বাঙালি মুসলমানের মন
লেখক: আহমদ ছফা
ধরন: প্রবন্ধসংকলন
প্রকাশিত: ১৯৮১
প্রকাশক: বাংলা একাডেমী
ডাউনলোড লিংক: Click here to download
পটভূমি
"বাঙালি মুসলমানের মন" শীর্ষক প্রবন্ধটি একটি বিশেষ কারণে লিখিত। স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন আবুল ফজল (সাহিত্যিক) একদিন সকালে তিনি আবুল ফজলকে টুপি পরে সিরাত অনুষ্ঠানে যাওয়া দেখে বিস্মিত হন। জিয়াউর রহমান সরকারের তখন তিনি উপদেষ্টাও ছিলেন। আবুল ফজলের বদলে যাওয়াটাকে তিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে না করে এর কার্যকারণ সন্ধানের চেষ্টা করেন। আবুল ফজলের পরিবর্তিত রূপ তার মধ্যে প্রচণ্ড রকম আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই আলোড়ন নিয়ে এক রাতে ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি লেখেন।
বিষয়বস্তু
“ যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভালোমন্দ নিরূপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ-কারবার চলে, তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলায়, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। ”
—"বাঙালি মুসলমানের মন"
"বাঙালি মুসলমানের মন"-এর মূল বিষয়বস্তু হল বাঙালি মুসলমানের প্রকৃত স্বরূপ অন্বেষণ। বাঙালি মুসলমান আসলে কারা, আর তাদের মনের রূপায়ন কোন কোন সমাজ-সাংস্কৃতিক অভিঘাতে গড়ে উঠেছে, সেক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান একত্রে বাঙালি আর মুসলমান হওয়ার জন্যে যে সংকট অনুভব করে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় এর একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক রূপান্তর ছফা আলোচনা করেছেন। বৌদ্ধধর্ম যুগের রাজত্ব অবসানের পরে মুসলিম বিজয়ের সময়ে এদেশের বড় সংখ্যার একটি বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের অন্ত্যজ (ডোম, হড্ডি, হরিজন ইত্যাদি) জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। শত বছরের ইতিহাসে রক্তে এসেছে স্রোত। এক রক্ত আরেক রক্তের সাথে মিশে সৃষ্টি করেছে নতুন জনগোষ্ঠী।
বাঙালি মুসলমানের মনের রূপরেখার সূচক হিসেবে পুঁথি সাহিত্য ও ভাষা বিশ্লেষণ করেছেন ছফা। পুঁথি সাহিত্য বাংলা সাহিত্য সম্ভারের একটি নবতর দিক উন্মোচন করে। একটি সমাজে দুইটি শ্রেণির বাস্তবতায় কোন অংশের জন্যে এই পুঁথি রচিত হয়েছিল, তাদের সামাজিক প্রয়োজন কী ছিল, সেক্ষেত্রে কোন প্রেক্ষাপটে তাদের নিজস্ব ভাষিক পরিমন্ডলে অন্য সংস্কৃতির আবাহন তৈরি হয়েছিল, মুসলিম শাসনের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের যে ভিন্নতা, এটা নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার বিষয়। পুঁথি সাহিত্য ধর্মীয় কাহিনীতে ভাস্বর। এক্ষেত্রে এ ধর্মীয় কাহিনীগুলোর চরিত্রগুলো অলৌকিক মহিমায় উজ্জ্বল। এ গ্রন্থটি মনোসমীক্ষণধর্মিতার পরিচয় বহন করে। মানুষের বিশ্বাসের জগতে এই অলৌকিক বর্ণনা কেন মানুষের যৌক্তিক ব্যাখ্যার দ্বার খুলতে পারে না, এ বিষয়গুলো সর্বদা সাধারণের মনে প্রশ্ন হিসেবে বিরাজ করে। ছফা দেখিয়েছেন, মধ্যযুগে সৃষ্ট এ সাহিত্যকর্মগুলোর নতুন সামাজিক চাহিদার দরুন তৈরি হয়েছিল। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুরা অধিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ লাভ করে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দুদের সংঘাতের সৃষ্টি ও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে সামাজিক পরিবর্তন ও নবতর মূল্যচেতনায় সমাজের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। পুঁথি সাহিত্য, দোভাষী সাহিত্যগুলো এ ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানদের সংস্কৃতিগত বিভেদ তৈরি না হলেও মুসলমানরা নিজেদের সংস্কৃতিকে নিজেদের মত করে রূপান্তরিত করেছিলেন। এরপর ইংরেজ সময়ে দেখা যায়, একটি অভিজাত হিন্দু শ্রেণি সমাজে মাথাচারা দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মুসলমানদের অংশগ্রহণ না থাকার কারণ হিসেবে ইংরেজদের অন্ধবিদ্বেষ থেকে গড়ে তোলা ‘ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি’-কে দায়ী করলেও, এটার মধ্য দিয়ে মুসলিম সমাজের পিছিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না। অনেকটা বলা যায়, সেই সুপ্রাচীন সময় থেকে বারবার ধর্ম পরিবর্তন করার ফলে বাইরের দিক ছাড়া তাদের বিশ্বাস এবং মানসিকতার মৌলবস্তুর পরিবর্তন ঘটেনি। আজ অবধি বাঙলী মুসলমানের চিন্তাধারার মূল কাঠামোটি রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। আর সেই কথাই ছফা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন নিজস্ব যুক্তি, বিশ্লেষণ আর দর্শনের মধ্য দিয়ে।
বাঙালি মুসলমানের মন pdf download
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
১২:০৪ AM
Rating:
কোন মন্তব্য নেই:
Good books