শী
হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড
রূপান্তর : নিয়াজ মোরশেদ
সংক্ষেপে :
দুই হাজার বছরেরও আগের কথা। দেবতা "আইসিস" এর মিশরীয় পুরোহিতদের একজন ছিলেন ক্যালিক্রেটিস। ফারাও পরিবারের এক রাজকন্যা ক্যালিক্রেটিসের প্রেমে পড়ে যান। খ্রীষ্টপূর্ব ৩৩৯ অব্দের দিকে ফারাওদের চূড়ান্ত পতনের সময় মিশর থেকে পালিয়ে গেলেন ক্যালিক্রেটিস। সঙ্গে নিয়ে গেলেন রাজকন্যা আমেনার্তাসকে। কৌমার্যের ব্রত ভঙ্গ করে সেই রাজকন্যাকে বিয়ে করেন ক্যালিক্রেটিস। জলপথে পালাচ্ছিলেন তারা। জাহাজডুবিতে ওরা দুজন ছাড়া সবাই মারা পড়ল। কোনওরকমে তীরে উঠেন দুজন। জায়গাটা আফ্রিকা উপকূলে, ডেলাগোয়া উপসাগরের উত্তরে। সেখানে জংলি জাতির দোর্দণ্ড প্রতাপ এক রানীর অনুগ্রহ লাভ করেন তারা। জাতিটা জংলি হলেও তাদের রানী অদ্ভূত সুন্দর আর শ্বেতাঙ্গিনী।
অদ্ভূত সেই রানীর নাম আয়শা। আরবদেরও আরব এক বংশের মেয়ে আয়শা। অপরূপ সুন্দর এ নারী আফ্রিকা উপকূলের এখানে এসে স্থায়ী হন, এবং সেখানকার জংলি জাতির রানী হিসেবেই বসবাস করতে শুরু করেন। ক্যালিক্রেটিস কে দেখা মাত্রই তার প্রেমে পড়ে যায় আয়শা। কিন্তু আয়শার অপরূপ সৌন্দর্যকে পাত্তা না দিয়ে নিজের স্ত্রীকে আঁকড়ে ধরেন ক্যালিক্রেটিস। তখন ক্রোধের বশবর্তী হয়ে ক্যালিক্রেটিসকে খুন করেন আয়শা। ক্যালিক্রেটিসের স্ত্রী আমেনার্তাস তার শিশুপুত্র কে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। তারপর ছেলে টিসিসথেনেসের উদ্দেশ্যে চিনামাটির পাত্রে লিখে রেখে যান ক্যালিক্রেটিসকে কিভাবে হত্যা করা হয়। ছেলেকে নির্দেশ দিয়ে তিনি লেখেন, সে যেন পিতৃহত্যার শোধ নেয়। তারপর টিসিসথেনেস চেষ্টা করে বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে। সে পারেনি, তাই ঐ একই পাত্রে তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে লিখে যায় শোধ নেয়ার জন্য। এভাবে ৬৭ পুরুষ ঘুরে প্রায় দুই হাজার বছর পর এই পাত্র এসে পড়ে "লিও" এর হাতে। লিও এর বাবা নিজেও এই রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করেন। এবং তিনি কিছুটা অগ্রসরও হন। শেষে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে সে লিও এর জন্য ঐ পাত্রসহ আরও কিছু ডকুমেন্ট রেখে যায়।
ক্যালিক্রেটিসকে খুন করার পর অনুশোচনায় মুষড়ে পড়ে আয়শা। তার দৃঢ় বিশ্বাস ক্যালিক্রেটিস ফিরে আসবে তার কাছে পুনর্জনম নিয়ে। সে অপেক্ষা করতে থাকে তার জন্যে।
লিও রওনা হচ্ছে সেই আফ্রিকার উপকূলে যাওয়ার জন্য। তার সঙ্গি হিসেবে আছেন তার অভিভাবক হোরেস হলি এবং চাকর জব। দুই হাজার বছর পরও কি দেখা মিলবে সেই রানী আয়শার? কিভাবে সম্ভব এটা? কিন্তু লিও এর বাবা যে ডকুমেন্ট রেখে গেছেন, তা প্রমাণ করেন যে 'সে' এখনও আছে। দুই হাজার বছর পর্যন্ত বেচে থাকার রহস্য কি? লিও কি তাকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যাবে? নাকি পূর্বপুরুষের হত্যার প্রতিশোধ নিবে? একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছিনাঃ- লিও কিন্তু দেখতে অবিকল তার পূর্বপুরুষ ক্যালিক্রেটিসের মত।
প্রতিক্রিয়া :
মুগ্ধ, অভিভূত। অসাধারন একটা বই। প্রেম আর প্রতিশোধের এক অনুপম আখ্যান। পুরো বইটা এক বসাতে শেষ করে ফেলেছি। যেখানে হলির কাছে তিন সপ্তাহের অভিযানকে ত্রিশ বছর মনে হয়েছে সেখানে আমার কাছে এই ৩ ঘন্টা পড়ার সময়কে এক পলক বলেই বোধ হল!!! পুরো বইটাই প্রেমের এক অনুপম আখ্যান, একজন প্রেমিক স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে অসিহত রেখে যাচ্ছে পরবর্তী সমস্ত প্রজন্মের কাছে, একজন প্রেমের জন্য একাকী অপেক্ষা করছে দুই হাজার বছর আবার অন্যজন প্রেমের জন্য দিয়ে দিচ্ছে প্রাণটাই। এ এক সৌন্দর্যময়ীর গল্প যাকে যেই দেখে সেই প্রেমে পড়ে, আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সৌন্দর্যের প্রতি চিরকালীন মুগ্ধতাকেই।বইটা পড়ে শী বা আয়েশার প্রেমে পড়বে না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল।
একদিকে সৌন্দর্যময়ী, প্রেয়সী হলেও অন্যদিকে সে যে ভীষণ স্বৈরাচারী সেদিকটাও উল্লেখযোগ্য। আয়শা চরিত্রের মাধ্যমে পেয়েছি স্বৈরাচারীদের চিরকালীন বৈশিষ্ট্যেগুলোকেই : শ্রদ্ধা নয় ভয় দিয়ে শাসন, বিপরীত মতকে ধ্বংস করা, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।
কিন্তু যাই বলি না কেন প্রায় সবার মত আমিও মুগ্ধ আয়শাতেই। তাইতো শেষ দৃশ্যটাকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না। লেখার জন্য একটু বিরতি নিয়েছি এরপরই 'রিটার্ন অভ শী' পড়ে আয়শার পরিণতি জানতে আর তর সইছে না। থাকেন, আগে ঐটা শেষ করে আসি, পরে আবার লিখব!
শী Pdf Download
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
৯:৩১ PM
Rating:
Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor
on
৯:৩১ PM
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
Good books