অযোদ্ধার রাম মন্দির নিয়ে পারভেজ আলম এর লেখার সংকলন

১.



গতকাল ছিল গ্রামসির জন্মদিন। প্রিজন নোটবুকসে তিনি খ্রিষ্টিয় চার্চের পুরোহিতদের উল্লেখ করেছেন ট্রাডিশনাল বুদ্ধিজীবী হিসাবে। এবং দাবি করেছেন যে পোপ ও চার্চের শীর্ষ পুরোহিতদের কাছে ঈসা মসিহ যতোটা আপন, ফ্যাসিস্ট ইতালির রাজনৈতিক নেতারা (সিনেটরদের) অতোটা না। কিন্তু তার নিজ সময়কার ইতালির শীর্ষ অনেক লিবারাল/আধুনিক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ফ্যাসিস্ট এমপি-মন্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্ঠ বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলেন। 


তো, বাংলাদেশে সেকুলার/লিবারাল ধারা এবং ইসলামী ধারা - এই দুই ধারতেই এমন জনপ্রিয়/নেতৃত্বস্থানীয় ট্রাডিশনাল বুদ্ধিজীবী/শিল্পী শ্রেণী আছেন, যারা হিরক রাণীর দরবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। এই দুই ধারা সদাই পরস্পরের সাথে হেজিমনি বিস্তারের লড়াইয়ে লিপ্ত। তারাই পাঠ্যবই লেখেন। তা পাল্টান। দুই পক্ষই নানান দাবি দাওয়া নিয়া হিরক রাণীর দরবারে যান, এবং তার জুলুমের শাসনকে স্বীকৃতি দেন। আপনি দেখবেন যে এই দুই পক্ষের লোকেদেরই হিরক রাণী অথবা/এবং তার কোন মন্ত্রীর সাথে ছবি আছে। অথচ এই দুই পক্ষই আবার দেশের নানান মার্জিনাল জনগোষ্ঠী এবং জুলুমের শিকার হওয়া জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে (আসলে তাদের কণ্ঠকে কুরবানি দিয়ে নিজেদের এবং হিরক রাণীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে)।


হিরক রাণীর দরবারে যেই কালচার-ওয়ার বা হেজিমনির লড়াই অনুষ্ঠিত হয়, আমাদের উচিৎ তা থেকে দূরত্ব বজায়ে রাখা। কেননা এই লড়াইয়ে যারাই জিতুক না কেন, তা হিরক রাণীর বিজয়। রামরাজ্যবাদীদের বিজয়। ধর্ম যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র-ক্ষমতা এবং ফ্যাসিবাদের বাহন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু বলার নাই। বরং, যে ধর্ম হোসেনি ও মজলুমদের পক্ষে, অচ্ছুত ও ম্লেচ্ছদের পক্ষে - আমরা সেই ধর্মের ধার্মিক ও ভক্ত। যে কৃষ্ণ হলেন পরম প্রভুর অবতার, তার প্রতি ভক্তি প্রকাশ করে আমরা রাধা হইতে রাজী আছি। দিনশেষে, আনন্দ বাজারের সওদাগর হওয়াইতো আমাদের লক্ষ্য। 


এমনকি ছোটকালে পড়া রামায়নের রামকে নায়ক হিসাবে গ্রহণ করতেও আমাদের আপত্তি নাই, কেননা সে হারকিউলিসের মতোই একজন পৌরাণিক চরিত্র। কিন্তু যে রাম হলেন আর্য সুপ্রিমেসিস্টদের রাজা, বর্ণবাদী জুলুমের উসিলা, এবং বর্তমান হিন্দুস্তান শাসনকারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতীক - সেই রামকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কারন এই রাম কোন পৌরাণিক ছরিত্র না। বরং ফ্যাসিবাদী জালেমদের রাজনৈতিক প্রতীক। এই প্রতীক ভেঙে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে রাবনকে নায়ক বানিয়ে নতুন পুরাণ রচনা করতে হবে (যেই কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল)। 


হিরক রাণীর দরবার জনগণের সংগ্রামের ময়দান না। আমাদের ময়দান হলো কারবালা। এবং লংকা। এজিদি-সালাফি এবুং রামভক্ত-ফ্যাসিস্টদের মধ্যে আমরা পার্থক্য করি না। দুই পক্ষকে পরাজিত করবার মাধ্যমে আতরাফ-অন্তজদের ঝান্ডা তুলে ধরাই আমাদের জিহাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পুরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।




২.

চাড্ডিদের আনফ্রেন্ড/ব্লক করুন। আমি অনেক আগে থেকেই করি। আজকে একজন ভদ্রমহিলাকে আনফ্রেন্ড করলাম, যিনি এতোদিন চুপ করে ছিলেন, কিন্তু আজকে আর জয় শ্রী রাম লিখে উদযাপন করা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন নাই। চাড্ডিদেরকে ভদ্র সমাজে চলাফেরা করতে বা কথা বলতে দেবেন না। 


কেউ কেউ দেখলাম তাদের সাথে তর্ক করছেন ইতিহাস নিয়ে। যা অর্থহীন কাজ। সময়ের অপচয়। ফ্যাসিস্টরা তাদের ন্যাশনাল মিথ বানাবার উদ্দেশ্যে নানান রকম বিজ্ঞান ও ইতিহাসের বয়ানের উপর নির্ভর করে। নাজিবাদীরাও এই কাজ করেছিল।


সিউডোসায়েন্স, সিউডোআর্কিওলজি ইত্যাদির ব্যবহারে ফ্যাসিস্টরা সবসময়ই এগিয়ে থাকে। আপনি তাদেরকে তাদের চিন্তা ও তথ্যের গলদগুলো দেখিয়ে দিলেও লাভ নাই। কারন যেই সিউডোসায়েন্স ও সিউডোআর্কিওলজিগুলাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তা তাদের ফ্যাসিস্ট কর্তাসত্তা গঠনের কাজে লেগেছে বলেই তা করেছে। তাদের এই ফ্যাসিস্ট-সাম্প্রদায়িক কর্তাসত্তা নিয়ে যতক্ষণ তারা বিপদগ্রস্ত না হবেন, লজ্জিত ও অপমানিত না হবেন - তারা ঠিক হবেন না। 


ফ্যাসিস্টদের সাথে তর্ক করে সময় নষ্ট করবেন না। কেননা আপনার কোন যুক্তি, তর্ক তারা গ্রহণ করবেন না। তাদেরকে মোকাবেলা করুন। রাজপথে মোকাবেলা। অনলাইনে আনফ্রেন্ড/ব্লক। সহজ হিসাব।



৩.

ধর্ম নয়, জাতিবাদ-বর্ণবাদ! 


দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ আমলে বিকশিত যেই সাম্প্রদায়িকতা, তা ধর্মীয় প্রতীক ও পরিচয়ের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠলেও আদতে জাতিবাদী-বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িকতা। হিন্দু ও মুসলিমকে শ্রেফ ধর্মীয় সম্প্রদায় গণ্য করে নয়, বরং জাতি হিসাবে বিবেচনা করেই এই সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে উঠেছিল। উপমহাদেশের ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং ধার্মিকদের কন্ঠকে বলি দিয়েই এই জাতীয়তাবাদ উৎপাদিত হয়েছিল (ও পুনরুৎপাদিত হচ্ছে)। এসব আপনাদের অজানা থাকার কথা না। কেননা এই ইতিহাসগুলা সকলেই জানেন কম বেশি। 


যতীন সরকারের মতো বুদ্ধিজীবীরা সাম্প্রদায়িকদের ধার্মিক হিসাবে মানতে অস্বীকার করেছেন। বড়জোর তাদেরকে বকধার্মিক বলেছেন, যাদের কাজ হলো ধর্মীয় প্রতীক কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করা। বাংলাদেশে হিন্দু ও মুসলিম জনগণের বড় অংশই কোন ধরণের সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদী রাজনীতিতে জড়িত না। তারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তবে কেন আপনি সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদীদের দোষ তাদের ঘারে চাপাবেন? 


কিন্তু নির্দোষের উপর দোষ চাপাবার এই কাজটা করেছেন বাঙলার (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার) ঐতিহ্যবাহী বাম-প্রগতিশীলরা। ধর্ম পরিচয়ের উপর ভর করে যেই সাম্প্রদায়িক-জাতিবাদ বিকশিত হয়েছিল, তার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েই তারা ধর্মকে রাজনীতি ও সংস্কৃতির পরিসরে পুরাপুরি খারিজ করার পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্মকে ক্যাটাগোরিকালি বাদ দিয়ে, বিরোধিতা করে, বা ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার করে কি জাতিবাদী-বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িকতাকে মোকাবেলা করা সম্ভব?


প্রশ্নটা কোন তত্ত্বীয় প্রশ্ন না। ইতিহাসেই এর উত্তর আছে। আর উত্তরটা হলো যে - সম্ভব না। কেন সম্ভব না, তার উত্তরও ইতিহাসেই আছে। উনবিংশ শতকে ও বিংশ শতকের শুরুর ভাগে হিন্দু ধারণাটি কেবল ধর্মীয় পরিচয় হিসাবে বিকশিত হয় নাই, বরং একটি ভৌগলিক-সাংস্কৃতিক-জাতীয়তাবাদী ধারণা হিসাবেও বিকশিত হয়েছে। যারফলে, একজন হিন্দু ঘরের নাস্তিকের হিন্দু হওয়ার পথে কোন বাধা থাকে না। 


যেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিকাশ হয়েছিল এর বিপরীতে, তাও মুসলমান জাতি-সংস্কৃতির ধারণার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ঐ মুসলিম জাতীয়তাবাদ ছিল পূর্ব বাঙলার মানুষের জন্যে সমস্যাজনক। কেননা, ঐ মুসলিম জাতীয়তাবাদের মধ্যে প্রথম থেকেই একটা ডিফিটিস্ট উপাদান ছিল। মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রচারিত তত্ত্ব (মুসলমানরা ভিনদেশী অথবা ভিনদেশী সংস্কৃতির অনুসারী) মেনে নিয়ে নিজেদেরকে নিজ দেশে পরবাসী বলে কল্পনা করে নিয়েছিলেন। এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই বাংলাদেশে পরে বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়েছে। এবং একই কারনে আমরা বাংলাদেশের মানুষ পরবর্তিতে সার্কের মতো বহুজাতিক উপমহাদেশের ধারণাও কল্পনা করতে পেরেছি। কিন্তু ইন্ডিয়ার জনগণ এখনো ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা জাতিবাদী-বর্ণবাদী দিগন্তটি অতিক্রম করতে পারে নাই। ফলে একটি বহুজাতিক-বহুসাংস্কৃতিক দক্ষিণ এশিয়া আমাদের অধরা রয়ে গেছে। 


পশ্চিম বাঙলার বাম-প্রগতিশীলদের পশ্চাৎপদতা বাংলাদেশের বামপন্থীদের বিকাশও বাধাগ্রস্ত করেছে। ধর্মকে রাজনীতি-কালচার থেকে খারিজ করবার যেই রাজনীতি তারা করেছেন, তা যে কৌশলগতভাবে ভুল ছিল, তা এখন পরিষ্কার। কেননা, তাদের এই রাজনীতি বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাঙলায় ধর্মীয় পরিচয় নির্ভর ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিকাশ থামাতে পারে নাই। উলটো ফ্যাসিস্টদের হাতে ধর্ম ব্যাখ্যার ময়দানটা পুরাপুরি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ফ্যাসিস্টরা প্রায় বিনা প্রতিরোধে তাদের মতাদর্শকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। 


আমাদের পশ্চিম বাঙলার কমরেডদের পশ্চাৎপদতা ও হিপোক্রেসি এইক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ক্ষতি করেছে। দ্বিতীয় ক্ষতিটা করেছে পূর্ব বাংলার প্রগতিশীলদের হীনমন্যতা। আমাদের পূর্ব বাংলার বাম-প্রগতিশীলরা যেহেতু শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে ছিলেন, হীনমন্যতায় ভুগতেন, তাই তারা পশ্চিম বাংলার কমরেডদের রাজনৈতিক কালচার বিনা বিচারে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পশ্চিম বাংলার কমরেডরা নিজেদের মধ্য থেকে কখনোই সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদী কালচারকে উচ্ছেদ করতে পারেন নাই। তাদের মধ্যে সবসময়ই এমন অনেকে থেকে গেছেন, যারা ধার্মিকতা ত্যাগ করেছেন বটে (বা লুকিয়েছেন)। কিন্তু বর্ণ, জাতি, ও সংস্কৃতির দিক থেকে গেছেন দ্বিজবর্ণের। এবং সেইসাথে লালন ও চর্চা করেছেন ইসলামবিদ্বেষ। 


সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোন ছাড় দেয়ার উপায় নাই। হোক তারা হিন্দু অথবা মুসলিম জাতিবাদী। কিন্তু একজন সাধারণ ধার্মিক মানুষকে আপনি কেন ঘৃণা করবেন? কেন সেই ধর্মীয় আকিদা বা দলগুলোর ধার্মিকতাকেও ঘৃণা করবেন, যারা সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের ধারণায় বিশ্বাসী? আসলে, নির্বিচার ধর্ম বিরোধিতা হলো সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদ প্রচারেরই একটা উপায়। বাঙলা অঞ্চলে ধর্ম বিরোধিতার নামে অনেকেই মূলত ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী বর্ণবাদের চর্চা করেন। নিউ-এথিস্টদের একাংশ যে মূলত কালচারাল হি-ন্দু-ত্ব-বা-দী, সেটাও বিগত এক দশকে আমরা দেখেছি। তবে, ভাল ব্যাপার হলো যে আগে তারা নিজেদের আসল পরিচয় লুকিয়ে এবং নাস্তিকতার ভান করেই সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদ প্রচার করতেন। কিন্তু এখন তাদের আসল পরিচয় বের হয়ে গেছে। সাধারণ নাস্তিকরাও এখন এদের চেহারাটা চিনতে পেরেছেন।    


বাংলাদেশের বামপন্থীরা অবশ্য তরুণ নাস্তিকদের চাইতেও পিছিয়ে আছেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই ওনাদেরকে বলছিলাম যে বাংলাদেশে চাড্ডিদের মতাদর্শ জনপ্রিয় করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্যেও বিপদজনক। ওনাদেরকে বলেছিলাম ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলা করতে। ফলাফল হয়েছে এই যে ওনারা আমাকেই বাম-প্রগতিশীল কালচার থেকে বয়কট করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। পরে ওনারা নিজেরাই দেখলেন যে ওনাদের কমরেডদের একাংশ ছিলেন ছুপা চাড্ডি। আর আজকে বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় যা হচ্ছে, তা দেখেও কি তাদের ঘুম ভাঙবে? তারা কি নিজেদের ভুল শিকার করবেন? ভুল কৌশল ও রাজনীতির দায় নেবেন? জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবেন? নাকি একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে চলবেন?


কোন কিছুই আধা খেচরা করা ভাল না। আপনি কি আপনার সংসার বা ক্যারিয়ারটাকে হালকাভাবে নিয়েছেন? তবে, সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতাকে কেন হালকাভাবে নেবেন? নিলে সিরিয়াসলি কাজ করুন। সময় ও শ্রম দিন। ইতিহাস থেকে শিখুন ও নতুন কৌশল অবলম্বন করুন। কিন্তু ইতিহাস থেকে শেখার যোগ্যতা, এবং ভুল শুধরিয়ে নতুন ও কার্যকর কৌশল ও রণনীতি তৈরির সক্ষমতা যদি না থাকে আপনার, তবে আপনি বরং চুপ থাকুন। সুদিচ্ছা থাকলে নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব, কলিগদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজ করুন। আর সাম্প্রদায়িক-বর্ণবাদ মোকাবেলার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতাটা তাদের হাতেই ছাড়ুন, যারা কাজটা সিরিয়াসলি নিয়েছে।



৪.


পুরাণ মোতাবেক, রাবন ছিলেন একজন মহান যোগী। সেই সাথে তিনি ছিলেন একজন মহাজ্ঞানী দার্শনিক। রাবন পলিম্যাথ ছিলেন। তাই তার উপাধি হলো দশ মাথা। এবং রাবন বলে কেউ থাকলে তিনি ছিলেন অনার্য ও অচ্ছুৎ জাতির মানুষ, যিনি অনার্য দেবতা শীবের ভক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত ভদ্র পুরুষ। সীতাকে তিনি কখনো অসম্মান করেছেন, তা তার শত্রুরাও বলতে পারবে না। অন্যদিকে রাম হলেন আর্য সুপ্রিমেসিস্টদের নেতা। রামভক্তরা বর্ণবাদী। তাই উপমহাদেশের অনার্যদেরকে তারা বান্দর, হনুমান, রাক্ষস ইত্যাদি বলে ডাকে। রাবনকে রাক্ষস বানিয়েই তাদের এই বর্ণবাদী রাজনীতির সূত্রপাত। সেইসাথে রামভক্তরা হলো দুনিয়ার সবচাইতে মিসোজিনিস্ট তথা নারীবিদ্বেষী একটা দল। খোদ সীতাকে পর্যন্ত এদের মিসোজিনিস্ট জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। ইনএনিকেইস, এইটা মূলত বিজ্ঞাপনী পোস্ট। যারা এই পোস্ট পড়ছেন, তারা একটু কষ্ট করে আগের পোস্টটা পড়ুন। শেয়ার করুন। কেননা ঐ পোস্টটির ভিউ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।



পারভেজ আলম লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী। প্রকাশিত গ্রন্থ মুসলিম জগতের জ্ঞানতাত্ত্বিক লড়াই (২০১১)


অযোদ্ধার রাম মন্দির নিয়ে পারভেজ আলম এর লেখার সংকলন অযোদ্ধার রাম মন্দির নিয়ে পারভেজ আলম এর লেখার সংকলন Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor on ১১:০৪ AM Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Good books

Blogger দ্বারা পরিচালিত.