঁতার কাটতে পুলে লাফ দেওয়ার সময় তার মাথায় আঘাত লেগে ঘাড় ভেঙে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর তার পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার পর থেকে পুরো জীবন তিনি মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচারে কাজ করে যান। 

জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বানামাহ সৌদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ৩০ বছর আগে একদিন বাবার সামনে তার পকেট থেকে সিগারেটের লাইটার পড়ে যায়। তার বাবা লাইটার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলেছিল, এটা তার বন্ধুর। তখন তার বাবা বলেছিল, তোমার বন্ধু সিগারেট খায় আর তোমার কাছে লাইটার! বরং তুমি মিথ্যা বলছ। তখন বানামাহ মিথ্যা শপথ করে বলে যে সে সত্য বলছে; সে ধূমপান করে না। একথা শুনে তার বাবা বলেছিল, তুমি মিথ্যা শপথ করলে আল্লাহ যেন তোমার ঘাড় ভেঙে দেন। এরপর একদিন বানামাহ স্কুল থেকে পালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে সাঁতার কাটতে জেদ্দার একটি পার্কে যায়। সেখানকার পুলে লাফ দিলে তার ঘাড় ভেঙে রক্তক্ষরণ ঘটে এবং তার পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। 

সৌদির ইসলামী শিক্ষাবিদ ড. ফাতেমা নাসিফ

সৌদি আরবের নারী ইসলামী শিক্ষাবিদ কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফাতেমা নাসিফ বিনতে উমর ইন্তেকাল করেন ৩১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার)। জেদ্দায় ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। সৌদি নারীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা প্রচারে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

আধুনিক যুগে নারীদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রসারে অগ্রনায়ক ছিলেন তিনি। সৌদির বাইরে বিভিন্ন আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রেও তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন আরব উপদ্বীপে দ্বিন প্রচারে অগ্রগামী নারীদের অন্যতম। ইসলামী শিক্ষা অনুসারে নারীদের গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।

১৯৪৪ সালে জেদ্দার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক পরিসরে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক স্তর শেষ করে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি) থেকে ইতিহাসে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সেই সময় নারীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিহাস বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে ভর্তির সুযোগ ছিল না। তাই প্রথমে এই বিভাগেই স্নাতক করেন। পরবর্তীতে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে তিনি শরিয়াহ বিভাগে পুনরায় ভর্তি হন। 

এরপর ১৯৮২ সালে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিভাগ থেকে কোরআন ও সুন্নাহ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রবীণ আলেম ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি

মিশরের কায়রোতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও প্রবীণ আলেম ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি ইন্তেকাল করেন ৮ এপ্রিল (শনিবার)। ৯৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। 

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ড. সালামাহ দাউদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজ একজন বরেণ্য আলেমকে হারিয়েছে। ইসলামী জ্ঞানের জগতে তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজন্ম। তাঁর গভীর পাণ্ডিত্ব এ যুগে সত্যিই বিরল। রোজা অবস্থায় তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন।’ 

ড. ইবরাহিম আল-খাওলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তাকে আল-আজহারের প্রভাবশালী আলেমদের অন্যতম মনে করা হতো। 

১৯২৯ সালের ১৭ মে তিনি মিসরের গারবিয়া প্রদেশের মারকাজু সানতা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করে তিনি মাহাদ দাসুকে পড়াশোনা করেন। অতঃপর মাহাদ তানতায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়েন। ১৯৫২ সালে আল-আজহারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

১৯৭২ সালে তিনি বালাগাত ও নাকদ শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি এবং ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। 

তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে- মানহাজুল ইসলাম ফিল হায়াত, লুজুমিয়্যাতু আবিল আলা, আস-সুন্নাতু বায়নান লিল কোরআন, আত-তারিদু ফিল কোরআনিল কারিম, মুতাশাবিহুল কোরআন।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের প্রধান মাওলানা রাবে হাসানি নদভী

ভারতের প্রখ্যাত আলেম, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের প্রধান, ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালক মাওলানা রাবে হাসানি নদভী ইন্তেকাল করেন ১৩ এপ্রিল, ২১ রমজান (বৃহস্পতিবার)। 

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদদের একজন। তিনি সামাজিক জীবনে ইসলামী অনুসাশনের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন, বর্তমানে মানুষ নামাজ রোজার মধ্যেই ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, এবং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ইসলামকে উপেক্ষা করে চলে। তিনি বিয়েতে যৌতুকের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এর বিপরীতে বাবার সম্পদে মেয়েদের অধিকার নিশ্চিতের প্রতি জোর দিতেন।

তিনি বলতেন, ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পথনির্দেশনা প্রদান করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল হারাম বাছ-বিচার করে চলা একজন মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী ১৯২৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মুফাক্কিরে ইসলাম খ্যাত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর ভাগিনা। তিনি অনেক গ্রন্থেরও লেখক ছিলেন।

তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী মক্কা মুকাররমার সদস্য ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ইসলামী সাহিত্য সংস্থা সৌদি আরবের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামিক রিসার্চ অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং কাউন্সিল, লখনউর ধর্মীয় শিক্ষা কাউন্সিল এবং ইসলামিক ফিকহ একাডেমী ভারতের পৃষ্ঠপোষকদের একজন ছিলেন।

তিনি নিজের পারিবারেই প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামাতে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে নদওয়াতে উচ্চতর শিক্ষা সমাপ্ত করেন, এরপর ১৯৪৮ সালে এক বছর দারুল উলুম দেওবন্দে ছিলেন। পড়াশোনা শেষে ১০৪৯ সালে নদওয়াতুল উলামাতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

এরপর তিনি ১৯৫০-১৯৫১ পর্যন্ত দাওয়াত ও তালিমের কাজে সৌদি আরব ও হিজাজ অঞ্চলে অবস্থান করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার আরবি ভাষা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। আরবি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ইন্ডিয়া উত্তরপ্রদেশ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

১৯৯৩ সালে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের জুন মাসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাবেক সভাপতি কাজী মুজাহিদুল ইসলাম কাসমির মৃত্যুর পর তিনি সর্বসম্মতিক্রমে এর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৯৭৩ সালে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ইসলামি শরিয়া আইন সংরক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড গঠিত হয়। এর মাধ্যমে মুসলিম ধর্মাবলম্বী সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা হয়। ভারতীয় মুসলিমদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, পণ্ডিত, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিরা এর সদস্যদের মধ্যে আছেন।

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী আমেরিকা, জাপান, মরক্কো, মালয়েশিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বহু আরব, ইউরোপীয় ও আফ্রিকান দেশ ভ্রমণ করেছেন।

নামাজে ইমামতির সময় মিশরের জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিলের ইন্তেকাল

মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন মিশরের জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে নামাজে ইমামতি করার সময় ইন্তেকাল করেন তিনি।

আমেরিকা যাওয়ার কয়েকদিন আগে ১০ এপ্রিল কারী আবদুল্লাহ কামিলের একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করে বলেন, আল্লাহ আমাকে একটি পুত্র দিয়েছেন যার নাম আমি সুফিয়ান রেখেছি।

শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামিল ১৯৮৫ সালে মিসরের আল-ফাইউম প্রদেশের ইউসুফ সিদ্দিক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। ছোটবেলায় ব্রেইল পদ্ধতিতে পুরো কোরআন হিফজ করেন। এরপর ২০০৫ সালে আল-ফাইউম বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল উলুম কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে তিনি আল-ফজর চ্যানেলে সম্প্রচারিত কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

মরহুম শায়খ আবদুল্লাহ চলতি বছরের রমজানে ২৪ বার পবিত্র কোরআন খতম করেছেন। গত বছর তিনি ২৮ বার খতম করেছিলেন।’

শায়খ আবদুল্লাহ কুয়েত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ গত রমজানে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সেন্টার ও টিভি-চ্যানেলে তিনি নিয়মিত ইসলামী আলোচনা করতেন। মনমুগ্ধকর তিলাওয়াতের জন্য শায়খ আবদুল্লাহ অনলাইন ও অফলাইন সবখানে খুবই জনপ্রিয়। ইউটিউব চ্যানেলে তার তিলাওয়াতের অনেক ভিডিও রয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার তিলাওয়াত নিয়মিত সম্প্রচার হয়। 

মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়েখ মুহাম্মদ খলিলের ইন্তেকাল

মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইন্তেকাল করেন ৮ মে (সোমবার)। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবার ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময়।

তিনি মসজিদে নববীতে তারাবি নামাজের ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।  শায়খ মুহাম্মদ খলিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ও তার ভাই মাহমুদসহ তার পরিবার থেকে দুজন মসজিদে নববীর ইমাম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। তার ভাইও গত বছর ইন্তেকাল করেছেন।

পাঁচ বছর আগে তার আরেক ভাই আহমদ ইন্তেকাল করেন। তিনিও সৌদি আরবের জনপ্রিয় কারীদের একজন ছিলেন। মসজিদে নববীর এই ইমামের ইন্তেকালে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা শোক প্রকাশ করেছেন।

শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল তার সুললিত তেলাওয়াতের কারণে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত ছিলেন। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

আলজেরিয়ার প্রবীণ আলেম শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত 

আলজেরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী শীর্ষ আলেম শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ইন্তেকাল করেন ১৪ জুন (বুধবার)। ১০৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। 

তিনি ছিলেন ফরাসি উপনিবেশবিরোধী বিপ্লবের অন্যতম নেতা ও আলজেরিয়ান ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ফরাসি উপনিবেশবিরোধী মুক্তি আন্দোলনের সময় তিনি মুক্তি বাহিনীর বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন।

আলজেরিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন আলজেরিয়ার জাতীয় চাঁদ দেখা ও ইসলামী সময় নির্ধারণকারী মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটির প্রধান। মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করুন এবং তাঁকে তাঁর প্রশস্ত জান্নাতের অধিবাসী করুন।

শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ১৯১৭ সালে আলজেরিয়ার বেজাইয়া প্রদেশের তামাকরাহ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার দাদা শায়খ ইয়াহইয়া আইদালির তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। এরপর সাইয়িদি আহমদ বিন ইয়াহইয়াহ উমালুর কাছে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। কনস্টানটিনোপলের কাছে বালাহমালাবির খানকা ও শায়খ ইবনে বাদিসের উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ফিকাহ, তাফসিরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পড়েন।

এরপর ফরাসি উপনিবেশবিরোধী মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার পর তিনি মুক্তি বাহিনীর বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে আলজাত নিজ দেশের মুক্তি সংগ্রামের সমর্থন জোগাড় করতে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে যান। সেখানে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফিসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন এবং রাজধানী আলজেয়ার্সে শিক্ষকতা শুরু করেন।

ইসলামের প্রচার-প্রসার, মালেকি ফিকাহের চর্চা ও বিস্তারের পাশাপাশি তিনি আমৃত্যু জাতীয় ফতোয়া কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তুরস্কে নকশবন্দি শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি 

তুরস্কের নকশবন্দি তরিকার শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি ইন্তেকাল করেন ১৫ জুলাই (বুধবার)  তিনি ছিলেন নকশবন্দি মানজিল তরিকার প্রবীণ শায়খ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর জানাজার ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে বিপুল পরিমাণ মানুষকে জানাজার নামাজে অংশ নিতে দেখা যায়।

শায়খ আল-হুসাইনি ১৯৪৯ সালের ১ মে তুরস্কের আদিয়ামান শহরের মানজিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি জামাতে মানজিলের মুরশিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শায়খ মুহাম্মদ রাশিদ আওরালের মাধ্যমে নকশবন্দি মানজিল জামাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আদিয়ামান মানজিল গ্রামের দিকে সম্পৃক্ত করে এর নামকরণ করা হয়।

১৯৮০ সালের সামরিক বিপ্লবের পর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে আধ্যাত্মিক দলটির কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। সামাজিক প্রভাব ও শিষ্যের সংখ্যার দিক থেকে মানজিল তুরস্কের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক দলগুলোর অন্যতম। 

ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. আলি আল-সালুস

ইসলামী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ শায়খ ড. আলি আল-সালুস ইন্তেকাল করেন ৮৯ বছর বয়সে। তিনি আরববিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ফিন্যান্স ও অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

সর্বশেষ তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। 

ড. আলি বিন আহমদ আলি আল-সালুস ১৯৩৪ সালে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। কায়রোর বিশ্বখ্যাত কুল্লিয়াতু দারুল উলুম থেকে ১৯৫৭ সালে লিস্যান্স ও ১৯৬৯ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময় তিনি মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর কুয়েতের হাই স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৮১ সাল থেকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টিতে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন।

এ সময় তিনি ফিকাহ ও উসুল বিষয়ক শিক্ষক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ মুহাম্মদ আবু জাহরা, শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ আলি হাসবুল্লাহ, শায়খ মুহাম্মদ আল-মাদানি ও শায়খ উমর আল-দাসুকি। 

ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর ফিকাহ বোর্ডের ফিকাহ ও অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দি এসেম্বলি অব মুসলিম জুরিস্ট-এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, লন্ডনে অবস্থিত কাতার ইসলামিক সেন্টারের ট্রাস্টি, মিসরের শরিয়া কমিশন ফর রাইটস অ্যান্ড রিফর্মের প্রধান। 

ড. আলি আল-সালুস ইসলামী ফিকাহ, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো, ফিকাহুল শিয়াহ আল-ইমামিয়্যাহ মাওয়াদিয়ুল খিলাফ বাইনাহু ও বাইনাল মাজাহিবিল আরবায়াহ, আসরুল ইমামাহ ফিল ফিকহিল জাফরি ওয়া উসুলিহি, আল-ইমামাতু ইনদাল জাফারিয়্যাহ ওয়াল আদিল্লাতু মিনাল কোরআনিল আজিম, হুকমু আমালিল বুনুকি ফিল ফিকহিল ইসলামি, আল-মুয়ামালুতুল মালিয়্যাহ আল-মুয়াসারাহ ফি মিজানিল ফিকহিল ইসলামি, মাওসুয়াতুল কাজায়া ফিকহিয়্যাহ আল-মুয়াসারাহ ওয়াল ইকতিসাদিল আল-ইসলামী ইত্যাদি। 

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল এইড কমিটির প্রধান হাজী গুলজার আজমী

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের আইনি সহায়তা কমিটির (লিগ্যাল এইড টিম) প্রধান জনাব হাজী গুলজার আজমী ইন্তেকাল করেন ২০ আগস্ট (শনিবার)। 

হাজী গুলজার আজমী জীবদ্দশায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল টিমের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ মুসলমানদের কারাদণ্ডের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। 

সিরিয়ার প্রভাবশালী আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি

সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ইন্তেকাল করেন ২৬ আগস্ট (শনিবার)। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর তিনি কাতারের দোহায় মারা যান। 

তিনি ছিলেন সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম। ইসলাম বিষয়ক আকর্ষণীয় বক্তব্য দিতেন তিনি। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও ইসলাম প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শায়খ আল-সাইরাফি ১৯৩০ সালে সিরিয়ার হামা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল সম্ভ্রান্ত ইলমী পরিবার।

ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষকে ইসলামের প্রতি ডাকতে অভ্যস্ত ছিলেন। তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও বিনয়ীভাব মানুষকে তার কাছে নিয়ে আসত। বিশুদ্ধ ভাষায় বক্তব্যের জন্য তিনি সবার মধ্যে সুপরিচিত ছিলেন। শায়খ মুহাম্মদ আল-হামিদ, শায়খ মুহাম্মদ আলী মুরাদসহ সমকালীন বিখ্যাত আলেমদের কাছ থেকে তিনি ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন।

১৯৫০ সালে তিনি দামেশক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইসলামী শরিয়াহ, সাহিত্য, দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। তরুণদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব গড়তে তিনি নিয়মিত হামা শহরের জামে আল-মাসউদে বক্তব্য দিতেন। তখনকার সময় বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক তরুণ ইসলামচর্চা শুরু করে।তখন তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে উঁচু পদের জন্য অফার করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৬৩ সালের মার্চে বাথ পার্টি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিলে তার ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। পরের বছর তিনি প্রথমে আরব আমিরাত যান। এরপর পুনরায় দেশে ফিরে কাতার চলে যান। আমৃত্যু সেখানে তিনি বিভিন্ন ইসলামী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকতা, দাওয়াতি কার্যক্রম, মসজিদের ইমামতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি মিসরে ইন্তেকাল করেন ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)। এর আগের দিন তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দীর্ঘ ৩১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ ড. রাতিব জুনাইদ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, শায়খ তাজ ১৯৮২-২০১৩ সাল পর্যন্ত একজন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটিতে ঐক্যের প্রাণ ছিলেন। ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি এই দেশের মুসলিমদের সেবায় কাজ করেছেন। আমি নিজেও তার সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করেছি। যারা ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন, তিনি কতটা রসিক ও উদার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শায়খ আল-হিলালি সব সময় কমিউনিটির সেবার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। তিনি খুব সহজেই তার বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণকে আকর্ষণ করতে পারতেন। মুফতি ও ইমামের দায়িত্ব থেকে অবসরের পর তিনি উত্তর আফ্রিকায় ধর্মীয় তাৎপর্য নিয়ে ঐতিহাসিক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হন এবং মিসরের গ্রামাঞ্চলে মানবিক কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মুসলিমদের শিক্ষা, পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।

শায়খ তাজুদ্দিন আল-হিলালি মিসরের সাওহাজ অঞ্চলের সামাতে ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে পবিত্র কোরআন হিফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া ও আইন বিষয়ে ‘আলামিয়াহ’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর আরবি ভাষা ও ফিকহুল মুকারিন বিষয়ে উচ্চতর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। তিনি মিসরের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইমাম হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজে আরবি ভাষা ও ইসলামি ফিকহের শিক্ষকতা করেন।

১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে শায়খ জায়দান শারীরিক অসুস্থতার কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল ১৯৮৮ সালে শায়খ আল-হিলালিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করে। মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০০৫ সালে শায়খ আল-হিলালিকে বর্ষসেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদের ইমামতি থেকে অব্যাহতি নেন।

সাহারানপুর মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি

ভারতের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাজাহেরুল উলুম, সাহারানপুরের মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি ইন্তেকাল করেন ৬ অক্টোবর (শুক্রবার)। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)-এর নাতি ও মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.)-এর জামাতা।

মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি (রহ.) ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসায় তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে দাওয়ারায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭০ সালে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৯৩ সাল থেকে তিনি মাদারাসাটির ‘আমিন আম’ (মহাপরিচালক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন অনন্য যোগ্যতার অধিকারী নিভৃতচারী একজন আলেম। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতি এবং দ্বিনি ইলম বিস্তারে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলামা হিন্দের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।

কোরআন, হাদিস, দাওয়াত, তাসাউফসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাহরিকে আজাদিয়ে হিন্দ, বুখারি শরিফ, মাকতুবাতে ইলমিয়্যাহ, হজরত জি সালেস কি ওয়াফাত আওর ফিতনুন বারসাত, আপবিতি খুদ নশত, আকাবির কে খুতুত, সাওয়ানেহে হজরত মাওলানা ইনআমুল হাসান, তারিখে মাশায়েখে চিশত, উলামায়ে মাজাহেরে সাহারানপুর, মাকতুবাতে তাসাউফ, মাকতুবাতে শায়খসহ তার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। গত বছর তার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়।

 

 

সালতামামি ২০২৩: এ বছর যে নামগুলো ছিল গুগল সার্চের শীর্ষে



<div class="paragraphs"><p>| ছবি: রয়টার্স ও ইনস্টাগ্রাম</p></div>

ম্যাথিউ পেরি, শেনেইড ও’কনর: একজন প্রতীক বন্ধুত্বের আরেকজন প্রতিবাদের। দুজনেরই জীবনাবসান হয়েছে এ বছর 

| ছবি: রয়টার্স ও ইনস্টাগ্রাম

 

 

ইসরায়েল হামাস যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে যদি আপনি গত কয়েকমাসে গুগলে খোঁজ করে থাকেন, তবে আপনি একা নন।

এই সার্চ জায়ান্ট প্রতি বছরের মতো এবারও বছরের ট্রেন্ডিং সব অনুসন্ধান নিয়ে ‘ইয়ার ইন সার্চ’ প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গোটা বিশ্বের মানুষ গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ও বিশ্বব্যাপী বছরের ট্রেন্ডিং সংবাদ তালিকার শীর্ষে ছিল “ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ”। কেবল যুক্তরাষ্ট্রে ‘কী’ বা ‘কেন’ দিয়ে শুরু হওয়া প্রশ্নের শীর্ষে ছিল ‘হামাস কী?’, ‘ইসরায়েলে কী হচ্ছে?’, ‘কেন আক্রমণ করেছে হামাস?’।

ডুবোযান টাইটান, যা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে সমুদ্রযাত্রায় বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল, রয়েছে ট্রেন্ডিং সংবাদের দ্বিতীয় স্থানে। এরপরেই রয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে তুরষ্ক সিরিয়ায় হওয়া  বিধ্বংসী ভূমিকম্প, যার ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছে।

 

 

গুগলের বার্ষিক ‘ইয়ার ইন সার্চ’ এমন ব্যক্তিবর্গ ও ঘটনার একটি ‘স্ন্যাপশট’ যা কৌতূহলী করে তোলা ও মনোযোগ আকর্ষণ করা বিষয়গুলোকে এক তালিকায় নিয়ে এসেছে।

গুগলের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধের মতো বড় ঘটনার পাশাপাশি আমেরিকান ফুটবল লিগ এনএফএল-এর খেলা চলাকালীন খেলোয়াড় ডামার হ্যামলিনের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, বিখ্যাত সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’-এর অভিনেতা ম্যাথিউ পেরির মৃত্যু, এবং কাছাকাছি সময়ে প্রকাশিত বহুল আলোচিত দুটি সিনেমার মিশেল ‘বার্বেনহাইমার’ হল আরও কিছু ঘটনা যা নিয়ে ২০২৩ সালে প্রচুর অনুসন্ধান করেছে লোকজন।

হ্যামলিন, যিনি অ্যামেরিকান ফুটবল দল ‘বাফেলো বিলস’-এর ‘সেইফটি’ হিসেবে খেলতেন, তার গুরুতর আঘাত এনএফএল-এর নিরাপত্তা বিতর্ককে ফের জাগিয়ে তুলেছে, তিনি গুগলে ট্রেন্ডিং ক্রীড়াবিদদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। 

অন্যান্য যারা এ বছরের তালিকায় রয়েছেন উপরের সারিতে তাদের মধ্যে যথাক্রমে রয়েছেন মার্কিন অভিনেতা জেরেমি রেইনার, যিনি বছরের শুরুতে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন

 

নারীবিদ্বেষী ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেইট, বিখ্যাত ফরাসী ফুটবল খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপে ও আরেক এনএফএল তারকা ট্রাভিস কেলচি, সঙ্গীতশিল্পী টেইলর সুইফটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বার বার শিরোনাম হয়েছেন তিনি।  

এ বছর কিছু মানুষের মৃত্যু নাড়া দিয়েছে ভক্তদের মন, তাদের নামও প্রকাশ করেছে গুগল, যার মধ্যে রয়েছেন ‘কুইন অফ রক অ্যন্ড রোল’ খ্যাত গায়িকা টিনা টার্নার, বিখ্যাত অভিনেতা ম্যাথিউ পেরি ও আইরিশ সঙ্গীতশিল্পী শেনেইড ও’কনর।

ওয়ার্নার ব্রাদার্স-এর সিনেমা ‘বার্বি’ ও বিখ্যাত পরিচালক ক্রিস্টফার নোলান পরিচালিত ‘ওপেনহাইমার’ রয়েছে গুগলের ট্রেন্ডিং সিনেমা তালিকার শীর্ষে, ঠিক তার পরেই রয়েছে শাহরুখ খান অভিনিত বলিউড ব্লকবাস্টার ‘জাওয়ান’, রোমাঞ্চকর ক্রাইম থ্রিলার ‘সাউন্ড অফ ফ্রিডম’ আর অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘জন উইক: চ্যাপ্টার ৪’। 

মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এইচবিও’র  অ্যাকশন সারভাইভাল ড্রামা সিরিজ ‘দ্য লাস্ট অফ আস’, স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্সের ‘ওয়েনসডে’ আর ‘জিনি অ্যান্ড জর্জিয়া’ যথাক্রমে রয়েছে ট্রেন্ডিং টিভি শো’র শীর্ষে। 

এদিকে, জাপানি জুটি ইয়োসোবির গান “আইডল” ও মার্কিন গায়ক জেসন অ্যাল্ডিয়েনের বিতর্কিত “ট্রাই দ্যাট ইন আ স্মল টাউন” গান অনুসন্ধানের শীর্ষে রয়েছে।

মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের ট্রেন্ডগুলোতে দেখা গেছে আমাদের ভাষার ব্যবহার ও যোগাযোগের ধরনে এসেছে পরিবর্তন । ২০২৩ সালে অক্সফোর্ডের সেরা শব্দ নির্বাচিত হয়েছে “রিজ”, যা মানুষের ‘ক্যারিশমা’ কে নির্দেশ করে, এবং ‘অপবাদের সংজ্ঞা’ অনুসন্ধানে শীর্ষে ছিল শব্দটি, এই ক্যাটেগরিতে আরও ছিল ‘ইটস গিভিং’, ‘ক্রিঞ্জ’, আর ‘নো প্রিন্টার’।

 

২০২৩: শাহরুখের হাত ধরে দুরন্ত বলিউড, সঙ্গে ছিল দক্ষিণ

 

সাফল্য-ব্যর্থতা এবং গড়পরতা কাজ মিলিয়েই আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠে আবার দুরন্ত গতিতে ছুটছে বলিউড।

 

 

মহামারীর ধকল সামলে ভারতের হিন্দি সিনেমা চেনরূপে ফিরবে, এমন আশা ছিল ২০২৩ সালের শুরুতে। বছর শেষে দেখা গেছে, হিন্দি সিনেমা কেবল পুরনো ছন্দেই ফেরেনি, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা দেশে বছরজুড়ে দাপট দেখিয়েছেন শাহরুখ খান, রাণবীর কাপুর, সালমান খানরা।

বলিউডি জয়জয়কারে শামিল হয়েছে দক্ষিণও। তামিল-তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির মহাতারকা রজনীকান্ত, প্রভাস, বিজয় ধরে রেখেছেন সাফল্যের ধারাবাহিকতা ।

আবার কিছু সিনেমা চিত্রনাট্য, অভিনয় শিল্পী এবং তারকা নির্মাতার জন্য আলোচনায় থাকলেও সুবিধা করতে পারেনি আয়-রোজগারে। এই তালিকায় আছে শাহরুখের ‘ডানকি’, সালমানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’।

এ বছরই হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে বলিউডের দেওল পরিবার। আবার ব্যর্থ তারকার সংখ্যাও কম নয়।

 

 

 

সাফল্য-ব্যর্থতা এবং গড়পরতা কাজ মিলিয়েই আর্থিক মন্দা কাটিয়ে উঠে ফের দুরন্ত গতিতে ছুটতে শুরু করেছে বলিউড। বছর শেষে মুভি রেটিং সাইট-আইএমডিবি ২০২৩ সালের সবচেয়ে বেশি আয় করা ভারতীয় সিনেমার তালিকা তুলে ধরেছে। 

১. জওয়ান

video

২০২৩ সালে হিন্দি সিনেমার ‘ফেরার’ গল্প শুরু করেন শাহরুখ খান। চলতি বছর মুক্তি পাওয়া এ অভিনেতার দ্বিতীয় সিনেমা ‘জওয়ান’ রয়েছে সবচেয়ে বেশি আয়ের ভারতীয় সিনেমার তালিকার শীর্ষে।  আইএমডিবি এ সিনেমাকে বলছে ‘ব্লকবাস্টার’।

৩০০ কোটি রূপি বাজেটের ‘জওয়ান’ গত ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তির পর বিশ্ব্যব্যাপী আয় করেছে ১ হাজার ১৫২ কোটি রুপি। এর মধ্যে ভারত থেকে আয় হয়েছে ৬৪০.৮ কোটি রুপি।

শাহরুখ ও গৌরী খানের প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনা এবং দক্ষিণী নির্মাতা অ্যাটলি কুমারের পরিচালনায় তুমুল অ্যাকশনের এ সিনেমায় শাহরুখকে পাওয়া গেছে দ্বৈত চরিত্রে। নায়িকা ছিলেন দক্ষিণী সুপারস্টার নয়নতারা। আরও অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, বিজয় সেতুপতি, সানিয়া মালহোত্রা, প্রিয়ামণি, সুনীল গ্রোভার, যোগী বাবু। 

২. পাঠান

video

‘পাঠান’ চলতি বছরে কেবল শাহরুখ খানেরই প্রথম সিনেমা নয়; বলা যায় যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনা ও নির্মাতা আনন্দ পাঠানের এই সিনেমা দিয়েই বলিউডের হারানো দিন ফিরিয়ে আনার সূচনা করেন শাহরুখ।

২৫০ কোটি রুপি বাজেটের এই সিনেমা জানুয়ারির ২৫ তারিখ মুক্তি পায়। সিনেমাটি ঘরে তুলেছে ১০৫০.৮ কোটি রুপি; এর অর্ধেক, অর্থাৎ ৫৪৩.৪ কোটি রুপি আয় হয়েছে ভারত থেকে।

এ সিনেমায় শাহরুখের নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন। খলনায়কের অভিনয়ে জন আব্রাহাম নিজেকে তুলে ধরেছেন দারুণ দক্ষতায়। তবে মুক্তির আগেই সিনেমাটি দীপিকার গেরুয়া রঙের পোশাকের জন্য নানা মহলের রোষানলে পড়েছিল। ‘পাঠন’কেও ‘ব্লকবাস্টার’ বলছে আইএমডিবি।

৩. অ্যানিমাল

video

গেল বছর বিশাল বাজেটের ‘ব্রক্ষ্মাস্ত্র’ সিনেমা দিয়ে বলিউডকে কিছুটা আলো দেখিয়েছিলেন রাণবীর কাপুর। এবার ‘অ্যানিমাল’ দিয়ে ‘কামাল’ করে দিয়েছেন কাপুর পরিবরের এই প্রজন্মের ছেলেটি।

অ্যাকশন, রক্তপাত, ধারালো সংলাপ, যৌনতা, নারী বিদ্বেষী গল্পের বিতর্ককে সঙ্গে নিয়ে সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা পরিচালিত ‘অ্যানিমাল’ ছুটছে।

দেড়শ কোটি রুপির বাজেট নিয়ে ভাঙ্গা হাত দিয়েছিলেন সিনেমা নির্মাণে। ‘টি-সিরিজের’ প্রযোজনায় মুক্তির পর এক মাসে এই সিনেমা ঘরে তুলেছে ৮৮৪.২ কোটি রুপি; এর মধ্যে ভারত থেকে আয় করেছে ৫৪০.৫ কোটি রুপি।

রাণবীর, রাশমিকা মানাদান, অনিল কাপুরের এই সিনেমা আরও আলোচিত হয়েছে ধর্মেন্দ্র পুত্র ববি দেওলের কারণে। খল চরিত্রে ববির ২০ মিনিটের অভিনয় ফিরিয়ে এনেছে তার হারানো ক্যারিয়ার।

৪. গদর ২

video

ধর্মেন্দ্রর বড় ছেলে সানি দেওলের ‘গদর ২’ এ বছরের আরেকটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র। সিনেমাটি মুক্তি পায় গত ১১ অগাস্ট।

মাত্র ৮৫ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ৬৮৭.৮ কোটি রুপি; তবে এই আয়ের বেশিরভাগ, ৫২৫ কোটি রুপি এসেছে ভারত থেকেই।

অনিল শর্মার প্রযোজনা-পরিচালনায় ‘গদর ২’ দিয়ে ম্রিয়মাণ ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করেছেন সানি। এ সিনেমাতেও সানির সঙ্গী সিনেমান প্রথম কিস্তির নায়িকা আমিশা প্যাটেল, যাকে প্রায় ভুলতেই বসেছিল হিন্দি সিনেমার দর্শকরা। আইএমডিবির তালিকায় ‘গদর ২’ বছরের ‘ব্লকবাস্টার’ সিনেমা।

৫. লিও

video

দক্ষিণী সিনেমা ‘লিও’ তেমন আলোচনায় না থাকলেও আইডএমডিবির সর্বোচ্চ আয়করী ভারতীয় সিনেমার তালিকায় এর অবস্থান পঞ্চমে।

১৯ আক্টোবর মুক্তি পাওয়া দক্ষিণি সুপারস্টার থালাপতি বিজয়ের ২২৫ কোটি রুপি বাজেটের ‘লিও’ ৬১৮.৫ কোটি রূপি আয় করেছে।

তবে মুক্তির আগেই স্যাটেলাইট, ডিজিটাল ও মিউজিক স্বত্ব বিক্রি করে ২১৫ কোটি রুপি আয় করে খবরের শিরোনাম হয়েছিল ‘লিও’।

দক্ষিণের খ্যাতনামা পরিচালক লোকেশ কনগরাজ এ সিনেমাটি পরিচালনা করছেন, প্রযোজনায় ছিলেন এস এস ললিত কুমার ও জগদীশ। তামিল সিনেমাটিকে ‘ব্লকবাস্টার’ ’ বলছে আইএমডিবি।

৬. জেলার

video

‘ব্লকবাস্টার’ সিনেমা ‘জেলার’ দিয়ে দুবছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন দক্ষিণের মহাতারকা রজনীকান্ত।

১৮০ কোটি রুপি বাজেটের ‘জেলার’ নানা দেশ থেকে আয় করেছে ৬০৫.৮ কোটি রুপি। এ সিনেমা মুক্তির আগেই ১২৩ কোটি রুপি আয় করে।

সান পিকচার্সের প্রযোজনায় রজনীকান্ত অভিনীত ১৬৯তম সিনেমা হল ‘জেলার’। নেলসন দিলীপকুমার পরিচালিত 'জেলার' একটি অ্যাকশন ফিল্ম।

গত ১০ অগাস্ট মুক্তি পাওয়া ‘জেলার’ থালাইভা খ্যাত রজনীকান্তের ‘এনথিরান’ সিনেমার সিক্যুয়েল, যা ২০১০ সালে ব্লকবাস্টার হয়েছিল।

‘জেলার’-এ এই মহাতারকার সঙ্গে শিব রাজকুমার, জ্যাকি শ্রফ, সুনীল, রাম্য কৃষ্ণন, তামান্না ভাটিয়া, যোগী বাবু, বসন্ত রবি, মোহনলালের মত তারকাদের পাওয়া গেছে।

৭. সালার

video

বছর শেষে দক্ষিণী সিনেমা ‘সালার’ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে ভাটা থেকে জোয়ারে ফিরিয়েছেন দক্ষিণী তরাকা প্রভাস রাজু।

‘কেজিএফ’ নির্মাতা প্রশান্ত নীল তার ‘সালার: পার্ট ওয়ান সিজফায়ার’ সিনেমাটি তৈরি করেন ৩০০ কোটি রূপিতে। ২২ ডিসেম্বর মুক্তির পর থেকে ‘পিরিয়ডধর্মী’ অ্যাকশন সিনেমা ‘সালার’ বিশ্বের নানা দেশে ৫০০.১ কোটি রুপির ব্যবসা করেছে।

সিনে বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা ‘সালার’ এর মধ্য দিয়ে ‘বাহুবলীর’ প্রভাস ফিরে এসেছেন। ধারণা করা হয়েছিল, একদিন আগে মুক্তি পাওয়া শাহরুখের ‘ডানকি’র দাপটে বিপাকে পড়তে পারে ‘সালার’। কিন্তু ঘটেছে উল্টো।

শাহরুখের বছরের তৃতীয় সিনেমা থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে ‘সালার’। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে বিজয় কিরঙ্গাডুর।

৮. টাইগার থ্রি

video

দর্শক ও সিনে বিশ্লেষকদের ব্যাপক আগ্রহের জায়গা নিয়েছিল বলিউডি সিনেমা ‘টাইগার থ্রি’। ভাইজান সালামান খান ও তার সাবেক প্রেমিকা নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফের এ সিনেমায় অ্যাকশন, চিত্রনাট্য, নাচ-গান কোনোদিকেই খামতি ছিল না। কিন্তু আয়ের দিক দিয়ে তালিকার প্রথম দিকে থাকতে পারেনি ‘টাইগার থ্রি’।

‘টাইগার’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় কিস্তির বাজেট ছিল আড়াইশো কোটি রুপি। আয় হয়েছে ৪৬৬ কোটি রূপি। এই আয়ের মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ২৮৪.২ কোটি রুপি।

গুপ্তচর অবিনাশ সিং রাঠোর ও পাকিস্তানি গুপ্তচর জোয়ার গল্পের এই সিনেমটা আইএমডিবির ‘হিট’ তালিকায় রাখা হয়েছে। আদিত্য চোপড়া প্রযোজিত স্পাই ইউনিভার্সের এই সিনেমা মুক্তি পায় ১১ নভেম্বর। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মণীশ শর্মা। 

৯. আদিপুরুষ

video

সিনেমায় অতিরিক্ত ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের ব্যবহার, সংলাপ, দৃশ্য এবং রাবণের লুক নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সমালোচনায় জেরবার হয়েছে ‘আদিপুরুষ’।

চলতি বছরের ১৬ জুন মুক্তি পায় ‘টি-সিরিজের’ সিনেমাটি। নির্মাতা ওম রাউত হিন্দি, তামিল, তেলেগু, কন্নড় ও মালয়ালাম ভাষায় রাম-রাবণ-সীতার কাহিনী তুলে ধরেন এ সিনেমায়।

এখানে ‘রাম’ হয়েছেন দক্ষিণী সুপারস্টার প্রভা রাজু, ‘সীতা’র চরিত্রে বলিউডের কৃতি শ্যানন এবং ‘রাবণ’ হন সাইফ আলী খান।

৪০০ কোটি রুপি খরচের পুরোটা তুলতে পারেনি ‘আদিপুরুষ’। সারা বিশ্বে মুক্তির পর এ সিনেমাটি আয় করেছে ৩৯৫ কোটি রুপি। অথচ মুক্তির আগে সিনেমাটি নানা মাধ্যম থেকে ২৪০ কোটি রুপি আয় করেছিল।

আইএমডিবি ‘আদিপুরুষ’কে বলছে ‘ফ্লপ’ সিনেমা।

১০. রকি আউর রানি কি প্রেম কাহানি

video

আইএমডিবির ‘হিট’ তালিকার সিনেমায় ‘রকি আউর রানি কি প্রেম কাহানি’ বছরের অন্যতম আলোচিত সিনেমা। এর মূল কারণ এই সিনেমা দিয়ে নির্মাতা-প্রযোজক করণ জোহর সাত বছর পর নির্মাণে ফিরেছেন।

দেড়শ কোটি রুপি বাজেটের ‘রকি আউর রানি কি প্রেম কাহানি’ বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ৩৫৭ কোটি রুপি। আর ভারত থেকে এই সিনেমার আয়ের অংক ১৫৩.৫ কোটি রুপি।

বাঙালি ‘চ্যাটার্জি’ ও পাঞ্জাবি ‘রান্ধাওয়া’ পরিবারের দুই ছেলেমেয়ের প্রেম এবং পরিণয়ে দুই পরিবারের আলাদা আলাদা সংস্কৃতির জটিলতা সিনেমায় তুলে ধরেছেন করণ।

এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন আলিয়া ভাট ও রাণবীর সিং। হিন্দি সিনেমার বর্ষীয়ান তারকা জয়া বচ্চন, শাবানা আজমী, ধর্মেন্দ্রকেও এক ছাদের নিচে এনেছেন নির্মাতা।

এছাড়া কলকাতার চূর্ণি গাঙ্গুলি ও টোটা রায় চৌধুরীর অভিনয় এই সিনেমায় প্রশংসিত হয়েছে। ২৮ জুলাই মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন করণ জোহর, অপূর্ব মেহতা ও হিরো জহর।

 

 

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

এই তো কদিন আগে, জেগেছিল কিছু প্রাণ কোটি প্রাণের ভিড়ে সগৌরবে; এখন আর নেই। থেমে গেছে কোলাহল, চলে গেছে অনন্তলোকে, তবুও সেই কথা-সুর-গান আজও কানে ভাসে।

নিজ কর্ম দিয়ে যারা জগতে আলো ছড়ান, বুদ্ধিদীপ্ত মনন দিয়ে হন সমাজ বিনির্মাণের কারিগর, ভাস্বর হয়ে ওঠেন মানবমনে, তারা চিরস্মরণীয়।

চলতি বছর এমনই প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে অনেক; জাতি অপূরণীয় ক্ষতি আর শোকের সাগরে ভাসলেও তাদের ছড়ানো দ্যুতিই সঞ্চার করছে নতুন প্রাণের, নতুন ভবিষ্যতের।

স্থপতি, শিল্পী, শিক্ষক, রাজনীতিক আর স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধা থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে অনেক গুণীজনকে হারিয়েছে দেশ। অসংখ্য পাওয়ার ভিড়ে সময়ের স্রোতে হারানো সেই মুখগুলো দেখে নেওয়া যাক একপলক।


মোবাশ্বের হোসেন

<div class="paragraphs"><p>স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। </p></div>

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত ২ জানুয়ারি প্রাণ হারান দেশের স্থাপত্য, ক্রীড়া, পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের অগ্রপথিক মোবাশ্বের হোসেন।

তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা এই স্থপতি দেশের বেশ কয়েকটি আলোচিত স্থাপনার কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন, প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস এবং আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাবেক এই সভাপতি সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহ-সভাপতিও ছিলেন মোবাশ্বের।

সুফিয়া খাতুন

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

২০২১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে’ গ্রন্থের লেখক, শিক্ষক সুফিয়া খাতুন মারা যান গত ৭ জানুয়ারি।

সমাজসেবাধর্মী নানা কর্মকাণ্ডেও নিয়োজিত ছিলেন তিনি, গড়ে তুলেছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারী সঙ্গিনীদের নিয়ে ‘উষা মৈত্রী’ সংগঠন। যুক্ত ছিলেন ‘হেমন্তিকা’ নামের সংগঠনের জন্মপ্রক্রিয়া থেকে। সমমনা আগ্রহী নারীদের সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধাবাস প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে ‘হেমন্তিকা’। দুটি সংগঠনের নামই তার দেওয়া।

হাবিব উল্লাহ খান

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাবিব উল্লাহ খান মারা যান গত ৭ জানুয়ারি। সত্তরের দশকে তথ্যমন্ত্রী এবং আশির দশকে পাটমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত ছিলেন হাবিব। ১৯৭৯ সালে তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-৫ (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫) আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

তাজুর মুল্লুক

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুর মুল্লুক মারা যান গত ১৪ জানুয়ারি। স্বৈরাচার বিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের রাজপথের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন কৃষক রাজনীতিও করেছিলেন। সবশেষ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

আজিজার রহমান

<div class="paragraphs"><p>আজিজার রহমান</p></div>

ভাষাসৈনিক জয়পুরহাটের আজিজার রহমান বার্ধক্যজনিত কারণে গত ১৫ জানুয়ারি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৫। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন বলে এলাকায় তাকে সবাই চেনে আজিজার ডাক্তার নামে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জয়পুরহাটে যে কয়জন বিশেষ অবদান রেখেছিলেন তাদের একজন ছিলেন আজিজার।

১৯২৮ সালের ৪ মার্চ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঝারঘড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরবতীতে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যান্য স্থানের মত আক্কেলপুরেও ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে সেখানে তিনি সম্পৃক্ত হন।

পরবর্তীকালে ৬ দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, অসহযোগ, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচনে সক্রিয় থাকেন এবং ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ১৯৭১ সালে তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান। সেখানে আসাম রাজ্যের তেজপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন।

জহুরুল হক

<div class="paragraphs"><p>বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী</p></div>

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত শেরপুরের শ্রীবরদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা জহুরুল হক মুন্সীই একমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি দুইবার ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পেয়েছেন।

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর জামালপুর ক্যাম্পে দেড় হাজার পাকিস্তানি সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান সংবলিত চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে তাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন জহুরুল হক মুন্সী। তার জন্ম জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ গ্রামে। পরে তিনি স্থায়ীভাবে শ্রীবরদীতে বসবাস করেন।

মোছলেম উদ্দিন

<div class="paragraphs"><p>মোছলেম উদ্দিন আহমদ</p></div>

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন ২০১৩ সাল থেকেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক মোছলেম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপ-নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও বোয়ালখালী) আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রেজা আলী

<div class="paragraphs"><p>রেজা আলী, বিটপী</p></div>

সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী রেজা আলী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বিটপী গ্রুপের কর্ণধার রেজা আলী ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-৭ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বিটপী অ্যাডভার্টাইজিং প্রতিষ্ঠান করেন। এ কোম্পানির মায়া বড়ি, রাজা কনডম ও ওরস্যালাইন এর ক্যাস্পেইন সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য খাতে সুদূর প্রসারী প্রভাব রাখে। এছাড়া বাটা, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, কোকাকোলা, রেকিট বেনকিজার, গ্রামীণ ফোনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে সাংস্কৃতিক লোকগাঁথা যুক্ত করার কাজে গভীরভাবে তিনি জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশের অ্যাডভার্টাইজিং শিল্পের অগ্রদূতদের একজন রেজা আলী পরে পোশাক শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত হন। মিসামি গার্মেন্টস দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯৬০ সালে আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক বছর কারাবাস করেন তিনি। প্রাদেশিক সম্মেলনে গঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

আ. রউফ চৌধুরী

<div class="paragraphs"><p>রউফ চৌধুরী</p></div>

আ. রউফ চৌধুরী র‍্যাংগস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন।

১৯৩৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করা রউফ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) স্লোয়ান স্কুল অব বিজনসের স্নাতক। ১৯৭৯ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। দুটি মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কয়েক বছর রেসিডেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দীর্ঘ ১৫ বছর কাজ করেন যমুনা অয়েল কম্পানিতে।

পরে র‌্যাংগস গ্রুপ, র‌্যানকন গ্রুপ ও সি রিসোর্সেস গ্রুপের অধীনে ৫২টি কোম্পানি গড়ে ওঠে রউফ চৌধুরীর নেতৃত্বে। অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিকম, ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যাংক ও বীমাসহ বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে আছে এসব কোম্পানির ব্যবসা।

নাজমুল হুদা

<div class="paragraphs"><p>নাজমুল হুদা।</p></div>

আলোচিত রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জীবনাবসান হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এক সময়ের তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা শেষ দিকে দল থেকে ছিটকে পড়ে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে দল গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছাকাছি আসেন। কয়েক বছরের আইনি লড়াই শেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তার দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়। রাজনীতির পাশাপাশি রাজধানীর ৩৩ তোপখানা রোডে ‘চেন্সারি চেম্বার’ নামে অফিস খুলে আইন সেবা দিতেন নাজমুল হুদা।

মাসুম বাবুল

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

নৃত্যপরিচালক মাসুম বাবুল মারা যান ৬ মার্চ। মৃত্যুর আগে প্রায় দেড় বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। দীর্ঘ সিনেমা জীবনে তিনি প্রায় দেড় হাজারের বেশি সিনেমার কোরিওগ্রাফার ছিলেন। তিনবার নৃত্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

শামীম সিকদার

<div class="paragraphs"><p>ভাস্কর শামীম সিকদার।</p></div>

স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী শামীম সিকদার মারা যান ২১ মার্চ। সিরাজ সিকদারের বোন শামীম সিকদারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম সিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সাবেক অধ্যাপক।

শামীম সিকদারের জন্ম ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর। তিনি গত শতকের আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা শুরু করেন। অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি তৈরি করেন শামীম সিকদার। জগন্নাথ হলের সামনে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যটিও তারই করা। ২০০০ সালে একুশে পদক পান তিনি।

খালেদা মনযূর-ই-খুদা

<div class="paragraphs"><p>খালেদা মনযূর-ই-খুদা। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে</p></div>

ভাষা সংগ্রামী, লেখক খালেদা মনযূর-ই-খুদা ৮৯ বছর বয়সে গত ২৫ মার্চ প্রয়াত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একজন সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। খালেদা ফেন্সি খানম নামেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। ড. কুদরত ই খুদার ছেলে মনযুর-ই-খুদাকে বিয়ের পর তিনি খালেদা মনযূর-এ-খুদা নামে পরিচিতি পান।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তিনি আহত ভাষা সংগ্রামীদের রক্ত দেন। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন মিছিলে তার সরাসরি অংশগ্রহণের ফটোগ্রাফও পাওয়া যায়। বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ‘বিজয়াঙ্গন’ মিউজিয়ামে রাখা একটি ছবিতে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে কালো বই হাতে সাদা শাড়ি পরা ফেন্সি খানমকে জাহানারা ইমামের সঙ্গে দেখা যায়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বার্তা আসতেই তিনি স্কুলের ইউনিফরম ও জামা দিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরি করে পল্টনের আওয়ামী লীগ অফিসে উত্তোলন করেন। পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তানের বেতার ‘শিল্পী’ এবং টেলিভিশনে ‘মহিলা অঙ্গন’ নামে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। ওই সময়ে নারীদের জন্য তিনি ‘গৃহিণী শিল্পকলা একাডেমী’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ‘চীনকে চিনে এলাম’, ‘সভ্য দেশের বুনো কাহিনী আমেরিকার কাল্ট’, ‘আপন ভুবনে’ তার লেখা বইয়ের মধ্যে কয়েকটি। চলতি বছর সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

নূরে আলম সিদ্দিকী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সত্তরের দশকের ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী মারা ২৯ মার্চ। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ যে চার ছাত্র নেতাকে সে সময় ‘চার খলিফা’ হিসেবে অভিহিত করা হত তাদের অন্যতম ছিলেন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী। মুজিববাহিনীর অন্যতম সংগঠকও ছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

রোকিয়া আফজাল রহমান

<div class="paragraphs"><p>রোকিয়া আফজাল রহমান</p></div>

বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যাংক ম্যানেজার, নারী উদ্যোক্তা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান মারা যান গত ৫ এপ্রিল।

দেশের অন্যতম নারী উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল আরিস হোল্ডিংস, ইমান কোল্ড স্টোরেজেও বিনিয়োগ করেন। তিনি ডেইলি স্টারের মূল কোম্পানি মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন এবং প্রথম আলোর মূল কোম্পানি মিডিয়া স্টারের পরিচালক ছিলেন।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এশিয়ান উইম্যান ইউনির্ভাসিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রোকিয়া আফজাল। বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন কয়েকবার। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ব্র্যাক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল, বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

<div class="paragraphs"><p>জাফরুল্লাহ চৌধুরী। </p></div>

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা যান গত ১১ এপ্রিল। স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

একাত্তরে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় আত্মনিয়োগকারী জাফরুল্লাহর পরে বড় অবদান ছিল জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে কম খরচে দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করায়ও তার অবদান স্মরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শ পাওয়া জাফরুল্লাহ রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা ভূমিকা রেখে চলছিলেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।


পঙ্কজ ভট্টাচার্য

<div class="paragraphs"><p>ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ছবি ফেইসবুক থেকে নেওয়া।</p></div>

প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য মারা যান গত ২৩ এপ্রিল। বামপন্থি আদর্শে বিশ্বাসী এ রাজনীতিকের জন্ম ১৯৩৯ সালের অগাস্টে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে বাম দলের (ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিটিউনিস্ট পার্টি) গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন।

ষাট দশকের ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৭ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি সেলেই রাখা হয়। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বাংলাদেশের সব আন্দোলন-রাজনৈতিক পালাবদলের প্রত্যক্ষদর্শী এই রাজনীতিবিদ ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পরে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে পঙ্কজ ভট্টচার্য ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। সারাজীবন তিনি বাম রাজনীতির আদর্শ নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। এ বছরের অমর একুশে বইমেলায় পঙ্কজ ভট্টচার্য এর আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার সেই সব দিন’ প্রকাশিত হয়।

অমল মিত্র

<div class="paragraphs"><p>অমল মিত্র সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।</p></div>

একাত্তরে চট্টগ্রামে যার হাত দিয়ে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উঠেছিল, সেই দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা অমল মিত্র মারা যান গত ৭ মে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর এর প্রতিশোধ নিতে চট্টগ্রামে মৌলভি সৈয়দের নেতৃত্বে যারা প্রতিরোধ সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন, অমল মিত্র তাদের অন্যতম।

নুরুল ইসলাম

<div class="paragraphs"><p>অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম।</p></div>

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মারা যান গত ৮ মে। পাকিস্তানি আমলে বাঙালি বৈষম্যের চিত্র সামনে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নুরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পরিকল্পনা কমিশনে ডেপুটি চেয়ারম্যান করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনে বসবাস করছিলেন।

নুরুল ইসলামের কর্মজীবনের শুরু পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমি। সংস্থার প্রথম বাঙালি পরিচালক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিআইডিএস গঠিত হলে তার প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

পীযুষ কান্তি চৌধুরী

<div class="paragraphs"><p>পীযুষ কান্তি চৌধুরী</p></div>

কক্সবাজারের বিশিষ্টজন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পীযুষ কান্তি চৌধুরী মারা যান গত ১১ মে। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে পীযুষ কান্তি চৌধুরী। তার বাবা জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীকে একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এরপর ওই সময়ের জেলা সার্কিট হাউজে গণহত্যার শিকার হন জ্ঞানেন্দ্র লাল। তবে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি।

পীযুষ কান্তি চৌধুরী কক্সবাজার মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের খ্যাতিমান আইনজীবী, জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-মোজাফফর) কক্সবাজার জেলা শাখার আমৃত্যু সভাপতি, কক্সবাজার স্বরস্বতিবাড়ি মন্দির ট্রাস্টি কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

নুরুন্নবী চৌধুরী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ১২ মে মারা যান চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবী চৌধুরী। বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ১৯৬২ সালে স্কুলজীবনেই চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৬-৬৭ সালের চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর যুদ্ধকালীন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মিরসরাইয়ের শুভপুর ব্রিজে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে যে ক’জন যুবক পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়েছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন নুরুন্নবী। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন নুরুন্নবী। বাকি জীবনে কোনো সভাসমাবেশেও আর যোগ দেননি।

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

কয়েক বছর অসুস্থতায় ভুগে গত ১৫ মে প্রয়াত হন ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়া ভাই’ ফারুক। রক্তে সংক্রমণজনিত জটিলতা নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ৭৫ বছর বয়সে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাদা-কালো পর্দা থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনায় উজ্জ্বল একটি নাম ‘ফারুক’। অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি সিনেমায়।

১৯৪৮ সালের ১৮ অগাস্ট পুরান ঢাকায় তার জন্ম। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। পাঠান পরিবারের এই সন্তানের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। ছাত্রবয়সেই জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধে ধরছিলেন অস্ত্রও। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমায় নাম লিখিয়েছিলেন এই নায়ক, ‘জলছবি’ নামের সেই সিনেমা মুক্তি পায় একাত্তরে। প্রথম সিনেমাতেও তার নায়িকা ‘সারেং বউ’ কবরী। যে জুটি আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল ‘সুজনসখী’ নামে।

সারেং বউ, লাঠিয়াল, নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিন যায় কথা থাকে, জনতা এক্সপ্রেস, সাহেব, মিয়াভাই, নাগরদোলা, সুজনসখী’, ঘরজামাই, ভাইভাই, বিরাজবৌ এর মত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য জায়গায় নিজেকে নিয়ে যান খ্যাতিমান এই অভিনেতা। ‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান। এছাড়া চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০১৬ সালে এই অভিনেতাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।

মোহন খান

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

পরিচালক, নাট্যকার মোহন খান মারা যান ৩০ মে। ১৯৮৮ সাল থেকে দেশের টেলিভিশন নাটক পরিচালনা ও রচনায় পরিচিতি মুখ মোহন খান। এটিএন বাংলায় অনুষ্ঠান বিভাগেও কাজ করেছেন তিনি।

তার পরিচালিত প্রথম নাটক ‘আমার দুধমা’ প্রচার হয় বিটিভিতে। এছাড়া ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘সেই আমরা’, ‘নীড়ের খোঁজে গাঙচিল’, ‘জেগে উঠো সমুদ্র’, ‘মেঘবালিকা’, ‘দূরের মানুষ’, ‘আঙ্গুর লতা’, ‘হৃদয়পুরের গল্প’সহ আরও অনেক নাটক নির্মাণ করেছেন মোহন খান।

পিয়ারী বেগম

<div class="paragraphs"><p>পিয়ারী বেগম যখন মুখ ও মুখোশে অভিনয় করেন, তখন তিনি ইডেন কলেজে পড়তেন।</p></div>

বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর অভিনেত্রী পিয়ারী বেগম মারা যান গত ৩০ মে। পিয়ারী বেগমের স্বামী আমিনুল হকও অভিনেতা ছিলেন। ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমায় তার বিপরীতেই অভিনয় করেছিলেন পিয়ারী।

আমিনুল হক ২০১১ সালে মারা যান। ইডেন কলেজে পড়া অবস্থায় ওই সিনেমাটিতে অভিনয় করে অন্য কলাকুশলীদের সঙ্গে ইতিহাসে ঠাঁই নেন পিয়ারী। আবদুল জব্বার খান পরিচালিত মুখ ও মুখোশ সিনেমাটি ১৯৫৬ সালের ৩ অগাস্ট প্রথম প্রদর্শিত হয়। এতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন ইনাম আহমেদ ও পূর্ণিমা সেনগুপ্ত। পরিচালক জব্বার খান ছাড়াও অভিনয় করেন জহরত আরা, রহিমা খাতুন, বিলকিস বারি।

আফছারুল আমীন

<div class="paragraphs"><p>আফছারুল আমীন</p></div>

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন মারা যান ২ জুন। ৭৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

পেশায় চিকিৎসক আফছারুল আমীন ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সেবা করে আলোচনায় আসেন। এরপর তিনি পান নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব।

চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কাজ করেছেন নৌ মন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও। সবশেষ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন।

রাজনীতির ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষাখাতেও অবদান রেখেছেন আফছারুল আমীন। নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে ‘প্রাণহরি আমীন একাডেমি’। এই একাডেমির অধীনে এবং এর বাইরেও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

সিরাজুল আলম খান

<div class="paragraphs"><p>সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)</p></div>

বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান মারা যান গত ৯ জুন। কখনও নেতৃত্বে না এলেও তিনি জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।

সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান।

মিতা চৌধুরী

মিতা হক

খ্যাতিমান নাট্যশিল্পী মিতা চৌধুরী ২৯ জুন মারা যান। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার জন্ম ১৯৫৮ সালের ২২ জানুয়ারি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়াতে। তার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আমিনুল হক চৌধুরী।

মেধাবী এই অভিনেত্রী শিক্ষাজীবনেও সফল ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এইচএসসিতে মেয়েদের মধ্যে মেধাতালিকায় প্রথম এবং সম্মিলিত মেধাতালিকায় অষ্টম হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেন।

বিটিভিতে মিতা চৌধুরীর প্রথম নাটক ‘আরেকটি শহর চাই’। প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘শান্ত কুটির’। ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে ‘বরফ গলা নদী’ নাটকটির পর মিতা চৌধুরীর আলাদা অবস্থান তৈরি হয়। ‘বরফ গলা নদী’ নাটকে মিতা চৌধুরীর চরিত্রের নাম ‘লিলি’।

‘নন্দিত নরকে’ তার অভিনীত আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাটক। শুধু টিভি নাটকই নয়, মঞ্চে ‘সূচনা’ ও ‘গুড নাইট মা’–এর মত প্রযোজনায় নিজেকে জড়িয়েছেন। ২০১৫ সালে ‘অমানুষ’ নাটকে মামুনুর রশীদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। মিতা চৌধুরী অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘বিষ’, ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।

কামাল উদ্দিন আহাম্মদ

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামাল উদ্দিন আহাম্মদ মারা যান গত ৪ জুলাই রাতে। ওই মামলা পরিচালনায় কামাল উদ্দিন আহাম্মদের দক্ষতা আলোচিত ছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে অভিযোগ গঠন হওয়া সে মামলার রায় ঘোষণা হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। পরে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পান কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

রেবেকা মমিন

<div class="paragraphs"><p>রেবেকা মমিন</p></div>

নেত্রকোণা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন গত ১১ জুলাই মারা যান। বয়স হয়েছিল ৭৬।

টানা তিন মেয়াদে সংসদে মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করা রেবেকা মমিন প্রথমবার এমপি হন ২০০৮ সালের নির্বাচনে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বুলবুল মহলানবীশ ও আশফাকুর রহমান খান

<div class="paragraphs"><p>আশফাকুর রহমান খান ও বুলবুল মহলানবীশ</p></div>

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ এবং সংগঠক আশফাকুর রহমান খান একই দিনে চিরবিদায় নেন। গত ১৪ জুলাই মারা যান এই দুই গুণি ব্যক্তি।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণে কালজয়ী 'বিজয় নিশান উড়ছে ঐ' গানটিতে কণ্ঠ দেওয়া শিল্পীদের অন্যতম বুলবুল মহলানবীশ। আশফাকুর রহমান খান ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক।

বুলবুল মহলানবীশের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ। তিনি একাধারে কবি ও লেখক; সংগীত, নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী। টিভি-বেতার-মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেছেন।

এম এ কুদ্দুস

<div class="paragraphs"><p>কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুস।</p></div>

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি ও কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুস মারা যান গত ১৫ জুলাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংবাদের কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে কর্মরত ছিলেন। পত্রিকায় কার্টুন এঁকে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

মোহাম্মদ আলী

<div class="paragraphs"><p>ইসি ২০০৬: বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে- সিইসি এমএ আজিজ, ইসি উপ সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ (কালো স্যু ট), ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া (গোলাপী টাই), তার পেছনে আইন শাখার উপ সচিব একেএম সলিমউল্লাহ, উপসচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচন কমিশনার স ম জাকারিয়া, বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, একে মোহাম্মদ আলী ও মুনসেফ আলী</p></div>

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এ কে মোহাম্মদ আলী গত ২০ জুলাই মারা যান। তার বয়স হয়েছি ৮২।

সিইসি এমএ সাঈদ কমিশনের শেষ সময়ে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মোহাম্মদ আলী। তিনি ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালের ২৫ মে আলোচিত সিইসি বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরও ইসির নানা সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী।

পান্না কায়সার

<div class="paragraphs"><p>পান্না কায়সার</p></div>

লেখক, গবেষক, শিশু সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, শহীদজায়া পান্না কায়সার মারা যান গত ৪ অগাস্ট। পান্না কায়সার ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী। তিনি অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন তিনি।

শিশু কিশোরদের সংগঠন খেলাঘরের সঙ্গে আজীবন সক্রিয় ছিলেন পান্না কায়সার। ১৯৭৩ সাল থেকে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর ১৯৯০ সালে এ সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদানের জন্য ২০২১ সালে পান্না কায়সারকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

মোহাম্মদ রফিক

<div class="paragraphs"><p>কবি মোহাম্মদ রফিক।</p></div>

ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ জুগিয়ে খ্যাতি রয়েছে কবি মোহাম্মদ রফিকের। গত ৬ অগাস্ট প্রয়াত হন তিনি।

তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে। একুশে পদক ছাড়াও বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪২৩-এ সৃজনশীল শাখায় পুরস্কার পায় মোহাম্মদ রফিকের কবিতার বই ‘মানব পদাবলি’। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলি’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সুলতান মাহমুদ

<div class="paragraphs"><p>বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম।</p></div>

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন কিলো ফ্লাইটের অন্যতম সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম গত ১৪ অগাস্ট প্রয়াত হন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৮১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সুলতান মাহমুদ উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তিনি সামলেছেন। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হাতেগোনা কিছু সরঞ্জাম আর রসদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অপারেশন ‘কিলো ফ্লাইটের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ। তার জন্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুনজরা গ্রামে ১৯৪৪ সালে।

তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে কমিশন পান। ১৯৭১ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে করাচির মৌরীপুর বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে মে মাসে পালিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় পৌঁছান সুলতান মাহমুদ। যুদ্ধে তিনি দুই নম্বর সেক্টর এবং পরে এক নম্বর সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুলতান মাহমুদের চৌকস অধিনায়কত্বে ‘কিলো ফ্লাইট’ এর মিশনে মুক্তিযুদ্ধের গতি ও বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। দেশাত্মবোধ আর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই স্কোয়াড্রন লিডারকে পরে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২০১৮ সালে সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

মতিউর রহমান

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রয়াত হন গত ২৭ অগাস্ট। বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান দীর্ঘ সময় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪-২০১৮ সালে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ ও ২০০৮ সালে তিনি ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকেই মতিউর রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাজনীতির পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ সময় নগরীর আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজের (মিন্টু কলেজ) অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কাজী এম বদরুদ্দোজা

<div class="paragraphs"><p>কৃষি বিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজা।</p></div>

কৃষি বিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজা মারা যান গত ৩০ অগাস্ট। তারবয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

কাজী পেয়ারার জনক হিসেবে খ্যাতি পান বদরুদ্দোজা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে পাকিস্তান কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পদ ছেড়ে ১৯৭৩ সালে তিনি দেশের কৃষি গবেষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কৃষি গবেষণার সংস্কার, উন্নয়ন ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তার হাত ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি গবেষণার বুনিয়াদ রচিত হয়।

বদরুদ্দোজা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের শীর্ষ পদে দীর্ঘদিন ছিলেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।

এ কৃষি বিজ্ঞানী ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ধানের বাইরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দানাদার ফসল চাষ শুরুর ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেন।

আফজাল চৌধুরী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরী মারা যান ৩১ অগাস্ট। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

১৯৬০ সালে জহির রায়হানের চিঠি পেয়ে ঢাকায় আসেন তার ‘কাচের দেয়াল’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য। এটিই ঢাকায় তার প্রথম চিত্রায়িত চলচ্চিত্র। এরপর ঢাকায় বহু ছবির চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন।

তৎকালীন উভয় পাকিস্তানের প্রথম আংশিক রঙিন ‘গুলে বাঁকালি’ (১৯৬১), প্রথম এক শটের গানের ‘ওয়াফা কি ইয়াদা’, বাংলাদেশের প্রথম ‘লো-কি’ সিনেমাটোগ্রাফি ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩), প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪), প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ (১৯৬৫), প্রথম ‘ট্রিপল রোল’ এর চলচ্চিত্র ‘জ্বলতে সুরুজ কে নিচে, ১৯৭০/উজ্জ্বল সূর্যের নিচে, ১৯৭৭), প্রথম রাজনৈতিক ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), পাকিস্তানের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘আয়না’ ইত্যাদি ছাড়াও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহু ছবি চিত্রায়িত হয়েছে তার হাতে।

রাজীব আশরাফ

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

মাত্র ৩৮ বছর বয়সে গত ১ সেপ্টেম্বর মারা যান 'হোক কলরব' গানের গীতিকার রাজীব আশরাফ।

সংগীত শিল্পী অর্ণবের গাওয়া ‘হোক কলরব’ ছাড়াও ‘ধূসর মেঘ’, ‘ঘুম’, ‘রোদ বলেছে হবে’, ‘একটা মেয়ে’, ‘প্রতিধ্বনি’, ‘মন খারাপের একটা সকাল’, ‘কে আমি’, ‘ইট কাঠ পাথরের’, ‘যখন জোনাক জ্বলে’, ‘নাম ছিল না’, ‘বিভ্রম’ প্রভৃতি রাজীবের লেখা জনপ্রিয় গান।

এ ছাড়া ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’, ‘এই আমার শহর’, ‘যাযাবর পাখনা’, ‘এই যাত্রার শেষ কোথায় অজানা’, ‘নিঝুম রাতের তারা’, ‘প্রহর’ তাঁর লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ‘ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল’ তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

চলচ্চিত্রের গানও লিখেছেন রাজীব আশরাফ। রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ ছবিতে অর্ণব গেয়েছেন রাজীবের লেখা ‘বোকা চাঁদ’ গানটি। তার লেখা গান রয়েছে ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রেও। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রও বানিয়েছেন।

সোহানুর রহমান সোহান

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

বহু সফল চলচ্চিত্রের নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান মারা যান ১৩ সেপ্টেম্বর। তিনি চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিবলি সাদিকের সহকারী হিসেবে। পরে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

সোহানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। এই নির্মাতার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি ও ইরিন জামান। শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া প্রথম সিনেমার পরিচালকও ছিলেন তিনি।

সোহানের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল- ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে টানা দু’বার মহাসচিব এবং দু’বার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

খ্যাতিমান নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী মারা যান ১৯ সেপ্টেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

১৯৪৬ সালের ২৬ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নির্মাতা পরিচয়ের বাইরে একজন কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবেও তিনি পরিচিত। ১৯৮০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মনেও জায়গা করে নেন তিনি।

এই ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এই ছবিটির শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘লাল বেনারসী’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।

জিনাত বরকতউল্লাহ

জিনাত বরকতুল্লাহ; ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি

একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ মারা যান ২০ সেপ্টেম্বর। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

জিনাত বরকতউল্লাহর জন্ম ১৯৫২ সালের ৩ অক্টোবর কুমিল্লায়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্যচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ভরতনাট্যম, কত্থক, মণিপুরি—উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় নৃত্যের তিন ধারায় তালিম নিলেও লোকনৃত্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে জিনাত বরকতউল্লাহ যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে। পরে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রোডাকশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে জিনাত বরকতউল্লাহ বিটিভির নাটক ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন। এরপর ‘ঘরে বাইরে’, ‘অস্থায়ী নিবাস’, ‘বড় বাড়ি’, ‘কথা বলা ময়না’সহ বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। জিনাত বরকতউল্লাহ নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক পেয়েছেন।

আব্দুস সাত্তার ভূঞা

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা মারা যান ৩০ সেপ্টেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বিএনপির এমপি হিসেবে পদত্যাগের পর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন তিনি।

আব্দুস সাত্তার ভূঞা দীর্ঘদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি পদে ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও জুনের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় টেকনোক্রেট মন্ত্রী হিসেবে আবদুস সাত্তার আইন, মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

এর মধ্যে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য হিসেবে জয়লাভ করেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তিনিও সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু পরে উপ-নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে সেই নির্বাচনে জয় পেয়ে পুনরায় তিনি সংসদ সদস্য হন।

শাহজাহান কামাল

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান কামাল মারা ৩০ সেপ্টেম্বর। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে ও ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন শাহজাহান কামাল। 

১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গণআন্দোলনে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া, ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শাহজাহান কামাল ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন নোয়াখালী-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি হন।

দশম সংসদে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আসাদ চৌধুরী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

কানাডার একটি হাসপাতালে গত ৫ অক্টোবর মারা যান কবি আসাদ চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। পরদিন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

গত শতকের সত্তরের দশক থেকে কবিতার পাশাপাশি আসাদ চৌধুরী লিখে গেছেন প্রবন্ধ, শিশুতোষ গল্প ও কবিতা, অনুবাদ, ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থ। এ পর্যন্ত প্রায় চার ডজন বই প্রকাশিত হয়েছে তার। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক পান তিনি।

তবক দেওয়া পান, জলের মধ্যে লেখাজোখা, মেঘের জুলুম পাখির জুলুম, আমার কবিতা, ভালোবাসার কবিতা, প্রেমের কবিতা, নদীও বিবস্ত্র হয়, বাতাস যেমন পরিচিত, বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই, কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি, ঘরে ফেরা সোজা নয় তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া প্রবন্ধ সংকলন ‘কোন অলকার ফুল’, জীবনীগ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’, ‘রজনীকান্ত সেন’, ‘স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী’ এবং ইতিহাস গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। 

বদিউর রহমান

<div class="paragraphs"><p>ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউর রহমান তালুকদার।</p></div>

জামালপুরের ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউর রহমান তালুকদার গত ৬ অক্টোবর মারা যান।

১৯৫২ সালে দেওয়ানগঞ্জ সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়ের (বর্তমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) নবম শ্রেণির ছাত্র বদিউর রহমান তালুকদার ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। সেজন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ১৯৫২ সালের ১৫ মার্চ তাকেসহ পাঁচজনকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।

তবে অন্য চারজন ক্ষমা চেয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেলেও তিনি ক্ষমা চাননি। এ কারণে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত দেশের আর কোনো স্কুলে তিনি ভর্তি হতে পারেননি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বদিউর রহমান। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে তিনি দেওয়ানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতিও ছিলেন।

মাহমুদুর রহমান বেলায়েত

<div class="paragraphs"><p>নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত আর নেই।</p></div>

মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনীর প্রধান, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত প্রয়াত হন গত ৯ অক্টোবর। তিনি বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের একাধিকবার সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শফি বিক্রমপুরী

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

দেনমোহর ছবির পরিচালক শফি বিক্রমপুরী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে মারা যান গত ১৮ অক্টোবর। তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা 'রাজদুলারি'। এরপর 'আলাদিন আলিবাবা সিন্দাবাদ', 'দেনমোহর'সহ কয়েকটি ছবি পরিচালনা করেন। তার প্রযোজিত ও পরিবেশিত সিনেমার মধ্যে রয়েছে 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী', 'ডাকু মনসুর', 'বাহাদুর', 'বন্দুক', 'সবুজ সাথী'।

শাহজাহান মিয়া

<div class="paragraphs"><p>পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া।</p></div>

পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া মারা যান গত ২১ অক্টোবর। তার বয়স হয়েছিল ৮৩।

শাহজাহান মিয়ার জন্ম ১৯৪০ সালের ১৭ জানুয়ারি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯১ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত টানা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পটুয়াখালী-১ আসন থেকে ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০৮ সালের নবম এবং ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর হন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। পেশায় আইনজীবী শাহজাহান মিয়া একাধিক মেয়াদে পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতির সভাপতিও ছিলেন।

তারেক মাহমুদ

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

কবি, অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা তারেক মাহমুদ ২৭ অক্টোবর মারা যান। অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ‘চটপটি’ নামের সিনেমা পরিচালনা করেন তারেক। প্রায় তিন দশক ধরে তিনি ‘পথিক’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করে আসছিলেন।

সালিমুল হক

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

প্রখ্যাত বাংলাদেশি জলবায়ু বিজ্ঞানী ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিসিএডি) পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক সালিমুল হক। গত ২৮ অক্টোরব তিনি প্রয়াত হন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন সালিমুল হক। তিনি জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর অধ্যাপক সালিমুল হক গত অগাস্টে জাতিসংঘের নবগঠিত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডে বাহ্যিক সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান।

জিনাতুন নেসা তালুকদার

<div class="paragraphs"><p>বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তালুকদার।</p></div>

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তালুকদার মারা যান গত ২৯ অক্টোবর।

রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়ায় ১৯৪৭ সালের ৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। কলেজ জীবন থেকেই সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন জিনাতুন নেসা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের একজন নেত্রী হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভারতে গিয়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিখ্যাত গোবরা ক্যাম্পে অস্ত্র পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবাদানের প্রশিক্ষণ নেন জিনাতুন নেসা। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ৭ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর ৪-এর অধীনে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৭৭ সালে তিনি নওহাটা ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। একইসঙ্গে চালিয়ে যান রাজনীতি ও সমাজ গড়ার কাজ। ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের প্রথমে উপমন্ত্রী ও পরে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হোমায়রা হিমু

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

টেলিভিশন নাটকের অভিনেত্রী হোমায়রা হিমু মারা যান ২ নভেম্বর। মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে ২০০৬ সালে অভিনয়ে আসেন তিনি। টেলিভিশনে 'ছায়াবীথি' নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর 'প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর' নামের একটি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেন।

এছাড়া 'বাড়ি বাড়ি সারি সারি', 'হাউসফুল', 'গুলশান এভিনিউ'সহ অনেক নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হন। 'চাপাবাজ', 'বাকেরখনি', 'বউ বিরোধ', 'গোলমাল', 'নানান রঙের মানুষ' ও 'গিনিস বুকে নাম' নাটকেও অভিনয় করেন তিনি। লক্ষ্মীপুরে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় হোমায়রা হিমুকে।

নাদিরা বেগম

<div class="paragraphs"><p>নাদিরা বেগম</p></div>

ভাওয়াইয়া গানের খ্যাতিমান শিল্পীদের একজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদিরা বেগম মারা যান ৬ নভেম্বর। তিনি সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষক ছিলেন।

শিক্ষকতা করেছেন ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনেও। বিখ্যাত 'কল কল ছল ছল নদী করে টলমল' গানের গীতিকার ও সুরকার এ কে এম আবদুল আজিজের মেয়ে নাদিরা বেগম ১৯৬০ সালে রেডিওতে সংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ভাওয়াইয়া একাডেমির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

ইমদাদুল হক

<div class="paragraphs"><p>জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমদাদুল হক।</p></div>

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমদাদুল হক মারা যান ১১ নভেম্বর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন।

বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেন।

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে তার ৮০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জুন চার বছরের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।

আবদুল মালিক

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আবদুল মালিক মারা যান গত ৫ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা পদক পাওয়া এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল মালিক। সিলেট থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ১৯৪৯ সালে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে এমবিবিএস শেষ করেন।

হৃদরোগের চিকিৎসায় ১৯৭৮ সালে রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল মালিক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৪ সালে আবদুল মালিককে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। এর দুই বছর বাদে ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা পান।

মইনুল হোসেন

<div class="paragraphs"><p>ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।</p></div>

ইত্তেফাকের এক সময়ের সম্পাদক ও সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মারা যান গত ৯ ডিসেম্বর।

আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে নামা ব্যারিস্টার মইনুল ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ নেশনের সম্পাদক ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার বড় ছেলে। আইন পেশা বা রাজনীতির চেয়ে বাংলা দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক হিসেবেই পরিচিতি গড়েছিলেন; তার প্রভাবের পেছনেও এ সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল বেশি। আর বছরের পর বছর আলোচনায় ছিলেন ছোট ভাই ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ইত্তেফাকের মালিকানা নিয়ে বিরোধরে কারণে।

নূরুল আনোয়ার

২০২৩: চিরবিদায়েও তারা ভাস্বর

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল আনোয়ার মারা যান গত ১০ ডিসেম্বর।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডতে ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী নূরুল আনোয়ার ১৯৭৩ সালে প্রথম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। চাকরি জীবনে তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহাকুমার সর্বশেষ মহাকুমা পুলিশ প্রশাসক ছিলেন। পরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের প্রথম উপপুলিশ কমিশনার ছিলেন। ২০০৯ সালের পর তাকে ভূতাপেক্ষ আইজিপি করা হয়।

আরফানুল হক রিফাত

<div class="paragraphs"><p>কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত</p></div>

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত মারা যান গত ১৩ ডিসেম্বর। বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

১৯৭৬ সাল থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগ করার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন আরফানুল হক। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের জনসভা পণ্ড করার অপরাধে সামরিক আইনে তার তিন বছরের সাজা হয়েছিল। এরপর বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তিনি সেই সাজা থেকে রক্ষা পান।

আরফানুল হক ১৯৮০ সালে কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগের প্যানেলে তিনি বহিঃক্রীড়া ও ব্যায়ামাগার সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছরে জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হন তিনি। সেসময় তার দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি কুমিল্লা জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৩ বছর তিনি কুমিল্লা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন।

গোলাম মোহাম্মদ ইদু

<div class="paragraphs"><p>গোলাম মোহাম্মদ ইদু</p></div>

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, শিল্পী-সংগ্রামী গোলাম মোহাম্মদ ইদুর মারা যান গত ২২ ডিসেম্বর।

১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদীচী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় এক দশক আগে সত্যেন সেন একটি গানের দল গঠন করেন। সেই গানের দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। উদীচী প্রতিষ্ঠিত হলে ইদু প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তথা বাংলাদেশের প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত, প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু। তার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি।

ফজলুর রহমান

<div class="paragraphs"><p>ফজলুর রহমান</p></div>

দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ৭৭ বছর বয়সে গত ২৫ ডিসেম্বর মারা যান। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সদ্য স্বাধীন দেশে ফজলুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন সরিষার তেল উৎপাদনের কারখানা সিটি অয়েল মিল, যা পরে সিটি গ্রুপের রূপ নেয়। বর্তমানে এ শিল্পগোষ্ঠীটির অধীনে ৪০টির বেশি কোম্পনি রয়েছে।

আবুবকর সিদ্দিক

<div class="paragraphs"><p>আবুবকর সিদ্দিক।</p></div>

কবি অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক মারা যান ২৮ ডিসেম্বর; তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক ঢাকার নটরডেম কলেজ ও কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি কবি, ঔপন্যাসিক, লেখক, ছোট গল্পকার হিসেবে সাহিত্য অঙ্গনে বিচরণ ছিল তার।

১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান কবি আবুবকর সিদ্দিক। তার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২০টির বেশি। এছাড়া চারটি উপন্যাস, ১৫টি গল্পগ্রস্থ ও একটি ছড়ার বই তিনি লিখেছেন।

২০২৩ সালে বিশ্বের কোথায় কি হয়েছে? ২০২৩ সালে বিশ্বের কোথায় কি হয়েছে? Reviewed by Syed Araf on ১০:৩৮ PM Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Good books

Blogger দ্বারা পরিচালিত.