১ ) শ্রদ্ধা হচ্ছে শক্তিমান কারো সাহায্যে স্বার্থোদ্ধারের বিনিময়ে পরিশোধিত পারিশ্রমিক।
২) পরমাত্মীয়ের মৃত্যুর শোকের মধ্যেও মানুষ কিছুটা সুখ বোধ করে যে সে নিজে বেঁচে আছে।
৩)মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের চরিত্র সম্পর্কে
কারো কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
৪) বাঙালি মুসলমানের এক গোত্র মনে করে নজরুলই পৃথিবীর একমাত্র ও শেষ কবি। আদের আর কোনো কবির দরকার নেই।
৫)অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।
৬) আগে কাননবালারা আসতো পতিতালয় থেকে, এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
৭) পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।
৮) আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।
৯) নিজের নিকৃষ্ট কালে চিরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে বই; আর সমকালের নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে টেলিভিশন ও সংবাদপত্র।
১০) প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে।
১১)একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত থাকে সমাজতন্ত্রের প্রশংসায়।
১২) বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
১৩) পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।
১৪) এক-বইয়ের-পাঠক সম্পর্কে সাবধান।
১৫) কবিরা বাঙলায় বস্তিতে থাকে, সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।
১৬ ) মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
১৭) বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভণ্ড, ভণ্ডতর, ভণ্ডতম।
১৮) আমি এতো শক্তিমান আগে জানা ছিলো না। আজকাল মিত্র নয়, শত্রুদের সংখ্যা দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।
১৯) জন্মাতরবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের অবধারিত দর্শন। এ- অঞ্চলে এক জন্মে পরীক্ষা দিতে হয়, আরেক জন্মে ফল বেরোয়, দু-জন্ম বেকার থাকতে হয়, এবং ভাগ্য প্রসন্ন হ’লে কোন এক জন্মে চাকুরি মিলতেও পারে।
২০) রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে।
২১) এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষণ : অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।
২২) বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
২৩) তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর।
২৪) এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে
জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।
২৫) প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
২৬) বিলেতের কবিগুরু বলেছিলেন যারা সঙ্গীত ভালোবাসে না, তারা খুন করতে পারে; কিন্তু আজকাল হাইফাই শোনার সাথেসাথে এক ছুরিকায় কয়েকটি-গীতিকার, সুরকার, গায়ক/গায়িকাকে খুন করতে ইচ্ছে হয়।
২৭) মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদণ্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে মেরুদণ্ডহীনতা।
২৮) স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
২৯) ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দেওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যেতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।
৩০) আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো; এখন প্রতিভাহীনেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।
৩১) বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
৩২) কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা। বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী ।
৩৩) কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
৩৪নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।
৩৫) সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে কটি শূন্য যোগ করতেন?
৩৬) সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।
৩৭) রবীন্দ্রনাথ এখন বাঙলাদেশের মাটিথেকে নির্বাসিত, তবে আকাশটা তাঁর। বাঙলার আকাশের নাম রবীন্দ্রনাথ।
৩৮) গণশৌচাগার দেখলেই কেনোযেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
৩৯) মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে ।
৪০) দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম ব'লে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
৪১) মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারাও ক্ষেপে না, সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্তোষের সাথেই শোনে; কিন্তুশরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।
৪২) বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচ জন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।
৪৩) বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাধিকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তদের সংঘ।
৪৪) একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
৪৫ )পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ রয়েছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়, লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো,
কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।
৪৬) আঠারো তলা টাওয়ারের থেকে শিশিরবিন্দু অনেক উঁচু। চিরকাল শিশিরবিন্দুর পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু অনেক টাওয়ারের চুড়োয় উঠেছি।
৪৭) বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
৪৮) জীবনের সারকথা কবর।
৪৯) ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে একরাশ কুৎসা।
৫০) এখানে কোনো কিছু সম্পর্কে কিছু লেখাকে মনে করা হয় গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ। গাধা সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন আমি গাধার প্রতি যারপরনাই শ্রদ্ধাশীল। গরু সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি, অনেকে মনে করেন গরুর প্রতি আমি প্রকাশ করেছি আমার অশেষ শ্রদ্ধা। নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখেছি। একটি পার্টটাইম পতিতা, যার তিনবার হাতছানিতেও আমি সাড়া দিই নি, অভিযোগ করেছেন, নারী সম্পর্কে বই লেখার কোনো অধিকার আমার নেই, যেহেতু আমি পতিতাদের শ্রদ্ধা করি না, অর্থাৎ তাদের হাতছানিতে সাড়া দিই না।
৫১) পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।
৫২) অন্যদের কাহিনীর ক্ষীণ সূত্র নিয়ে হ্যামলেট বা ওথেলো বা ম্যাকবেথ লেখা, আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী কেটে কেটে, নষ্ট ক'রে, সত্যজিতের পথের পাঁচালী তৈরি করা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। অন্যের কাহিনীসূত্র নিয়ে হ্যামলেট লেখা মানবপ্রজাতির একজনের বিস্ময়কর প্রতিভার লক্ষণ, আর বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী ছিঁড়ে
সত্যজিতের পথের পাঁচালী তৈরি চিত্রগ্রহণদক্ষতার পরিচায়ক। আরেকটি উৎকৃষ্টতর হ্যামলেট বা ওথেলো বা ম্যাকবেথ, বা মেঘনাদবধ মানুষের ইতিহাসে আর লেখা হবে না; কিন্তু সত্যজিতের পথের পাঁচালীর থেকে উৎকৃষ্ট পথের পাঁচালী হয়তো তৈরি হবে আগামী দশকেই।
৫৩) সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারতও চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।
৫৪) বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না; কিন্তু বিভূতিভূষণ যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।
৫৫ ) শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির ওপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র
বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুণ বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহূর্ত শরীর মন্থন ক’রে।
৫৬) শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা, তবে পুরোনো কালের অলৌকিক ঘটনাগুলো বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে পারতেন- ক্ষণিকের জন্যে। ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের বিজ্ঞান। বিদুৎ, বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার,
নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে-কোনো অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে ওঠে।
৫৭) পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
৫৮) আমার অনুরাগীরা চরম অনুরাগ প্রকাশের সময় খুব আবেগভরে বলেন যে আমার মতো পণ্ডিত ও প্রতিভাবান লোক আর নেই; তাই আমার অনেক কিছুই হওয়া উচিত। যেমন অবিলম্বে আমার হওয়া উচিত কোনো একাডেমির মহাপরিচালক, বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইত্যাদি।
শুনে আমি তাঁদের ও নিজের জন্যে খুব করুণা বোধ করি। আমি হ'তে চাই মহৎ, আর অনুরাগীরা আমাকে ক'রে তুলতে চান ভৃত্য।
৫৯) আপনি যখন হেঁটে যাচ্ছেন তখন গাড়ি থেকে যদি কেউ খুব আন্তরিকভাবে মিষ্টি হেসে আপনার দিকে হাত নাড়ে, তখন তাকে বন্ধু মনে করবেন না। মনে করবেন সে তার গাড়িটার দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রে আপনাকে কিছুটা পীড়ন ক'রে সুখী হ'তে চায়।
৬০) আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
৬১) একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে পারে না।
৬২) ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়। তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।
৬৩) একটি আমলা আর একটা মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট কাটানোর পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো; তারপর একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহূর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার ভালবাসলাম ।
৬৪) আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।
৬৫)মুসলমানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করতে দেয় না।
৬৬) সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
৬৭) সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন আমরা কেউ থাকবো না।
৬৮)ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধি।
৬৯) মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে ।
৭০) আমার লেখার যে-অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে-অংশ তাদের ক্ষুব্ধ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য ।
*পুরুষ এমন একটি প্রাণী, যার
নিন্দায় সামান্য সত্য
থাকতে পারে; তবে তার স্তব
সুপরিকল্পিত প্রতারণা।
*পুরুষ নারীকে গৃহে বন্দী করেছে,
তাকে সতীত্ব শিখিয়েছে,
সতীত্বকে নারীর জীবনের মুকুট
করে তুলেছে, যদিও লাম্পট্যকেই
করে তুলেছে নিজের গৌরব।
*পুরুষ মনে করে নি যে তার
জীবনের সার্থকতা পুত্র, পিতা,
গৃহস্ত হওয়াতে; বরং এই
ভূমিকাগুলো পেরিয়ে যাওয়াকেই
মনে করেছে পৌরুষ।
*পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে,
করে রেখেছে দাসী;
তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো স্তব
করে দেবীরূপে।
*বিয়ে, স্বামী, সন্তান, গৃহ, সুখ,
প্রেম এসব মধুর বাজে কথা;
এগুলাতে নারী মুক্তি নেই,
এগুলাতেই বন্দী নারী।
*পুরুষ
নারীকে সাজিয়েছে অসংখ্য
কুৎসিত অভিধায়;
তাকে বন্দি করার জন্য
তৈরি করেছে পরিবার, সমাজ,
রাষ্ট্র; উদ্ভাবন করেছে ঈশ্বর, নিয়ে এসেছে প্রেরিত পুরুষ।
*পুরুষের যৌথচেতনার
মহাজাগতিক ভীতির
মতো বিরাজ করে নারী।
* পুরুষ এমন এক
সভ্যতা গড়ে তুলেছে,
যা নারীকে সম্পূর্ণ
বন্দি করতে না পারলেও ধ্বংস
হয়ে যাবে বলে পুরুষের ভয় রয়েছে;
যার নাম পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতা।
*পুরুষতন্ত্রে সূর্য পুরুষ,
নারী আঁধার।
*আদি থেকে পুরুষ সব কিছু
তৈরি করেছে নিজের
কাঠামোতে; তার বিধাতা পুরুষ,
তাঁর প্রেরিতদূত পুরুষ, প্রথম
সৃষ্টি পুরুষ; নারী ওই পুরুষের
সংখ্যাতিরিক্ত পুতুল।
*পুরুষের সভ্যত্যায় পুরুষ মুখ্য,
নারী গৌণ; পুরুষ শরীর,
নারী ছায়া; পুরুষ প্রভু,
নারী দাসী; পুরুষ ব্রাহ্মণ,
নারী শূদ্রী।
*বাঙলার সমাজে শয়তানের
চেয়েও নিন্দিত নারী
* বিত্তবান শ্রেণীর
নারী পরগাছার পরগাছা,
বিত্তহীন শ্রেণীর নারী দাসের
দাসী।
* শোষণে সব শ্রেণীর পুরুষই
অভিন্ন; শোষণে মিল
রয়েছে মার্কিন কোটিপতির
সাথে বিকলাঙ্গ
বাঙালি ভিখারির, তারা উভয়েই
পুরুষ, মানবপ্রজাতির রত্ন।
*পুরুষতন্ত্র শুধু বল প্রয়োগ
করে অধীনে রাখতে চায়
নি নারীকে, তাকে স্তবস্তুতিও
পান করিয়েছে।
*পুরুষ উদ্ভাবন
করেছে নারী সম্পর্কে একটি বড়
মিথ্যা,
যাকে সে বলেছে ‘চিরন্তনী নারী’
* পুরুষ নারীকে বলেছে দেবী,
শাশ্বতী, কল্যাণী গৃহলক্ষ্মী,
অর্ধেক কল্পনা; কিন্তু
চেয়েছে চিরন্তনী দাসী হিসাবে।
* বাঙলার নারীরা এখন পশুদের
দাসী।
*বাঙলায় নারীদের শিক্ষার
ধারা নারীকে স্বাধীন
এবং স্বায়ত্তশাসিত করা নয়,তার
লক্ষ্য উন্নতমানের
শয্যাসঙ্গিনী উৎপাদন।
* বাঙলায় নারীদের
পেশা বিবাহ।
* বাঙলায় যারা নারীদের কল্যাণ
চান, তাঁরা মনে করেন নারীর
কল্যাণ শুভবিবাহে, সুখী গৃহে;
স্বামীর একটি মাংসল পুতুল
হওয়াকেই তাঁরা মনে করেন
নারী জীবনের সার্থকতা।
* নারীর জন্যে ক্ষতিকর পুরুষ;
তারা পুরুষতন্ত্রের শিকার,
পুরুষরা নারীকে দাসীরূপে দেখে।
* নারীবাদীরা নারীকে মানুষ
হিসাবে বিবেচনা করে নারীর
অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে না, তাঁদের আন্দোলন
হচ্ছে স্বামীতন্ত্রের
কাছে স্ত্রীতন্ত্রের আবেদন-
নিবেদন।
* পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার বয়স
কয়েক সহস্রক; তাই পুরুষতন্ত্র
শাশ্বত সভ্যতার ভবিষ্যৎ,
এটা ভাবার দরকার নেই।
*বাঙলায়
নারীবাদীরা নারী অধিকারের
কথা বলতে ভয় পান, নিজেদের
নারীবাদী বলতে নববধূর মত
লজ্জা বোধ করেন।
হুমায়ুন আজাদ এর উক্তি সমগ্র
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
৯:১৮ AM
Rating:
কোন মন্তব্য নেই:
Good books