ব্রাত্য রাইসুর এর কবিতা
মায়ের জীবন
যে কোনো জীবন থেকে অন্য জীবনের
জানালার পাশে আমরা ভেসে থাকব বলে এই ছদ্ম রূপ
পাখির জীবন
ধরে আছি;
মানুষেরই বেঁচে থাকা দেখব বলে
মৃত সন্তানের পাশে দেখি আমরা মৃত্যুর অধিক—
কোনো মায়ের জীবন।
২৬/৪/২০১৬
এরা দুইজন
বৃষ্টি হলে কাঁঠাল তলায়
এরা দুইজন
কাঁঠালের ঝরা পাতা
পা মাড়িয়ে যায়
আর
ভিজা মাটি আবার শুকায়।
জটিল বিড়াল
(লুনা রুশদীকে)
বিড়ালের জন্যে নাই অন্য বিড়ালেরা
কেবল মানুষ
ভালবাসা দিতে চায়
অভাব দানের মত
বিড়াল কি নিঃসঙ্গতা তোমার নিবে না
গৃহস্থ বাসায় থাকবে
পাড়ার রাস্তায় ঘুরবে
ছাদের উপর থেকে লাফ দিয়ে
অন্য কোনো ছাদে নামবে
গাছের মালিক আছে
সব এমন গাছের নিচে হাঁটতে যাবে
দুপুর বেলায়
দুপুরে গাছের নিচে বিড়ালের
আনোগোনা করতে যাওয়া
তুমি কি আজ্ঞা করো
প্রভু তুমি
কিংবা যদি অনুমতি ছাড়াই বলে
'মিউ'
বিড়ালের ঘটাহীন প্রাত্যহিকতার মূল্য
তোমাকে কি প্রতিষ্ঠিত রাখে
তুমি খুব বিড়ালকে ভালবাসো, তাই?
কিন্তু ধরো,
যখন থাকতে না হবে
বিড়াল কি তখন থাকবে না
তোমার পায়ের কাছে
মানব পায়ের
সম্মতি ব্যাসার্ধ জুড়ে
ঘুরতে ঘুরতে আসবে যাবে
অবসন্ন সভ্যতার ঘরমুখী নিতান্ত বিড়াল
একাকিনী একটি একা ফাঁকা সাদা সমাজ বিড়াল
নিতান্ত ময়লাই
তোমার বাসায় থাকবে
দরজা দিয়ে বের হবে
যেন সিংহী
পাশের বনেই যাচ্ছে
অনুমতি তুমি কি দিবে না
নাকি বন নাই
পাশে কোনো বন নাই
পাড়ার পাশেই কোনো বন নাই
পৃথিবীতে কোনো বন নাই
কোথায় জন্ম লয়
তবে এত সুগোছালো জটিল বিড়াল
কোনো বিড়ালেরই
মানুষের মন খারাপের দিনে
কোনো বন নাই, কেবল বিড়াল
বিড়ালের সাড়ম্বর উপস্থিতি হয়ে
বিড়াল সমাজ হয়ে
দেখা দেয়,
বিড়ালের কোথায় সমাজ,
বিড়ালের জন্যে সেই কোথায় বিড়াল,
যারা সামনে বসে কথা বলবে
চেয়ারে সানন্দে বসবে
বলবে, তুমি কেমন আছো লুনা
তারপর হ্যান্ডশেক করবে
বিড়ালের সিংহহৃদয়
ছোট থাবা স্পর্শ করে
তুমি খুব বুঝতে পারো বুঝি
নাকি শুধু খাদ্য দান করে যাও
পাত্র খুলে
যেমন সন্তান পালে
গরু ও মানুষগুলি
খাওয়া দেয়
ঘুম পাড়ায়
সন্তান ঘুমালে পরে
চুপ চুপ যৌনকর্ম করে
থাকে পাশে বক্রহাসি কুটিল বিড়াল
সভ্যতার মুখোমুখি বালিশের পার্শ্বে থাকা
প্রায় গোল তুলার বালিশ
নাকি ইনি আসল বিড়াল?
বরিশাল
ঘাসের দায়িত্ব আছে
সবুজ বিহনে
কেবা ঘাস
কারা তাকায় জানলাপথে ভক্তিভরে
তাই মাঠে জন্ম লয় ঘাস
প্রথমে হলুদ নাকি, সবুজও তো
মারা গেল খয়েরি শালিখ
তার অক্টোবর দুই-এ, সাল দু হাজার দুই শ সাতাশ
যেন মৃত্যু পদত্যাগ
ঘাসের সবুজে
শালিখের শুয়ে থাকা
নতুন আরম্ভ
কোনো বাংলা কবিতার
তাই ভাববে বলে ভাব করে
কবিতা লেখার খাতা হাতে নিল নবীন যুবতী
নাম নিল জীবনানন্দের
যাবে বরিশালে
বরিশাল, তুমি তো অনেক নাম
যারা যায়
কবির ব্যর্থতাসহ
লঞ্চে যেতে হয়
সঙ্গে বিষণ্নতা
নিজের শরীর
অথবা সবুজ বুঝি ঘাসের মতই
কোনো সদ্য বরিশাল
দেখা দিল কলকাতায়
অশেষ মুগ্ধতাসহ
এই তো কবিতা
যারে না পায় সঠিক লাগে, সৎ বর্ণনায়
ততদিন
পাখির মতই দিন
যেন সকল একাকী পাখি
একা ওড়ে
ওড়াই কবিতা
সঙ্গে আরো কত একা পাখি
একা থাকে, একা মানে পাখি
মানে, পাখিই কবিতা
হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়, উড়ে যায়
দাঁড়ে বসে, কার্নিশ বা ছাদে
ঝুপ করে এক খণ্ড বিষণ্নতা
নেমে আসে
লঞ্চে, কোনো বরিশালে, কলকাতার
সদর রাস্তায়
নামে তাই পাখিই কবিতা
যেন বিষণ্নতা
যেন কবি অবতীর্ণ
পাখি নামে
বিষণ্নতা নামে
তাই পত্র মানে পাখা মানে
পাখি মানে ওড়া তাই
যে ওড়ে সে কবি
তাই সকল মানুষ
চিরদিন কবি হতে চায়
তাই একটি নবীন নারী
একটি পানির উর্ধ্বে ধাবমান
জলযানে
রেলিংয়ের একলা পার্শ্বে
সবুজ ঘাসের মত গ্রাম দেখে
দূরে দেখে
দূরে তাই ভাবছে কবিতা
মানে ভাবছে কবিতা মানে
বরিশাল, শালিখতা, বিষণ্নতা,
নির্জনতা, টির্জনতা,
ক্ষুধাই কবিতা
কোনো মলিন গলিতে
রেস্টুরেন্টে মলিন খাবার আর ম্লান মানুষের
তালিকা সমৃদ্ধ খাতা
বর্ণনাও আছে
বর্ণনার সক্ষমতা কবিতা আকারে
দেখা দেয়
সূর্যের নিচেই হাঁটে পৃথিবীর সম্ভাব্য কবিরা
যেন ভাষ্য আছে, ভাষা নাই
ভাষা আসবে দূর থেকে
নারীর জানলা থেকে
সন্তানবিহীন কোনো ঘাসের গর্ভ থেকে
দাঁড়ি, কমা, ভবিষ্যৎসহ
তাই অসংখ্য গ্যাজেট আর ব্যাকপ্যাক
পানিতে ফেলবে বলে
যেন এক কবির অধ্যাত্মবাদ
সরলতা নাম নিয়ে
দেখা দিল নির্দয় কেবিনে
হায়, কারো দেখা পায় না কবিরা
কোনো বর্ণনাই
সে বর্ণনা নয়
যেন ভোর ভোর নয়
তবু পরস্ত্রী ঢোকার মত
দরজা দিয়ে ভোর দেখা গেল
নগ্ন ও হলুদ কোমল কোনো ঘাস
যেন কোনো বিশাল গোপন
টেবিলের অন্য প্রান্তে বসে আছে
প্রেম নেই, অশেষ জিজ্ঞাসা আছে
তরুণী কবির—
৬/৬/২০১৭
নদীর কিনারায়
আবার কি আমরা মরব না আমরা
আরেকটি বার
দুয়ারে দাঁড়ায়ে বিদায় নেওয়ার
সুযোগ ছাড়াই
চলে যাব যার চিহ্নই নাই
সে জায়গায়
যাব না সেথায় ভাই আমার,
সেই একটি মাত্র
নদীর ধার?
যেখানে কোনোই আলো আর নাই
অন্ধকারেই অন্ধকার
একটি মাত্র দুনিয়াদারির
আগে কি আমরা ছিলাম নাই
সেখানে আমরা?
সেখানে আমরা ফিরব না আর?
কোথায় ছিলাম
মনে কি নাই?
কিন্তু আমরা
সেখান থেকে আসি কি নাই?
ঘাসের ওপরে পা রাখবার
জন্যেই বুঝি
বিধাতা দিলেন ঘাসের ধার
এ পারাবার
এখানে আমরা করার কিছুই ছিলই নাই
দেখার জন্যে দেখতে থাকার
পৃথিবীভার
করার জন্যে করতে থাকার
না করা আর
ছিল ঘুম নামে না ঘুম এবং
ঘটনারাশির
স্বপ্ন নামের অত্যাচার
ক্লান্ত আমরা ক্লান্ত আমরা
হাজার বার
ক্লান্ত আমরা আবার ফিরব অন্ধকার
কোথায় তুমি আমার ভাই,
ও ভাই আমার?
২.
আমি ভাইয়ের হাত ধরলাম
ভাই জানে না এমন কিছু নাই
হাতের মর্ম হাতেই আছে
ভাই জানাইলেন তাই
যখন গাছ হইতে ফুল ছিঁড়লেন
গভীর নরম হাতে
সেই ফুল রাখলেন কত
আদর করে
যেন কোনো ছোট্ট মৃতদেহ
কোনো ছোট্ট মানুষের
ভেসে যাচ্ছে
ছোট্ট নদীর বাঁকে
আমি অবাক হইলাম
চেয়ে রইলাম
কানতে বসলাম
ভাইয়ের চরণপাতে
যেন একটি মাত্র দুনিয়াদারির
আগে যে আমরা ছিলাম নাই
সেখানে আমরা ফিরেই যাচ্ছি বারংবার
আমার ভাই,
ও ভাই আমার!
৩.
কেন নদীর ধারে গেলাম আমরা
পা রাখলাম
করুণ জলস্রোতে?
কেন ফুলের মরণ ঘটার শেষে
পানির মধ্যে
রাখতেই হবে পা!
আমার জানার ছোট্ট ইচ্ছা
ছোট্ট বুকে
অল্প একটু ছিল
ভাই তা জানেন
কিন্তু বলেন নাই
আমার জীবন এমন তবেই যাবে
না জানতে না জানতে?
জানলে কী হয়
জানলে কেন জানতে হয় না
ভাইকে আমি জিজ্ঞেসও করলাম
গোপন কথা জানতে চাওয়ার মত
কানের মধ্যে কান আর
দেহের মধ্যে দেহ
কারুর জন্যে রয় না পড়ে কেহ
আমার জন্যে আমি
আমার ভাইয়ের আমি বোন
যখন সকল সংগোপন
আমরা এই দুনিয়ায়
আমরা এই দুনিয়ায় ছিলাম কি কোনো দিন
আমরা এই দুনিয়ায় ছিলাম না কোনো দিন
এখন আসছি যখন দেখতে পেলাম
আরো না কতই লোকে
একই উদর হইতে আসা
একেক পরিবার
অন্য সবার থেকেই নাকি
আলাদা তারা থাকে
আলাদা ঘর
আলাদা বাঁচা
আলাদা নিজ নিজ
এখানে এসে দেখতে পেলাম
কত কিছুই আছে
কেবল আমরা মাত্র নাই
এখন যখন কোনো কিছুই নাই
যখন আবার আমরা মরতে আছি
আরেক বারের মত
তখন আবার কোনো বাঁচাই যখন নাই
তখন মরতে গেলাম নদীর পাড়ে তাই
আমি ভাইয়ের কোলে মাথা রাখলাম
হাত রাখারই মত
ভাই জানাইলেন হাতের মর্ম
হাতের মধ্যে নাই
তাই তে নদীর মধ্যে যাই
আমরা নদীর পানির মধ্যে
আমরা পানির মধ্যে যাই
আমরা গাছের জন্যে কাঁদব বলে বনের মধ্যে যাই
আমরা পথ হারানোর আশায় ঘরেই
পথ হারাতে চাই
এবং
চাওয়ার শুরু যখন ঘটে
চাওয়ার মরণ তাই
৪.
কত ধুলার মধ্যে
পড়েই ছিলাম আমি
কত অনেকগুলি বছর আমার
কিছুই তো আর
জানার ছিলই নাই
তারপর তারা শিক্ষা দিলেন
বললেন আমি শিশু
আমার বুঝতে পারা নাই
আমার আমার মধ্যে ঢুকতে পারার
তখন অনেক অনেক দিন
আমি মাটির মধ্যে
থাকতে হবে
হামাগুড়ি দিতে হবে
আমার অনেক শিক্ষা অনেক ঋণ
তারপর বড় হব
তারপর আমার বড় হতে হবে
যথা
হাঁটতে হবে সামনের দিকে
কথা বলার পরে
মুখ বন্ধ রাখতে হবে
সবাই বলে তাই
৫.
অথচ আমি একাকী ছিলাম
যখন ছোট্ট ছিলাম
আমি কত ছোটই থাকতে ছিলাম
যখন শিখতে থাকতে ছিলাম
শিখতে থাকতে ছিলাম যত
দুনিয়াতে থাকতে থাকার নিরানন্দগুলি
কত থাকতে থাকা
কত চারদিকেই ঘুরতে থাকত
সকল চারিদিক
এখন সে সব নাই
এখন সে সব ঘুরতে থাকার
নীরব অবসান
এখন আবার
মরার কথা আরেক বারের মত
নতুন জন্ম নেওয়ার মত
মৃত্যুবরণের
আশায় আমরা বসেই আছি
নদীর কিনারায়
হায় নদীর কিনারায়!
ব্রাত্য রাইসু ২৭/৭/২০১৭
সাদী কাউকাব এর কবিতা
ডুঁবসাতার?
গভীর জলের মাছ বলে গালি দাও—আমি ভাসমান এক
সরল পুঁটির জ্বর। ছড়াই শঙ্কা’র মিউকাস। কানকোয়
কেটে ফেলি পূতিগন্ধ-পানির হর। আমার তলে, বহু,
বিরাটাকার মাছ। আমি না চাই তবু,
হিংসা ও হীনতার জের আমায় করে গ্রাস
ঘাই দিয়ে ঘোলা করি সকল মহৎ।
আমার, সাধ্বী নারীর লোভ তাই, তারা’র
চ্যুতি হলে জ্যোতি মাখি গা’য় আর দিনে
তাপের ভয়ে আফসাই, করি ঠান্ডার এবাদত।
আমাকে তরল ডেকে দেখো, আমি ডুব দেবো
কাদায় গা ডলে প্রাণপণ
উপরে পাঠাব বুদবুদ পূত
গভীরের বিরল পাঠে আমি খাঁটি হব—
আমাকে পাবে যথাযথ পুণ্যময়; পাক।
ম্যান্ডেট
আমাকে ঘিরে সকাল সন্ধ্যা দাঁড়ায়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কুকুর।
আমার যাবতীয় গতি স্থাণু হয়ে আছে তার কাছে।
যৌনতায় আক্রান্ত হলে—নিরুপায় আমি ওর কাছে যাই;
গালে গাল ঘষে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে পাঠগৃহে পাঠাই।
আদবে লেহাজে আলোকিত হয়, আমার আগত ভবিষ্যৎ।
তারপর আমি—যথা নিয়মে কুকুর সাপ্লাইয়ের ম্যান্ডেট লাভ করি।
আশহাদুআল্লাইলাহাইল্লাল্লাহ
খোদা, সম্মিলিত সেজদা আমি দেবো না
লোক দেখানো নামাজে তোমার বীতরাগ—
এ কথা আমি কী করে বুঝাই—তোমার কঠোর ঘোষণা
তোমাকে নীরবে খোঁজার
আমি ভয় পাই, খোদা, নিজের চেয়েও তোমাকে ছাড়ার
তাই চক্ষু চড়ক রাখি
ভুল করেও দেই না কুর্নিশ, দেবো না কুর্নিশ
এই ভালোবাসা ভুল বুঝে তাবৎ সাজেদ, জানি
আমার শির নিতে কোষ মুক্ত করবে তলোয়ার
শুনো খোদা, তখন তোমাকে
আরো একবার ভালোবেসে তাদের কলবে জুড়ে দিয়ে যাব
তোমার গূঢ় অন্ধকার।।
আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন
পাপে ডুবি থাকি পরম
মাথা তুলে কোনোদিন বাড়াই নাই মুখ
পুণ্যের সঙ্গে কোনোকালে মেলে নাই সাক্ষাৎ
হেনকালে পাড়ি যদি আফসোস তাই—
আর কোনো কাজে জড়াই নাই জীবন।
রুনু
অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে, আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো। টিকিট করে ফেলো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারি নি শুধু, আমার সামর্থ বড়োজোর গলির মোড়, যেখানে পথ হারানোর শংকায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ কথা ছিলো রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন , কপর্দকশূণ্য পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার।
সজল আহমেদ এর কবিতা
বিভ্রান্ত কবিতা আবৃত্তি
বিভ্রান্ত
লতা বিভ্রম পাতার
ডালে বিস্তৃত সোনার মাদুর
পোকা খাবার লোভে ছোটে
কয়েকশ বিভ্রান্ত বাদুড়।
জানে না বাদুড়
আগালে কয়েকটা ধাপ
সামনেই পাঁতা
আছে মৃত্যুর ট্রাপ!
চাঁদটা হারিয়ে যায়, মেঘের সয়ে অকথ্য যন্ত্রণা
বিভ্রান্ত জোনাক শোনে আঁধারের কুমন্ত্রণা।
জোনাক আর জ্বলেনা
চাঁদ ও ওঠে না
বাদুড় আর ফিরে আসেনা
গাছে বিছানো সোনার মাদুরে
কেউ এসে বসে না।
চলে...
লওহে মাহফুজে এক
একাকী কোরানিক বন্দনা,
বিভ্রান্ত শয়তান ছুটে চলে
পথভ্রষ্ট করার আকাঙ্খা।
ছুটে মসজিদে মসজিদে
ভাঙতে এবাদত
করায়ত্ব হাজীর পাগড়ী করে
লাগায় কলহ; কে শরীয়ত কে মারফত!
কার টুপি লম্বা, গোল। কে রেখেছে দাঁড়ি;
বিভ্রান্ত সবাই, মসজিদে কি আসতে পারবে নারী?
বিভ্রান্ত সকলে বিভ্রান্ত ইমাম,পুরোহিত, রাব্বি, গির্জার যাজক!
চলে কথার বাহাজ, রুষ্ট উপাসক
ফাঁকে ফুরিয়ে যায় সমস্ত ইবাদত!
কে শ্রেষ্ঠ?
মুহাম্মদ না যিশু?
কে জ্ঞানী?
ওসমান নাকি বিশু?
কার গ্রন্থ জগতের এলমের দ্বার...?
কাফের নাকি মুমিন্স ছিলো সম্রাট আকবর?
কে নাস্তিক? কে আস্তিক? কে কাফের বেঈমান
সংশয়বাদী খুন করো ওর ঘটে নেই ঈমান।
অদৃষ্টের পরিহাস - বিভ্রান্ত ইতিহাস,
আকবরি খচ্চর, অশোকের শিক্ষালয়
ভেঙেছে সুলতান মাহমুদ,
দুনিয়া বানিয়েছে যুদ্ধালয়!
অথচ ছিলো কিনা অশোক
তারই নাই কোন হিসাব
বিভ্রান্ত, বিভ্রান্ত, বিভ্রান্ত সব!
বিভ্রান্ত সত্ত্বা, মৃত্যুর পর কই যাবে আত্মা?
কবরের আজাব হবে নাকি হবে না?
বিভ্রান্ত নাস্তিক, পরপার কি আছে? এই ভাবনা!
প্রেমিকা ও অবসাদ
অকালে হারিয়ে যায় অযত্নের দাঁত
প্রেমিকা জমা করে শুধু অবসাদ
শুধু অবসাদ যারা জমা করতে জানে
তাঁরা শেখাতে আসে ভালোবাসার মানে!
বেকার কবি
১.
মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
সোসাইটির পাশাপাশি
আল্লা ও আপনাকে
চোখে দ্যাখে না!
সোসাইটি কানা
আর আল্লা আপনারে
লাইক করে না!
আপনি একজন বেকার
তারোপর কবি
আপনি অভাবী
আপনি ফতুর!
প্রেমিকার কাছে
অপমানিত হইতে হইতে,
এক পর্যায়ে এসে থেমে যান
পৃথিবীর চড়-লাথি খাইতে খাইতে
আর চলার অ্যানার্জি পান না।
২.
এরপর বাবা-মা আপনাকে ভাবতে থাকে উচ্ছিষ্ট।
মিঃ সানা আপনি সংসারে
অনাহারীদের মতো ক্লিষ্ট!
আকাশের ফারিশতাদ্বয় আপনাকে পাপের কারণে করতে থাকে লানত,
মৃত্যু আপনার কাছে রেখেছে "বেঁচে থাকা'' আমানত।
আপনি কই যাবেন?
কই গিয়া মুক্তি পাবেন?
এখন কবর ও আপনাকে
আর গ্রহণ করতে চায় না!
মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
আল্লা ও আপনাকে
চোখে দ্যাখে না!
আপনি কি করবেন এখন?
৩.
মরতেও আপনার নিষেধ,
আপনি দৌঁড়ে পালান জঙ্গলে যখন
সামনে পরে একটি বাঘ
বাঘ আপনাকে খেয়ে ফেল্লে
খিয়ানত হবে মৃত্যু রেখেছিলো যে আমানত।
বাঘের সাথে জম লাড়াইয়ে
আপনি জিতলেন,
আহত হয়ে ফিরে আসলেন
কিন্তু আহত আপনার সেবা করার মতো কাউকে পেলেন না!
মিঃ সানা
আপনি এখন বিপাকে
আপনাকে মৃত্যুও চোখে দেখে না।
৪.
ধরুন একসময়ে মৃত্যু তার যাপিত ঋন ছাড়িয়ে নিলো
এবং একসময় সত্যই আপনার মৃত্যু হলো!
মিঃ সানাউল্লাহ্ সানা
এবার আসবে মৃত্যুর পরের ভাবনা!
৫.
আপনি কি ভাবছেন আপনি বেহেশতে যাবেন?
আপনি কি বিগত মিথ্যাচারের কথা ভাবেন?
যা আপনি করেছেন প্রেমিকাকে খুশি রাখতে বাবা-মার সাথে,
বন্ধুদের সাথে!
মিঃ সানা
আপনি লিখে নেন
আপনার আর
বেহেশতে যাওয়া হবে না!
আপনি মৃত্যুর পর
আল্লার কাছে আরেকবার
চান্স চাইতে পারেন দুনিয়ায়
ফিরে আসার।
মিঃ সানা
আপনি কি জানেন?
একবার মরে গেলে
আর ফিরে আসে না!
৬.
আপনি আর মরলেন না।
একটা সিগারেট খেতে আপনি বাইরে দোকানে গেলেন
একটা জিপ এসে দোকানের সামনে থামলো
পুলিশ এসে আপনাকর সার্চ করে পেলো গাঁজার টোপলা!
মিঃ সানা
লক্ষ্য করুন, আপনি কিন্তু গাঁজা খান না!
কোথা থেকে এলো টোপলা?
আপনি অতশত ভাবার আগেই; আপনাকে জিপে তুলে নিয়ে গেলো।
থানায় আপনি মাথা নিচু করে আছেন
পুলিশ আপনাকে রিমান্ড এর ভয় দেখাচ্ছেন
আপনি ভয়ে জবুথবু হয়ে আছেন
সানা আপনি সামনে তাকাবেন না
সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রক্তচক্ষু আপনার বাবা!
আপনি তবুও তাকালেন
বাবা আপনাকে বাসায় নিয়ে আসলেন
আপনার শাস্তি হলো ৩ বেলা ভাত বন্ধ
আপনি কাঁদতে কাঁদতে যদিও হন অন্ধ
ভাত আর আপনাকে ৩ বেলা দিবে না!
মিঃ সানা
আপনার খেতে মানা।
আপনি কি করবেন?
আস্তে দৌড় দিয়ে পালাবেন?
বা অন্যকোথাও খাবেন?
যদি পালান বা অন্য কোথাও খান খানা
মিঃ সানা
তবে আর বাপের হোটেলে ভাত খাইতে পারবেন না
আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে।
আমার অত টাকা নাই
আমারো তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু বড়সড় রেস্টুরেন্ট এ খাইতে যাই,
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
চলো বাদাম চাবাই
অথবা ফুচকা চটপটি খাই
এরপর সেকেন্ড কোন
অপশন আমার কাছে নাই।
কারণ আমার অত টাকা নাই।
আমার ও তো মনেচায় তোমারে নিয়া একটু ঘুরি কিম্বা শপিংয়ে যাই
কিন্তু দ্যাখো আমার অত টাকা নাই!
এমনই কপাল বাল
আমার এমন গরীবি হাল!
রিক্সায় চড়তে চড়তে
একটা গাড়ির কথা প্রায়ই ভাবি
কিন্তু দ্যাখো আমি অভাবী;
গাড়ি কেনার মতো অত টাকা আমার নাই,
রিক্সা থামায়ে আছে চলো যাই।
লাচ্ছি খাইতে খাইতে ভাবি
এখন একটা বীয়ার ক্যান হাতে থাকা উচিৎ ছিলো অন্তত...
পকেটে তো গড়েরমাঠ স্বপ্ন দেখি অথচ!
মাঝেমাঝে তোমারে মিসডকল দিতে গিয়া লজ্জা পাই,
আবার ভাবি, এত লজ্জা কিসের?
আমার তো অত টাকা নাই!
ভাবি, কেন আমার অত টাকা নাই?
আমি স্বপ্ন দ্যাখি
স্বপ্ন দেইখা মজা পাই
কারণ আমার অত টাকা নাই!
যেহেতু আমার অত টাকা নাই
সেহেতু আমি দোষ দিবো সব বাপ শালারে
শালা তোর যেহেতু টাকা ছিলো না বেহুদা কেন জন্মাইলি আমারে?
যেহেতু পাপ বাপরেও না ছাড়ে
সমূহঃ খিস্তি জপি বাপের ও তরে.......
তুমি তো স্বপ্ন দ্যাখো, আমাদের বাড়ি হবে, ছাদ হবে
অথবা এও দ্যাখো চাঁদে বসে আমাদের বাড়ির ছাদ দেখবে।
শোনো একটা পাকা পাঁচতলা বাড়ির কথা আমি প্রায়ই ভাবি
বাড়িতে একটা সুইমিং পুল চাই যেখানে নাইতে নামবো তুমি ও আমি।
পাইতে এখনো পোড়াতে হবে কাঠখড় আমরা যা চাই,
বিকজ আমার অত টাকা নাই।
তোমার আঙুলগুলো ধরতে ধরতে ভাবি
কমপক্ষে এক ক্যারেট হীরার একটা আংটি আদপে থাকা তো উচিৎ ছিলো;
অথচ সিটিগোল্ডে তুমি পুরোটা মুড়ে আছো আমার লাগেনা ভালো!
কি আর করা? সব নীরবে দেখে যাই
কারণ ডায়ামন্ড কেনার মতো অত টাকা আমার নাই!
চলো ঐদিকে রাস্তা ধইরা পাশের দোকানে যাই
সিটিগোল্ড আংটিতে করাবো হাত বোঝাই।
দামী সব হোন্ডা দেখে বারবার আফসোসে মরে যাই
অন্তত আমার একটা ডুয়োকাটি এখন পাছার নিচে থাকা লাগে সবকিছুর আগে!
কিন্তু কী?
আমার কোন হোন্ডা নাই
আমি মনেমনে ভো ভো হোন্ডা চালাই
কারণ
তুমি জানো
আমার ঐটা কেনার মতো অত টাকা নাই।
যেহেতু আমি ফকিরনির ঘরের ফকিরনি
সেহেতু দ্বিতীয়ত আমি অশ্লীল গালি দেই আমার নসীবরে.....
শালা সবার টাকা আছে, সবাই করে দুহাতে কামাই
অথচ আমার কেন অত টাকা নাই?
এরপর আমি সমগ্র খিস্তি জপি তোমারে
যেহেতু তুমি আসার পর আমার
শুধু চাহিদাই বাড়ে
টাকা পাইতে ইচ্ছা করে
আর নিজেরে বেশ গরীবের বাচ্চা মনে হইতে থাকে
যেহেতু তুমি শুধু সীমাবদ্ধ "আমার এত এত চাই''
আর এইটা খবো ঐটা খাই
ঐটা কিন্যা দাও ঐটা চাই কিম্বা
কিনে দিতে হবে যত পরে খরচ
সেহেতু গালিশোনা তোমার ফর্জ!
যেহেতু তুমি জানো আমি গরীব
তবুও চাহিদার শেষ নাই
অতএব তোমার নিস্তার নাই
আর আমার যেহেতু টাকা নাই
সেহেতু মুখের ট্যাকশোও হারায়ে ফালাই
দৌঁড়াও তুমি দাও দৌঁড় তুমি
তোমারে দিয়া কার বাল্ফাবো আমি?
তোমারে আর দরকার নাই
বিকজ তোমারে পুষবার মত অত
টাকা আমার নাই।
ঈদমোবারক
আমি তখন বড়লোকের ছাদে বইসা দরিদ্র পল্লির দিকের চাঁদ খাচ্ছি। ঈদের বড় চাঁদটা চাবাইতে চাবাইতে গিইলা ফেলাইলাম যেন ওঁরা চাঁদ না দ্যাখে। যেহেতু ঈদ সবার না। ঈদের চাঁদ সবাইর দেখার অধিকার থাকবে কেন?
আধুনিক কবিতা: নির্বাচিত ৩ কবির ১৫টি কবিতা
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
৭:১১ AM
Rating:
কোন মন্তব্য নেই:
Good books