বই রিভিইউঃ ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স | লেখকঃ মালিহা তাবাসসুম



বইঃ ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স

অথরঃ মালিহা তাবাসসুম


কাহিনি সংক্ষেপঃ 


প্রথাগত বিচারে অসুন্দরী কুহেলি নামের মেয়েটি ক্রনিক ডিপ্রেশনের দ্বৈরথ কাটিয়ে যখনই স্বাভাবিক জীবনের রসদ খুজতে থাকে, সোশ্যাল বুলিং আর বডি শেমিং তখনই এফোড় ওফোড় করে কুহেলির অনুভূতির আকরিককে। 


এদিকে ঢাকা শহরের বুকে ঘটে যেতে থাকে এক অদ্ভুত সিরিয়াল কিলিং। বয়স, উচ্চতা, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, জাত- কোনো কিছুর ভিত্তিতেই খুনের মোটিভ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কুলকিনারা করতে পারে না সিআইডি অফিসাররা। সিআইডির অফিসিয়াল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর আবরার ফাহাদ লাশের পাশে রেখে যাওয়া নার্সারির ছড়ার বই আর ঐতিহাসিক এক ফসিলে লেখা অর্থহীন শব্দের মাধ্যমে খুজে পায় কুহেলিকে। ঘটনাক্রমে উন্মোচিত হয় রহস্যের পৌনঃপুনিক দ্বার। 


কুচকে যাওয়া চামড়ার এক অদ্ভুত দর্শন বৃদ্ধা, মিশনারি স্কুল, সারোগেট মাদার- সিআইডির অফিসিয়াল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর আবরার ফাহাদের সামনে বুমেরাং বাণ হয়ে দাড়ায় একেকটা ক্লু। ডাক্তারি বিদ্যা, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির নিখুঁত প্রয়োগ ঘটিয়ে একের পর এক খুন করে যাওয়া এক বেনামী খুনি নিজের ট্রেডমার্ক জানান দিয়ে যাচ্ছে রহস্যময় বাক্যের নিগড়ে- 'মা রক্ষা করে'। ছায়াচ্ছন্ন রহস্যের আড়ালের ধ্রুব সত্যটা কী আদৌ জানতে পারবে আবরার? 


পাঠ পর্যালোচনাঃ 


"- তা মা, আজকে কীসের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট ছিল রে তোদের?

- কাফকার একটা নভেলার ওপর বাবা। মেটামরফসিস।

- নভেলা? সেটা আবার কী রে?

মৃদু হাসার চেষ্টা করল কুহেলি।

- ছোট সাইজের উপন্যাসকে নভেলা বলে বাবা।

- শুনি তাহলে মা। কী অ্যাসাইনমেন্ট করলি!

- গল্পের শুরুতেই গ্রেগর নামের এক ভ্রাম্যমান সেলসম্যান নিজের ক্লান্ত উদ্বাস্তু জীবনের ভাবনা নিয়ে পরের দিন সকাল দেখবে বলে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় এক বিশাল পোকা হিসেবে আবিষ্কার করে। 


স্থির দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন আশফাক সাহেব, যেন বুঝতে পারছেন মেয়ের মুখ থেকে উচ্চারিত পরবর্তী শব্দ কী হতে চলেছে! 


- জানো বাবা! গ্রেগরের সাথে আমার একটা মিল আছে। গল্পে একজন সুস্থ-সবল মানুষ থেকে এক রাতের ভেতরে কীভাবে একটা মানুষ নিকৃষ্টতর পোকারূপী অচ্ছুৎ হয়ে ওঠে, এটা দেখানো হয়েছে। আর ছোটবেলা থেকেই আশপাশের মানুষের দৃষ্টিতে আমি যেন নিজেকে গ্রেগর হিসেবে দেখতে পাই।" 


উপরের অংশটুকু কুহেলি ও তার বাবার মধ্যেকার কথোপকথনের একটা অংশ।


লেখিকা তার বইয়ে, কুহেলি চরিত্রটার মধ্যে দিয়ে বেশ ভালোমতোই 'ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স' কে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভোগা একজন মানুষ কিভাবে চিন্তা করে, কেমন আচরণ করে, তার আচরণ আশপাশের মানুষগুলোর উপর কেমন প্রভাব ফেলে, মানুষগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন হয় সেটাও তিনি বেশ ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। সম্পর্কগুলোর মাঝে তুলে এনেছেন কুহেলি আর অভ্রর কেমিস্ট্রিটাও। 


আমাদের আশেপাশেই আমরা অনেক সময় ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগা অনেক মানুষকে দেখতে পাই। সেই সমস্যারই চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ পেয়েছে কুহেলি চরিত্রে। 


অন্যদিকে, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর আবরার ফাহাদ ও এএসপি কাম ডিটেকটিভ নিশাত নাহরিন অবন্তির ব্যক্তিত্ব, তাদের কেমিস্ট্রি এবং তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই আকৃষ্ট করেছে। কখনো কখনো আবরার ফাহাদকে একটু দেমাগী বা অবন্তিকে একটু লঘু টাইপ মনে হয় এবং সেটা তাদের চরিত্রেরই অংশ। এক্ষেত্রে বলে নেয়া যায়, একই চরিত্রের (বিশেষ করে আবরার ফাহাদ) আরো বই পরবর্তীতে প্রকাশ করার ইচ্ছে আছে লেখিকার, যেটা তিনি বইয়ের শুরুতেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। 


এবার আসি মূল রহস্য নিয়ে। এ বিষয়ে আসলে কাহিনি সংক্ষেপেই যথেষ্ট বলা হয়েছে। আর বেশি বললে মজা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে যেভাবে লেখিকা রহস্যের সুতা ধীরে ধীরে ছেড়েছেন সেটা প্রশংসনীয়। দুই ভুবনের কয়েকজন মানুষের এক ভুবনে এসে মিলিত হওয়ার প্রক্রিয়াটাই বইটাকে এনজয়েবল করে তুলেছে। 


আরেকটা বিষয়, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সকে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে লেখিকা অন্য বিষয়গুলকে এড়িয়ে গেছেন বিষয়টা তেমন না। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। এই বিষয়টাও প্রশংসনীয়। 


সবশেষে, বাংলাদেশের প্রথম ফরেনসিক মেডিকেল থ্রিলার হিসেবে 'ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স' কতটুকু সার্থক? সার্থক! 'কতটুকু' সে বিষয়ে নানা মুনির নানা মত থাকবে। তবে সার্থক। আমি পুরো সময়টুকুই বেশ এনজয় করেছি।

বই রিভিইউঃ ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স | লেখকঃ মালিহা তাবাসসুম বই রিভিইউঃ ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স | লেখকঃ মালিহা তাবাসসুম Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor on ১০:২৩ PM Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Good books

Blogger দ্বারা পরিচালিত.