নাসার গবেষণা 'এলিয়েন কি সত্যিই আছে?’

এই নিবন্ধনে যা যা পড়ছেন:

  1. এলিয়েন কি সত্যিই আছে?
  2. নাসার গবেষণা 
  3. মেক্সিকোতে এলিয়েনের খোঁজ
  4. ধর্মীয় ব্যখা

 “তবে যাই হোক...এসব বস্তু আমাদের সৌরজগতের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করেছে এখানে পৌঁছাতে,” রিপোর্টে বলা হয়েছে।


এলিয়েন আছে নাকি নেই? নাসার নতুন তথ্য

এলিয়েন আছে নাকি নেই? 

ইউএফও নিয়ে এক বছর গবেষণার পর রিপোর্ট দিল নাসা

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বৃহস্পতিবার এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার মূল বিষয়বস্তুই ছিল মহাকাশে এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে নাকি নেই?

সারা পৃথিবীর অনেকেই আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে ছিলেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই রিপোর্টের দিকে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুব একটা সন্তোষজনক কিছু মিলেনি প্রতিবেদনে। অর্থাৎ এলিয়েনের উপস্থিতির তারা কোন প্রমাণ পান নি; কিন্তু আবার সম্ভাবনা উড়িয়েও দিতে পারছে না নাসা।

দীর্ঘ ১ বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর ৩৬ পৃষ্ঠার যে রিপোর্ট দিলো নাসা, তার অধিকাংশই বিভিন্ন কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে পূর্ণ।

এই রিপোর্টে যাবার আগে তাই কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে আগে পরিষ্কার ধারণা প্রয়োজন।

এলিয়েনদের বাহন: ইউএফও নাকি ইউএপি

আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট; সংক্ষেপে ইউএফও। বাংলায় যেটাকে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বলা যেতে পারে।

মহাকাশে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন যেসব বস্তুর নড়াচড়া চোখে পড়ে বলে দাবি করা হয়, সেগুলোকে ইউএফও হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

কাল্পনিক ইউএফ ও

এই ইউএফও নিয়ে মানুষের আগ্রহ বহুদিন ধরে। কেউ কেউ চমক লাগাতে বলে থাকেন এগুলো আসলে এলিয়েনদের বাহন।

কোন প্রমাণ না থাকলেও দুনিয়াজুড়ে এই ইউএফও'র অস্তিত্ব বিশ্বাস করার লোকেরও অভাব নেই। প্রচুর ভিডিও গেমস আর চলচ্চিত্রে এই ইউএফওর উপস্থিতি পাওয়া যায়।

এই ইউএফও’কে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা বলে থাকে ইউএপি বা আনআইডেন্টিফাইড অ্যানাম্যালাস ফেনোমেনা। বাংলায় বলা যেতে পারে অশনাক্ত অস্বাভাবিক ঘটনা।

এখন এই ইউএফও বা ইউএপি যেটাই বলি না কেন, তার ব্যাখ্যা খুঁজতে গত বছর এক আলাদা গবেষক দল নিয়োগ করে নাসা।

১৬ সদস্যের এই দল গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে গবেষণা। যাদের উদ্দেশ্য ছিল এই বিষয়টি নিয়ে যেভাবে নানা চাঞ্চল্যকর আলোচনা হয়ে থাকে, অর্থাৎ আসলেই পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি-না সেসব বিজ্ঞানের মাধ্যমে জানা।

এ গবেষণায় কী পেলেন তারা সেটাই তুলে ধরা হয় নাসার এই ইউএপি স্টাডি রিপোর্টে।

প্রমাণ নেই, তবে থাকতে পারে

এই রিপোর্টের একেবারে শেষ পাতায় বলা হয়েছে ‘এরকম উপসংহারে আসার কোন কারণ নেই’ যে শত শত যেসব ইউএপি নিয়ে নাসা তদন্ত করেছে সেগুলো দেখা যাওয়ার পেছনে কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর হাত আছে।


“তবে যাই হোক...এসব বস্তু আমাদের সৌরজগতের ভেতর দিয়েই ভ্রমণ করেছে এখানে পৌঁছাতে,” রিপোর্টে বলা হয়েছে।

যদিও রিপোর্টে বলা হয়নি যে বহির্জাগতিক কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব আছে, কিন্তু নাসা আবার এই ব্যাপারটা অস্বীকারও করেনি যে “সম্ভবত পৃথিবীর অভ্যন্তরে অজানা কোন এলিয়েন প্রযুক্তি হয়তো কাজ করে চলেছে”।

এলিয়েন আমরা যেভাবে কল্পনা করি-১

এলিয়েন আমরা যেভাবে কল্পনা করি-২

এলিয়েন আমরা যেভাবে কল্পনা করি- ৩

এলিয়েন আমরা যেভাবে কল্পনা করি- ৪


তবে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন স্বীকার করেন বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে পৃথিবীর মতো আরেকটা গ্রহ থাকতে পারে।

“আপনি যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন যে এই বিশাল সৌরজগতে অন্য প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি-না আমি বলবো হ্যাঁ,” বলেন মি. নেলসন।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে খোলামেলা ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করবেন তারা।


ইউএপি বিষয়ে তথ্যের স্বল্পতা

নিকোলা ফক্স, নাসার বিজ্ঞান মিশন অধিদপ্তরের সহযোগী প্রশাসক, বলেন: “ইউএপি আমাদের এই গ্রহের অন্যতম বড় এক রহস্য।” আর এর প্রধান কারণ হল এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যের অভাব।

এলিয়েন হতে পারে এমনও


যদিও প্রতিনিয়ত অসংখ্য ইউএপি দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু মি. ফক্স বলছেন আমাদের হাতে আসলে পর্যাপ্ত তথ্য নেই “যার সাহায্যে আমরা সুনিশ্চিত বৈজ্ঞানিক সমাপ্তি টানতে পারি যে এই ইউএপিগুলো কেমন ও কোথা থেকে আসছে?”

রিপোর্টে বলা হয় বেশিরভাগ ইউএফও ব্যাখ্যা করা গেলেও কিছু পাওয়া যায় যেগুলো মনুষ্যসৃষ্টও না আবার প্রাকৃতিক কারণেও হয়নি।

মি. ফক্স ঘোষণা দেন নাসা ইউএপি গবেষণায় একজন নতুন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম পরিচয় না জানালেও তার কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি, “তিনি একটা বিশদ ডেটাবেজ তৈরি করবেন যাতে ভবিষ্যত ডেটা বিশ্লেষণে সহায়ক হয়।”

এই নতুন পরিচালক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে তথ্য যোগাড় ও বিশ্লেষণ করবেন।

মেক্সিকোর ছবিতে নজর

বিবিসি রিপোর্টার স্যাম কাবরাল নাসার প্যানেলকে প্রশ্ন করেন, গত সপ্তাহে মেক্সিকান কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব কথিত ভিনগ্রহের প্রাণীর বেশকিছু ছবি উপস্থাপন করা হয় সে সম্পর্কে।

মেক্সিকোর ছবিতে ভিনগ্রহের প্রাণীটি৷ 
ছবি: রয়টার্স
 

জেমি মাওসান, একজন স্বঘোষিত ইউএফও বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি কংগ্রেসের সামনে শুনানিতে হাজির হয়ে দুটি প্রাচীন ‘মানুষ নয় এমন’ এলিয়েনের মৃতদেহ উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন এই দেহ দুটি পেরুর কুসকোতে ২০১৭ সালে মিলেছে, আর রেডিওকার্বন পরীক্ষায় পাওয়া গেছে যে এগুলো অন্তত ১৮০০ বছরের পুরনো।

বিজ্ঞানমহল অবশ্য এই নমুনার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছে, কারণ মি. মাওসান এর আগেও ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আছে বলে দাবী করেন যা খারিজ হয়ে যায়।

নাসার বিজ্ঞানী ড. ডেভিড স্পারজেল বিবিসিকে বলেন, 

“এই নমুনা গুলো বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হোক, তাহলে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারবো যে এগুলো আসলে কী?”


ইউএফও পরিচালকের পরিচয় গোপন

নাসার এই বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনের আরেকটি আলোচনার বিষয় ছিল ইউএপি গবেষণার নতুন পরিচালককে নিয়ে।

তার নাম পরিচয় এখনো রহস্যের আড়ালে। তার কাজ এবং বেতন ব্যাপারেও কিছু পরিষ্কার করেনি নাসা।

বিশেষ করে নাসা যখন বলছে যে ইউএপি গবেষণার সবকিছু তারা গোটা দুনিয়ার সাথে খোলাখুলি তুলে ধরবে, তখন তাদের এই আচরণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এর একটা সম্ভাব্য কারণ অবশ্য হতে পারে যে নাসা চাইছে তাদের নতুন পরিচালককে যাতে আগেই জনগণের সামনে কোন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

ড. ড্যানিয়েল ইভান্স, নাসার এই গবেষণার উপ-সহকারী প্রশাসক জানিয়েছেন, তাদের ইউএপি প্যানেল ‘সত্যিকারের হুমকি’ পেয়েছে।

তিনি বলেন নাসা তার দলের সদস্যের নিরাপত্তার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, আর ঐ হুমকিটা পরিচালকের পরিচয় প্রকাশ না করার পেছনে কাজ করেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে নাসা

রিপোর্টে বলা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং ইউএপি শনাক্তকরণের সবচেয়ে জরুরী টুল।

একইসাথে মানুষকে ইউএপির ব্যাপারে জানানোটাও এর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

নাসা বলছে এই গবেষণায় যে বড় চ্যালেঞ্জ তথ্যের স্বল্পতা, সেটা তারা পূরণ করতে চান সাধারণ মানুষদের যুক্ত করার কৌশল দিয়ে।

এটা হতে পারে উন্মুক্ত স্মার্টফোন অ্যাপ অথবা বিশ্বব্যাপী একাধিক নাগরিক পর্যবেক্ষকের স্মার্টফোনের মেটা ডেটার সাহায্য নিয়ে।

বর্তমানে এমন কোন আদর্শ ব্যবস্থা নেই যাতে মানুষ ইউএপি দেখে সেগুলো সম্পর্কে ঠিকভাবে জানাতে পারে। ফলে রিপোর্টে বলা হচ্ছে “এতে তথ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।”

অনেকেরই দাবী, ভিনগ্রহের প্রাণী দেখেছেন। তাই ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের প্রমাণ জোগাড়ে গবেষকরা ব্রতী হয়েছেন ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে। ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ব্যক্তিত্ব হলেন এরিক ভন দানিকেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে প্রাচীন পান্ডুলিপি আর দেয়াল-চিত্র কিংবা দেয়াল-লিখনে খুঁজে দেখেছেন এলিয়েনদের পৃথিবীতে আসার নানা প্রামাণিক দলিল। যদিও তার এসব দৃষ্টিকোণের ব্যাপারে অনেকের আপত্তি রয়েছে।

বিবিসির একটি ভিডিওতে এলিয়েনের প্রমাণ:

ধর্মীয় গ্রন্থে 

আসুন এবার দেখি আমাদের পবিত্র কোরআন-এ এলিয়েন বা সৃষ্টি জগতে অন্য কোথাও মানুষের মত প্রানী থাকার বিষয়ে কি বলে।


সূরা (৪২)- সূরা আশ-শুরা
আয়াত নম্বর-২৯
وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِن دَابَّةٍ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَاءُ قَدِيرٌ
তাঁর অন্যতম নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দুয়ের মধ্যে তিনি যে সব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলি; তিনি যখন ইচ্ছা তখনই ওদেরকে সমবেত করতে সক্ষম।
And among His Signs is the creation of the heavens and the earth, and the living creatures that He has scattered through them: and He has power to gather them together when He wills.



সূরা(৬৫)- আত্ব-ত্বালাক্ব

আয়াত নম্বর-১২

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا


আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও অনুরূপ,[1] ওগুলোর মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ,[2] যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, অবশ্যই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।


Allah is He Who created seven Firmaments and of the earth a similar number. Through the midst of them (all) descends His Command: that ye may know that Allah has power over all things, and that Allah comprehends, all things in (His) Knowledge.


أَيْ: خَلَقَ مِنَ الأَرْضِ مِثْلَهُنَّ [১] সাত আসমানের ন্যায় সাত যমীনও আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, সাতটি প্রদেশ। তবে এ কথা ঠিক নয়। বরং যেভাবে উপর্যুপরি সাতটি আসমান রয়েছে, অনুরূপ সাতটি যমীনও রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দূরত্ব ও ব্যবধানও আছে এবং প্রত্যেক যমীনে আল্লাহর সৃষ্টি আবাদ রয়েছে। (ক্বুরত্ববী) বহু হাদীস দ্বারা এ কথার সমর্থনও হয়। যেমন, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি যুলুম করে বিঘত পরিমাণ যমীন আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’’ (মুসলিম, বাণিজ্য অধ্যায়, যুলুম করা হারাম পরিচ্ছেদ) সহীহ বুখারীর শব্দাবলী হল, (خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ) ‘‘কিয়ামতের দিন তাকে সপ্ত যমীনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, যমীন আত্মসাৎ করার পাপ পরিচ্ছেদ) কেউ কেউ এটাও বলেন যে, প্রত্যেক যমীনে ঐ রকমই পয়গম্বর রয়েছেন, যে রকম পয়গম্বর তোমাদের যমীনে এসেছেন। যেমন, আদমের মত আদম, নূহের মত নূহ। ইবরাহীমের মত ইবরাহীম। ঈসার মত ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)। কিন্তু এ কথা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

[2] যেভাবে, প্রত্যেক আসমানে আল্লাহর বিধান কার্যকরী ও বলবৎ আছে, অনুরূপ প্রত্যেক যমীনে তাঁর নির্দেশ চলে। সপ্ত আকাশের মত সপ্ত পৃথিবীর পরিচালনাও তিনিই করেন।

[3] অতএব কোন জিনিস তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়, চাহে তা যেমনই হোক না কেন।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান এলিয়েন বা অন্য গ্রহে প্রাণ বা মানুষের অস্তিত্তের যে অনুমান করছে তা দের হাজার বছর আগেই আমাদের পবিত্র কোরয়ান-এ বলে দেওয়া হয়েছে।

আর এখন কোরআন এবং বর্ত্মান বিজ্ঞাঙ্কে একত্র করলে আমরা সহজেই বলতে পারি যে এলিয়েন বা ভিগ্রহবাসী আছে। হয়ত তারা নিয়মিত এই পৃথিবীতে যাতায়াত জরছে বা এখনো আছে বা অদূর ভবিষ্যতে আসবে।


হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে কি বলে?

হিন্দু ধর্ম এ স্পষ্ট ভাবেই বিভিন্ন ধরণের দেব দেবীর কথা উল্লেখ আছে। যাদের অস্তিত্ব এই পৃথিবীর মাটিতে হয়নি। হিন্দু বেদ অনুসারে চার লক্ষ এর বেশি মানুষ প্রজাতি এবং অর্ধ মানুষ প্রজাতি রয়েছে। অন্য ধর্মে যেখানে এলিয়েন এর সম্পর্কিত কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া দুরুহ এর কাজ সেখানে হিন্দু ধর্মের বেদ, গীতা, রামায়ণ এবং মহাভারত সহ অন্যান্য ধর্মীয় বইয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ভরপুর তথ্য দেয়া রয়েছে। এত তথ্য রয়েছে যে আপনি কাঙ্ক্ষিত তথ্য কাঙ্ক্ষিত উৎস থেকে খুঁজে পেতেই হিমশিম খেয়ে যাবেন।

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ ত্রিপিটক ১১ নম্বর ভলিয়মে ৬১ নং পৃষ্ঠার ভলিউম ২৩ সুতান ত্রিপিটক ২৫ এ বুদ্ধা অন্য গ্রহের প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি তিনটি গ্রহ সম্পর্কে বলে গেছেন যেখানে নাকি প্রাণের অস্তিত্ব আছে। তিনি ওই সব প্রাণীদের বয়স সীমা গঠন এবং আকৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে বিশ্লেষণ দিয়ে গেছেন ত্রিপিটকে।

তাহলে বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের মতে পৃথিবীর বাইরেও জীব আছে। আর এই ধর্মগ্রন্থগুলো লেখা হয়েছে আজ থেকে প্রায় অনেক অনেক বছর আগে। তার মানে হয়তো অতীতে এমন কিছুর দেখা মিলে ছিল যার জন্য ধর্ম যাজকরা এই সব তথ্য উল্লেখ করে গেছেন।



হতে পারে মানুষই এলিয়েন!


ভিনগ্রহ থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীর নির্জন প্রান্তরে নেমে আসে এরা। এদের শরীর মানুষের মতো। প্রকাণ্ড মাথার নিচে ছোট ধড়, সরু লিক লিকে হাত পা, বড় বড় টানা টানা কালো চোখ। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে এরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকা গ্রহের বাসিন্দা।

এদের নাম ‘এলিয়েন‘। বর্তমান পৃথিবীর প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন এই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।

এলিয়েন আছে
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আগেই বলেছিলেন, 'এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে।'  নাসার গবেষকেরা কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে এমন ২০টি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে সম্ভবত প্রাণ আছে।

নাসার প্রথম সারির বিজ্ঞানী অ্যালেন স্টেফান, বিজ্ঞানী সিলভানো পি কলম্বানো, বিজ্ঞানী থমাস জুরবিউকেন বিভিন্ন সময় বলেছেন আমরা এলিয়েনের খুব কাছাকাছি আছি।

কিন্তু সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর বিতর্ক উপস্থিত হয়েছে এলিয়েন নিয়ে। একদল বিজ্ঞানী রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন জীবের সৃষ্টি মহাকাশে এবং মানুষই এলিয়েন। এই মতবাদ পালে হাওয়া পেয়েছে, কারণ পৃথিবীতে জীবন ও মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত এখনও মেলেনি।

পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছিল!
জীবের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরা এত দিন বলে এসেছেন সমুদ্রের পানিতে আনুমানিক ৩০০ কোটি বছর আগে জীবনের আবির্ভাব ঘটেছিল। কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন মিলে বিভিন্ন ধাপে তৈরি করেছিল প্রথম প্রাণ নিউক্লিওপ্রোটিন।

সেখান থেকে প্রোটোভাইরাস-ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া-প্রোটোজোয়া প্রভৃতি ধাপ ঘুরে সৃষ্টি হয়েছিল এককোশী ক্লোরোফিল যুক্ত জীব ও বহুকোশী প্রাণীর। এককোশী ক্লোরোফিল যুক্ত জীব থেকে সৃষ্টি হয়েছিল উদ্ভিদের।

সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বলেছেন জীবের উৎপত্তি সমুদ্রের জলে নয়  মহাকাশে!
শেফিল্ড ইউনিভারসিটির একদল বিজ্ঞানী ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৭ কিমি ওপরে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে কতগুলি বেলুন পাঠান। বেলুনগুলি ফিরে আসার পর স্তম্ভিত হয়ে যান তাঁরা। বেলুনের গায়ে লেগে ছিল কিছু আণুবীক্ষণিক জীব। পৃথিবীতে যাদের অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই জীবগুলির উৎপত্তি মহাকাশে।

পরীক্ষাটির শেষে শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ওয়েনরাইট বলেছেন, কোনো পদ্ধতিতেই পৃথিবী থেকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতায় এই জীবগুলির যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি এগুলি মহাকাশের জীব এবং মহাকাশেই জীবের সৃষ্টি হয়েছিল। মহাকাশ থেকে এখনও প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে জীব আসছে। আমাদের চারপাশে অনেক জীবই আছে যারা এসেছে মহাকাশ থেকে।

আর একদল বিজ্ঞানীও পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন, মহাকাশ থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড পৃথিবীতে আসতে পারে ধূমকেতুর আঘাতের সঙ্গে। এই মতবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন জীবন সৌরজগতে ছড়িয়ে আছে। 

 

বলেন কী, আমরাই এলিয়েন!
জীবের উৎপত্তি তাহলে সমুদ্রে হয়নি! এই প্রশ্নে যখন পৃথিবী তোলপাড় এর মধ্যেই বোমা ফাটিয়েছেন আমেরিকার ইকোলজিস্ট ড. এলিস সিলভার। তিনি তাঁর 'Humans are not from Earth: a scientific evaluation of the evidence' বইটিতে রীতিমতো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে মানুষ পৃথিবীর জীব নয়।

অন্য জীবদের মতো মানুষের সৃষ্টি পৃথিবীতে হয়নি। কয়েক লক্ষ বছর আগে অন্য গ্রহ থেকে মানুষকে পৃথিবীতে ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল। সিলভার বলেন, মানুষের শরীরে থাকা অনেক ত্রুটি বুঝিয়ে দেয়, পৃথিবী আমাদের নিজের গ্রহ নয়। কিন্তু জীববিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন নিম্নশ্রেণীর প্রাণী থেকে বিবর্তিত হতে হতে পৃথিবীর সেরা প্রাণী মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল। 

ড. সিলভারের থিওরির কিছু ঝলক
তাঁর থিওরি দাঁড়িয়ে আছে মানুষের শারীরতত্বর ও পৃথিবীর অন্য জীব ও মানুষের পার্থক্যের ওপরে।

● ড. সিলিভারের মতে, অন্য প্রজাতির জীবের প্রায় সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেয় আমাদের এই মিষ্টি পৃথিবী। তাই, যারা মানুষকে ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তারা ভেবেছিল, পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের  মতো মানুষের জীবনযাত্রার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে পৃথিবী। কিন্তু অদ্ভূতভাবেই তা হয় না।

● মানবজাতিকে গ্রহের সবচেয়ে উন্নত প্রাণী বলে মনে করা হয়। আশ্চর্যের কথা, মানুষই হচ্ছে গ্রহের সবচেয়ে খাপছাড়া ও পৃথিবীর জলবায়ুতে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে অনুপযুক্ত প্রাণী।

● বেশিরভাগ প্রাণী সারাদিন, যতক্ষণ খুশি, দিনের পর দিন রৌদ্রস্নান করতে পারে। কিন্তু আমরা কয়েক ঘণ্টার বেশি রোদে থাকতে পারি না কেন!

● সূর্যের আলোয় আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অন্য প্রাণীদের ধাঁধায় না কেন?

● প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া বা গজিয়ে ওঠা খাবার মানুষ খেতে অপছন্দ করে কেন!

● অদ্ভুতভাবে মানুষের মধ্যেই  প্রচুর ক্রনিক রোগ দেখা দেয় কেন!

● ঘাড়ে, পিঠে,কোমরে ব্যাথা কি অন্য প্রাণীর হয়! ড. সিলভারের মতে ব্যাক পেন হলো অন্যতম দীর্ঘকালস্থায়ী রোগ যাতে বেশিরভাগ মানুষ ভোগে। কারণ তারা পৃথিবীর অনান্য প্রাণীর মতো, হাঁটা চলা ও বিভিন্ন কাজে মাধ্যাকর্ষণের সাহায্য পায় না। এই রোগটিই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যেটা আমাদের বুঝিয়ে দেয় আমাদের দেহ অন্য কোনো গ্রহে বসবাসের উপযুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল যেখানে মাধ্যাকর্ষণ কম।

● মানুষেরা বাচ্চার মাথা বড় হওয়ার জন্য নারীদের স্বাভাবিক উপায়ে প্রসব করতে অসুবিধা হয়। অনেক মা ও শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোনও জীব প্রজাতির এরকম সমস্যাই নেই। মানুষের ইউটেরাসের ভেতর থাকা জায়গার তুলনায় শিশুর আয়তন অনেক বড় হয়। কারণ উঁচু পর্যায়ের পুষ্টি পায় বলে।

● মানুষের দেহে ২২৩টি অতিরিক্ত জিন থাকাও স্বাভাবিক নয়। কারণ পৃথিবীর অন্য প্রজাতির দেহে অতিরিক্ত জিন নেই।

● পৃথিবীর কোনো মানুষই ১০০% সুস্থ নয়। প্রত্যেকেই এক বা একাধিক রোগে ভোগে।

● মানুষের  ঘুম নিয়ে গবেষণা করে গবেষকরা বলছেন পৃথিবীতে দিন ২৪ ঘণ্টার, কিন্তু আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির মতে, আমাদের দিন হওয়া উচিত ছিল ২৫ ঘন্টার। এবং এটা কিন্তু আধুনিক যুগে সভ্যতার বিকাশ ও উল্কাগতির জন্য হয়নি। মানবজাতির সূত্রপাত থেকেই দেহঘড়িতে একটি দিনের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২৫ ঘণ্টা।

● আমাদের ত্বকে ট্যান পড়া বা সূর্যরশ্মির প্রভাবে চামড়া কালো হওয়া সেটাই প্রমাণ করে সূর্য রশ্মি মানুষের পক্ষে উপযুক্ত নয়!

বিভিন্ন বিজ্ঞানী সিলভারের থিওরিটির সমালোচনা করেছেন ও তির্যক চোখে দেখেছেন। কিন্তু অনেকে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই তুমুল বিতর্ক চলছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত  মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে অবিতর্কিত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।

বিভিন্ন বিজ্ঞনী বলেছেন, ড. সিলভার যে যুক্তিগুলো হাজির করেছেন, সেগুলি কিন্তু বাস্তব। সেটাও ফেলে দেওয়ার নয়। সত্যিই তো পৃথিবীর অনান্য প্রজাতির জীবের চেয়ে আমরাই কেন আলাদা হলাম। দেখা যাক বিজ্ঞান আগামী দিনে তাঁর প্রশ্নের কী উত্তর দেয়।

সত্যিই কি আমরা পৃথিবীর প্রাণী! নাকি আমরা ভিনগ্রহের প্রাণী হয়ে পৃথিবীকে শাসন করছি! রহস্যটির উত্তর লুকিয়ে আছে কালের গর্ভে। মানুষের সৃষ্টি যদি পৃথিবীতে না হয়ে থাকে বা আমরাই যদি ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসে থাকি, তাহলে কাদের খুঁজতে নাসা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করছে! প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল।

নাসার গবেষণা 'এলিয়েন কি সত্যিই আছে?’ নাসার গবেষণা 'এলিয়েন কি সত্যিই আছে?’ Reviewed by তৌহিদ আজগর - Tawhid Azgor on ১০:২৯ AM Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Good books

Blogger দ্বারা পরিচালিত.