বিস্তারিতঃমাসুদ রানা (Masud Rana) সিরিজের সবচাইতে আলোচিত বইগুলির মধ্যে অন্যতম হল "স্বর্ণমৃগ"। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এই বইটি নিয়ে এ পর্যন্ত কম জল ঘোলা হয়নি। পাকিস্তান আমলে প্রকাশনার জগতে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হল স্বর্ণমৃগ বইয়ের প্রকাশ, প্রচার এবং এই নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন, সচিত্র সন্ধানী এবং পাকিস্তান সরকারের ত্রিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব। ধ্বংস পাহাড় এবং ভারতনাট্যম প্রকাশিত হবার পর সেই সময় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের পাঠক সমাজে রীতিমত সাড়া পরে গেছে। কাজীদা দাবী করেন যে তার লেখা ধ্বংস পাহাড় এবং ভারত নাট্যম মৌলিক রচনা (আসলে কথাটি সত্য নয়, ধ্বংস পাহাড় লেখা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের “Doctor No” এবং “You Only Live Twise” অবলম্বনে)। কাজীদা স্বর্ণমৃগ বইয়ে প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন যে এটি বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে লেখা হয়েছে। কাজীদা এটিকে বলতেন “Adaptation”। স্বর্ণমৃগ বইটি কাজীদা লিখেছিলেন মূলত ইয়ান ফ্লেমিং’এর জেমস বন্ড সিরিজের চারটি বইয়ের “Adaptation” করে (Live and Let Die, Gold Finger , “On Her Magesties Secret Service” এবং “Dimonds are for Ever”)। মাসুদ রানা সিরিজে বড়দের রহস্যোপন্যাসের অন্যতম উপকরণ ‘যৌনতার প্রথম ব্যবহার করা হয় স্বর্ণমৃগ বইয়ের মাধ্যমে। বইটা নিঃসন্দেহে রানা সিরিজের অন্যতম সেরা বইগুলির একটি এবং গত ৫০ বছরে রানা সিরিজ তো বটেই, অন্য যে কোন সিরিজে কোন রোমাঞ্চপন্যাস এতটা জমজমাট-ভাবে কেউ লিখতে পেরেছেন কিনা আমার জানা নেই। তবে বিপত্তিটা বাঁধল বইয়ের প্রচ্ছদ এবং বইয়ের শুরুর দিকে গল্পের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র জিনাত সুলতানার সাথে রানার শয্যা-দৃশ্যের বিশদ বর্ণনা এবং ক্লাইম্যাক্সে জিনাতের উপরে গুঙ্গা নামের এক মানুষরূপী দৈত্য যে পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল তার বর্ণনা নিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সংস্করণগুলিতে স্বর্ণমৃগের মুদ্রণে কিছু পরিবর্তন এনে সেই বর্ণনাগুলি বাদ দেয়া হয়েছে। আমি যে প্রচ্ছদটি পোস্ট করলাম সেটি ১৯৭৭ সালে ৪র্থ মুদ্রণের প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদে লাল তুলিতে হরিণটি ব্যবহার করা হয়েছে সে জায়গায় ১৯৬৯ সালের মুদ্রণে স্বর্ণালী অবয়বে আলো আঁধারির প্রতিফলনে নগ্ন এক নারীর দেহের পশ্চাৎ পার্শের দণ্ডায়মান অবস্থার একটি চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। আমার কাছে সেই সংস্করণ আছে সংগ্রহে তবে ফোরামের অনেক পাঠক এবং বিশেষত পাঠিকারা হয়ত ঐ প্রচ্ছদটি ভালভাবে নেবেন না। তাই ওটা আর পোস্ট করলাম না। ১৯৬৯ সালে বইটি প্রকাশিত হবার পর দৈনিক পাকিস্তানে এর উপরে একটি রিভিউ প্রকাশিত হয়েছিল সেটির কিয়দংশ হুবহু তুলে দিচ্ছি-“ বিদ্যুৎ মিত্র হত্যাকাণ্ড এবং অ্যাডভেঞ্চারের সাথে এই প্রথম একটি নতুন বিষয় যোগ করলেন- সেক্স। মাসুদ রানা নিঃসন্দেহে একটি বলিষ্ঠ চরিত্র। বইটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করবে”।
স্বর্ণমৃগ বইটি প্রকাশের পর সেই সময়কার বিখ্যাত সাময়িকী ‘সচিত্র সন্ধানী’ কাজীদাকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিল বইতে যৌনতার অভিযোগ এনে। সন্ধানীতে লেখা হয়েছিল, “কলম কেড়ে নিয়ে লেখকের হাতে আগুনের সেঁকা দেওয়া ও পল্টন ময়দানে বেঁধে জনসমক্ষে চাবুক মারা দরকার” এই ঘটনার পরে সচিত্র সন্ধানীর বিরুদ্ধে কাজীদা মানহানির মামলা করেছিলেন কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। সচিত্র সন্ধানীর পক্ষে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বড় বড় আইনজীবী। অনেকেই জানেন না যে তাদের একজন ছিলেন বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। অনেকেই জানেননা যে জিল্লুর রহমান সাহেব ব্যক্তিগতভাবে মাসুদ রানা সিরিজের ভক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে কাজীদা বিচিত্রা পত্রিকাতে এক সাক্ষাতকারে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলেছিলেন। কাজীদার জবানি হুবহু তুলে দিলাম, “শুধু আগুনের ছ্যাঁকা নয়, পল্টন ময়দানে আমাকে উলঙ্গ করে বেঁধে বেত মারার প্রস্তাবও ছিল তাঁদের। সেজন্য আমি মানহানির মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে আমার বইটি নিষিদ্ধ করিয়ে দিলেন। আমি সেই সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠালাম, যার ফলে বইটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো। কিন্তু সেটা হাতে পাওয়ার আগেই কোর্টের রায় আমার বিরুদ্ধে চলে গেল। সন্ধানীর পক্ষে প্রায় পনেরো-বিশজন বাঘা বাঘা উকিল হাজির হয়ে জজ সাহেবকে বোঝালেন, যেহেতু সরকার আমার বইটিকে নিষিদ্ধ করেছে, সেহেতু ওটি খারাপ, এবং সে- সম্পর্কে সচিত্র সন্ধানী যা বলেছে সেটা ঠিকই আছে, মানহানিকর কিছুই হয়নি। আমার উকিল মিন মিন করে দুর্বল কণ্ঠে বললেন—সরকার ওই আদেশ তুলে নিয়েছেন, আগামী কালই আমরা সরকারি চিঠি দেখাতে পারব। জজ সাহেব শুনে বললেন—বেশ তো, আগামীকাল আবার কেস করবেন। আমার আর অত ঝামেলা করার প্রবৃত্তি হয়নি। তবে স্বর্ণমৃগ এখনো নির্বিঘ্নে চলছে বাজারে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ছে। সেইসব বড় বড় উকিলের মধ্যে আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানও ছিলেন। তিনি আমাকে বারান্দার একপাশে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘নবাব (আমার ডাক নাম), আমি বলি কি, কেসটা উঠিয়ে নাও... পারবে না। বলো তো কম্প্রোমাইজ করিয়ে দিই।’ আমার তখন মহা রাগ, অপমানে গা জ্বলছে। বললাম, ‘জিল্লুর ভাই, ও আমাকে ইত্যাদি ইত্যাদি...’ তিনি হেসে বললেন, ‘আমি সবই জানি।’ কিছুতেই রাজি হচ্ছি না দেখে শেষে বললেন, ‘হেরে যাবে। যা-ই হোক, বইটা লিখেছ কিন্তু দারুণ!’।
সত্যি মাসুদ রানা সিরিজের সাথে কত ঐতিহাসিক ঘটনা যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, ভাবলে অবাক লাগে। অসাধারণ রোমাঞ্চকর এই বইটিতে মাসুদ রানা গোপন মিশন নিয়ে যায় তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে। কি যেন এক অভিনব উপায়ে পাকিস্তানে গোপনে সোনা চোরাচালান হচ্ছে। এই রহস্য উৎঘাটন করতে গিয়ে মাসুদ রানা ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে জড়িয়ে যায় ওয়ালী আহমেদের সাথে। আর মাসুদ রানার জীবনে আসে অতুলনীয়া অনিন্দ্য সুন্দরী লাস্যময়ী জিনাত সুলতানা। টান টান উত্তেজনায় ভরা বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এটা সেই ধরনের বই যা হাতে পরলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতে হয়। পদে পদে বিপদ, ভয়, রোমাঞ্চ আর মৃত্যুর হাতছানি। আসুন না পাঠক, দুর্ধর্ষ এই বাঙ্গালী যুবকের সাথে ঘুরে আসা যাক আরব সাগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত বন্দর নগরী করাচী থেকে। আপনি জানেন না কি দারুণ অ্যাডভেঞ্চার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
স্বর্ণমৃগ বইটি প্রকাশের পর সেই সময়কার বিখ্যাত সাময়িকী ‘সচিত্র সন্ধানী’ কাজীদাকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিল বইতে যৌনতার অভিযোগ এনে। সন্ধানীতে লেখা হয়েছিল, “কলম কেড়ে নিয়ে লেখকের হাতে আগুনের সেঁকা দেওয়া ও পল্টন ময়দানে বেঁধে জনসমক্ষে চাবুক মারা দরকার” এই ঘটনার পরে সচিত্র সন্ধানীর বিরুদ্ধে কাজীদা মানহানির মামলা করেছিলেন কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন। সচিত্র সন্ধানীর পক্ষে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বড় বড় আইনজীবী। অনেকেই জানেন না যে তাদের একজন ছিলেন বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। অনেকেই জানেননা যে জিল্লুর রহমান সাহেব ব্যক্তিগতভাবে মাসুদ রানা সিরিজের ভক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে কাজীদা বিচিত্রা পত্রিকাতে এক সাক্ষাতকারে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলেছিলেন। কাজীদার জবানি হুবহু তুলে দিলাম, “শুধু আগুনের ছ্যাঁকা নয়, পল্টন ময়দানে আমাকে উলঙ্গ করে বেঁধে বেত মারার প্রস্তাবও ছিল তাঁদের। সেজন্য আমি মানহানির মামলা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে আমার বইটি নিষিদ্ধ করিয়ে দিলেন। আমি সেই সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠালাম, যার ফলে বইটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলো। কিন্তু সেটা হাতে পাওয়ার আগেই কোর্টের রায় আমার বিরুদ্ধে চলে গেল। সন্ধানীর পক্ষে প্রায় পনেরো-বিশজন বাঘা বাঘা উকিল হাজির হয়ে জজ সাহেবকে বোঝালেন, যেহেতু সরকার আমার বইটিকে নিষিদ্ধ করেছে, সেহেতু ওটি খারাপ, এবং সে- সম্পর্কে সচিত্র সন্ধানী যা বলেছে সেটা ঠিকই আছে, মানহানিকর কিছুই হয়নি। আমার উকিল মিন মিন করে দুর্বল কণ্ঠে বললেন—সরকার ওই আদেশ তুলে নিয়েছেন, আগামী কালই আমরা সরকারি চিঠি দেখাতে পারব। জজ সাহেব শুনে বললেন—বেশ তো, আগামীকাল আবার কেস করবেন। আমার আর অত ঝামেলা করার প্রবৃত্তি হয়নি। তবে স্বর্ণমৃগ এখনো নির্বিঘ্নে চলছে বাজারে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ছে। সেইসব বড় বড় উকিলের মধ্যে আমাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানও ছিলেন। তিনি আমাকে বারান্দার একপাশে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘নবাব (আমার ডাক নাম), আমি বলি কি, কেসটা উঠিয়ে নাও... পারবে না। বলো তো কম্প্রোমাইজ করিয়ে দিই।’ আমার তখন মহা রাগ, অপমানে গা জ্বলছে। বললাম, ‘জিল্লুর ভাই, ও আমাকে ইত্যাদি ইত্যাদি...’ তিনি হেসে বললেন, ‘আমি সবই জানি।’ কিছুতেই রাজি হচ্ছি না দেখে শেষে বললেন, ‘হেরে যাবে। যা-ই হোক, বইটা লিখেছ কিন্তু দারুণ!’।
সত্যি মাসুদ রানা সিরিজের সাথে কত ঐতিহাসিক ঘটনা যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, ভাবলে অবাক লাগে। অসাধারণ রোমাঞ্চকর এই বইটিতে মাসুদ রানা গোপন মিশন নিয়ে যায় তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে। কি যেন এক অভিনব উপায়ে পাকিস্তানে গোপনে সোনা চোরাচালান হচ্ছে। এই রহস্য উৎঘাটন করতে গিয়ে মাসুদ রানা ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে জড়িয়ে যায় ওয়ালী আহমেদের সাথে। আর মাসুদ রানার জীবনে আসে অতুলনীয়া অনিন্দ্য সুন্দরী লাস্যময়ী জিনাত সুলতানা। টান টান উত্তেজনায় ভরা বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এটা সেই ধরনের বই যা হাতে পরলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতে হয়। পদে পদে বিপদ, ভয়, রোমাঞ্চ আর মৃত্যুর হাতছানি। আসুন না পাঠক, দুর্ধর্ষ এই বাঙ্গালী যুবকের সাথে ঘুরে আসা যাক আরব সাগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত বন্দর নগরী করাচী থেকে। আপনি জানেন না কি দারুণ অ্যাডভেঞ্চার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
স্বর্ণমৃগ pdf Download By Kazi Anwar Hossain
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
১০:৪২ PM
Rating:
কোন মন্তব্য নেই:
Good books